ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পুঁজিবাজারের নাজুক পরিস্থিতিতেও ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদে দ্বন্দ্ব

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ১৪ জানুয়ারি ২০২০

পুঁজিবাজারের নাজুক পরিস্থিতিতেও ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদে দ্বন্দ্ব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের প্রধান শেয়ারবাজারে প্রতিদিনই সূচকের বড় ধরনের দরপতন ঘটছে। কিন্তু ঢাকা স্টক একচেঞ্জের কর্তাব্যক্তিদের মাঝে এই পতনের ভয়াবহতা কোনভাবেই স্পর্শ করছে না। উল্টো দীর্ঘ ছয় মাস পর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে নিয়োগ দিতে গিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ছে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা। স্পষ্টত দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ছেন তারা। এই দ্বন্দ্বের খবর এখন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং অর্থ মন্ত্রণালয়েরও জানতে বাকি নেই। যেখানে শেয়ারবাজারে লেনদেন হলেও বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়ে শেয়ার বিক্রি করছেন সেখানে, এমডি নিয়োগ নিয়ে পরিচালনা পর্ষদের দ্বিধাবিভক্তি বাজার সংশ্লিষ্ট অন্যদেরও অস্বস্তিতে ফেলেছে। এদিকে সংকট নিরসনে সোমবার বিএসইসিতে ডিএসইর শেয়ারধারী পরিচালকদের বিএসইসিতে মতামত জানানোর জন্য ডেকেও পাঠানো হয়। সেখানে তারা নিজেদের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। গত বৃহস্পতিবারে পর্ষদে সানাউল হকের নিয়োগের বিষয়টি ৬-৪ ভোটের ব্যবধানে চূড়ান্ত করা হয়। নির্ভরশীল সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবারে ডিএসইর পক্ষ থেকে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সানাউল হককে মনোনীত করে প্রস্তাব পাঠানো হয়ে। কিন্তু সেই প্রস্তাবের সঙ্গে তাকে চূড়ান্ত অনুমোদন না দেয়ার জন্য পর্ষদের অপরপক্ষের একটি সুপারিশও সংযুক্তি হিসেবে পাঠানো হয়। সেখানে কাজী সানাউল হক কোনভাবেই এমডি পদে যোগ্য নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবারে পরিচালনা পর্ষদের সভায় ডিএসইর নির্বাচিত পরিচালক রকিবুর রহমানের নেতৃত্বে আরও ৫ জন স্বতন্ত্র পরিচালক সানাউল হককে ডিএসইর এমডি পদে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মতামত দেন। উল্টো দিকে ডিএসইর শেয়ারধারী পরিচালক হিসেবে মিনহাজ মান্নান ইমন, শাকিল রিজভী এবং মোহাম্মদ শাজাহন বিপক্ষে ভোট দেন। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সানাউল হকই চূড়ান্ত নির্বাচনের জন্য পাঠানো হয়। কিন্ত শেয়ারধারী পরিচালকরা তার মতামতের ক্ষেত্রে কঠোর থাকেন। শুধু তাই নয় শেষ পর্যন্তও তারা ঐকমত্যে আসতে ব্যর্থ হয়। শেয়ারধারী পরিচালকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, আইসিবির সাবেক ওই এমডিকে ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তলব করার ঘটনাও আছে। তার দায়িত্বরত অবস্থায় ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। শেয়ার ব্যবসায় জড়িত যেসব লোক ঋণ পাওয়ার যোগ্য নন তাদের ঋণ দেয়া, যাকে ২৫ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার কথা তাকে কয়েক কোটি টাকা করে ঋণ দেয়ার ঘটনা ঘটে। তাই তিনি কোনভাবেই এই পদের যোগ্য হতে পারে না। এদিকে টানা পতনের আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিলেও ডিএসইর পরিচালনা পষর্দের এমন রশি টানাটানিতে বিব্রত সবাই। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ যেখানে, শেয়ারবাজারে কোন কিছুই কাজে আসছে না। টানা পতন ঘটছে সেখানে ডিএসইর পরিচালকদের এমন দ্বন্দ্ব বাজারকে আরও দুর্বল করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা জানান, ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের এমন দ্বিধাবিভক্ত সিদ্ধান্ত সবাইকে হতবাক করছে। কারণ কোন পক্ষই কাউকে ছাড় দিতে চাচ্ছে না। বাজারের স্বার্থে এই জটিলতার দ্রুত অবসান চাই। এ বিষয়ে ডিএসইর একাধিক সদস্য বলেন, বর্তমানে শেয়ারবাজার একটি ক্রিটিক্যাল সময় পার করছে। এ মুহূর্তে ডিএসইর এমডি হিসেবে একজন স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষ দরকার। কারও ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য ডিএসইর এমডি বাছাই করা ঠিক হবে না। জানা গেছে, চলতি বছরের ১১ জুলাই ডিএসইর এমডি পদ শূন্য হয়। ওই পদ পূরণে নতুন এমডির খোঁজে গত ৭ আগস্ট বিজ্ঞপ্তি দেয় ডিএসই কর্তৃপক্ষ। এতে আগ্রহী প্রার্থীদের ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়েছিল। যেখানে ১৬ জন আবেদন করেছিলেন। তবে ওই ১৬ জনের মধ্যে কাউকেই যোগ্য মনে করেনি ডিএসইর পর্ষদ এবং নমিনেশন এ্যান্ড রিমিউনারেশন কমিটি (এনআরসি)। এরপরে গত ৫ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফায় এমডির খোঁজে বিজ্ঞপ্তি দেয় ডিএসই। এক্ষেত্রে আবেদন করেছিল ৩ জন।
×