ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রণেশ মৈত্র

পাবনার বাষট্টির দাঙ্গা ও তার রিপোর্টিং

প্রকাশিত: ০৯:০৯, ১৪ জানুয়ারি ২০২০

পাবনার বাষট্টির দাঙ্গা ও তার রিপোর্টিং

১৯৬২ সাল। পাকিস্তান তখন সামরিক শাসনের যাঁতাকলে। রাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ। সাংবাদিকতা বা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার লেশমাত্র ছিল না। বস্তুত সরকারী-বেসরকারী নির্বিশেষে সকল সংবাদপত্রই তখন কার্যত সরকারী প্রেস রিলিজকেন্দ্রিক অথবা সরকারী ছাড়পত্র নিয়ে প্রতিদিন সকালে আত্মপ্রকাশ করত। পত্রিকাগুলোকে প্রকাশিত খবর, মন্তব্য, সম্পাদকীয় সব কিছুর মাধ্যমেই দেখাতে হতো দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। বাজারে পণ্য সরবরাহে ঢল নেমেছে। মানুষের মধ্যে খুশির বন্যা বইছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির শিখরে আরোহণ করেছে। উৎপাদনের প্রাচুর্যে দেশ ভাসছে- ইত্যাদি। শিক্ষা-দীক্ষায়, কৃষিতে, শিল্পে, আমদানি-রফতানি উন্নয়ন-অগ্রগতির খবর গুরুত্বসহকারে সব পত্রিকার পাতায় পাতায় মূর্ত করে তোলা ছিল শাসকগোষ্ঠীর আকাক্সক্ষা। যদিও মানুষের কাছে চিত্রটি সম্পূর্ণ বিপরীত হিসেবেই বিবেচিত হতো। ফলে পত্রিকাগুলো হারাত তাদের পাঠকপ্রিয়তা। একমাত্র ‘ইত্তেফাক’ তার বলিষ্ঠ ‘রাজনৈতিক মঞ্চ’, যা লিখতেন স্বয়ং তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, প্রকাশ করে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠতে পেরেছিল। আইন বাঁচিয়ে অসাধারণ দৃঢ়তার সঙ্গে শ্রদ্ধেয় মানিক ভাই যে ‘রাজনৈতিক মঞ্চ’ নিরলসভাবে লিখেছেন সহজ সরল সাবলীল ভাষায় তা তুলনাহীন। আর সে কারণেই সংবাদপত্রের জনপ্রিয়তা ও পাঠকপ্রিয়তার ধস নামার ওই যুগেও ইত্তেফাক পেয়েছিল বিপুল প্রচার। গ্রাহকদের সংখ্যা প্রতিদিনই বেড়ে যেত সমগ্র পূর্ব বাংলায়। সেই ১৯৬২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিম বাংলার মালদহে অকস্মাৎ ঘটে যায় হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা। হিন্দুরাই ছিলেন আক্রমণকারী। বেশ কিছু মুসলিম ওই দাঙ্গায় প্রাণ হারান। এই খবর রেডিও পাকিস্তানে এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সংবাদপত্রসমূহে ব্যাপকভাবে প্রচার হয়। খবরটি সত্য হলেও প্রচার-প্রচারণা যেভাবে হয় তাতে মনে হতো গণমাধ্যমগুলো যেন উস্কানিদাতার ভূমিকায় নেমেছে। সংযতভবে তা প্রচার করত ইত্তেফাক ও সংবাদ- এই দুটি মাত্র পত্রিকা। একদিন বিকেলে বসে আছি ডাঃ অমলেন্দু দাক্ষীর চেম্বারে। ধীরে ধীরে সেখানে নিত্যদিনের মতো চায়ের আড্ডা জমে উঠল। ভোটার যেহেতু মৌলিক গণতন্ত্রের সদস্যরা, তাই প্রতি নির্বাচনী আসনেই ভোটার সংখ্যা ছিল অত্যন্ত সীমিত। সে কারণে ভোট গণনাও সন্ধ্যারাতেই শেষ হয়ে গেলে দেখা গেল আওয়ামী লীগের আমজাদ হোসেন সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। ন্যাপ প্রার্থী মীর্জা আবদুল আউয়াল দ্বিতীয় এবং সরকার সমর্থিত মুসলিম লীগ প্রার্থী ক্যাপ্টেন আসগর হোসেন জায়েদী পেয়েছেন সর্বনিম্ন ভোট। তবে আওয়ামী লীগ ও ন্যাপ প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান ছিল খুব কম। তখন ন্যাপ ছিল ঐক্যবদ্ধ। কোন বিভাজন তখনও হয়নি ঐতিহ্যবাহী ওই দলে। চায়ের আড্ডায় ইতোমধ্যে আরও অনেক ন্যাপ নেতা ও শুভানুধ্যায়ী সমবেত হয়েছেন। ডাঃ দাক্ষীর চেম্বারের বিপরীত দিকে ছিল রমজানের ওয়েসাইড রেস্টুরেন্ট। রমজান চা সরবরাহ করে চলেছেন ক্লান্তিহীনভাবে। ভয় কি? চায়ের দাম তো দেবেন ডাঃ দাক্ষী। এ কাজটি তিনি বছরের পর বছর ধরে ৩৬৫ দিনই করেছেন। হঠাৎ করেই সেখানে ঝড়ের বেগে এলেন তৎকালীন পাবনা জেলা ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সম্পাদক প্রয়াত মীজানুর রহমান। পরনে একটি লুঙ্গি ও স্যান্ডো গেঞ্জি। চোখে-মুখে উদ্বেগের ছাপ। মীজানুর রহমান ছিলেন চাটমোহর কেন্দ্রে ন্যাপের প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট। মীজানুর রহমান ঢুকেই বললেন, রণেশ দা, চলেন আপনার বাসায়। ওই এলাকা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। সেখান থেকে বৌদি, মাসিমা ও অন্যদের কোন নিরাপদ স্থানে পৌঁছাতে হবে। উদ্বিগ্নকণ্ঠে সবাই বলে উঠলেন, কী ব্যাপার মীজানুর? রণেশ দার পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরাতে হবে কেন? মীজানুর রহমান বলে উঠলেন, চাটমোহর থেকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন শেষে সন্ধ্যার আগেই পাবনাতে ফিরে গোসল করে খেতে বসেছি। এক মুঠ মুখে পুরতেই বাড়ির কাজের মেয়েটি বলে উঠল, তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তাড়াতাড়ি? কেন? কী ব্যাপার? উত্তরে কাজের মেয়েটি বলল, এখনই ‘গ-গোল’ শুরু হবে। কিসের গ-গোল জিজ্ঞেস করলেই মেয়েটি বলল, আমাদের পাড়া কেষ্টপুরে দেখে এলাম দা, বঁটি ও অন্যান্য অস্ত্রপাতি হাতে নিয়ে সকলে জড়ো হচ্ছে মসজিদের সামনে। তারা হিন্দুদের মেরে ফেলবে। এই শুনেই মীজানুর বললেন, ভাতের দ্বিতীয় গ্রাস মুখে না দিয়ে অমনি এলাম রণেশ দার কাছে। তাঁর বাড়ি আক্রান্ত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা । সবাই উদ্বেগাকুল হয়ে পরস্পরকে জিজ্ঞেস করলেন, কী করা যায়? নিরাপদ আশ্রয় কোথায় পাওয়া যাবে? ডাঃ দাক্ষী বলে ফেললেন, ‘মীজানুর, আনোয়ার, আনসার, ইদরিস (অধ্যাপক) তোমরা গিয়ে সবাইকে এখুনি আমার বাসায় নিয়ে এসো। এ বাসা খুবই নিরাপদ। সবাই রাজি হয়ে সকলে মিলে তৎক্ষণাৎ রওনা হয়ে গেলাম। বাসায় এসে দেখি একটি হ্যারিকেন জ্বালিয়ে দুটি শিশু সন্তান নিয়ে পূরবী বসে বসে চোখের জল ফেলছেন। আমাদের গলার আওয়াজে দরজা খুলতেই ওরা বলল, বৌদি আমাদের সঙ্গে চলুন। এক কাপড়েই তৎক্ষণাৎ রওনা দিয়ে সবাই পৌঁছানো গেল ডাঃ দাক্ষীর দোতলা বাসায়। সেখানে দাক্ষী এবং তাঁর স্ত্রী থাকেন। পূরবী ও সন্তানদের বৌদির রুমে রেখে সবাই এসে বসলে দাক্ষী বলে উঠলেন, তোমরা সবাই রাত্রিটা এখানেই থাকো। এখানেই খাবে। রাতটা সকলে মিলে জেগে পাহারা দেয়া যাবে। সাংবাদিক আনোয়ার এবং ডাক্তার দাক্ষীর সহকারী আনসারুল থাকলেন। বাদবাকি নিজ নিজ বাসায় ফিরে গেলনে স্ব-স্ব এলাকাবাসীর নিরাপত্তা বিধানে সাধ্যমতো ভূমিকা রাখার অভিপ্রায়ে। আনোয়ার, আনসারুল ও আমি গিয়ে দাঁড়ালাম দোতলার ছদে। ছাদে উঠতেই চোখে পড়ল পাবনা শহরের পূর্ব-দক্ষিণ কোণ থেকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। শহরের দোকানপাট ঝমঝম করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রিক্সাওয়ালারা রুদ্ধশ্বাসে যাত্রীর তোয়াক্কা না করে নিজ নিজ বাড়ির দিকে ছুটছেন। ক্রমন^য়ে পাবনা শহরটি যেন বিরান একটি শহরে পরিণত হতে চলেছে। আমরা তিনজনÑ আনোয়ার, আনসারুল ও আমি ছাদে একটু আড়ালে দাঁড়িয়ে চুপচাপ দেখছি আগুন পূর্ব-দক্ষিণ কোণ থেকে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ থেকে পশ্চিমে ইছামতি নদীর তীরঘেঁষে দাউ দাউ করে ছড়িয়ে পড়ছে। কেবলই ভেসে আসছে অসহায় মানুষের আর্তচিৎকার। আমরাও অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে সব দেখছি, শুনছি, কিন্তু কিছু করতে পারছি না। রাতভর রাধানগর এলাকা থেকে এক প্রভাবশালী পরিবহন ব্যবসায়ীকে দেখা গেল ট্রাকে করে কোমরে মালকোঁচা মারা, গামছা দিয়ে কোমর জড়ানো মশাল হাতে ‘নারায়ে তকবির’ স্লোগানে দিগি¦দিক কাঁপিয়ে ছুটছে দফায় দফায় পাবনা শহরের প্রধান সড়ক দিয়ে। পুলিশ লাঠি হাতে দু-একজন করে এখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে। দুর্বৃত্তবাহী ট্রাককে তারা আদৌ বাধা দিচ্ছে না। বরং মনে হচ্ছিল দুর্বৃত্তদেরই যেন তারা নীরবে নিরাপত্তা বিধান করছিল। হঠাৎ করে রাত একটার দিকে দেখা গেল এক রিক্সার সঙ্গে মাইক বেঁধে একজন পুলিশ শহরে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি ঘোষণা দিয়ে গেল। আবার তার পরপরই ট্রাকে করে কয়েক দফা মশাল হাতে দুর্বৃত্ত বাহিনীকে নানা জায়গায় রেখে আসতেও দেখা গেল। না, পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের কোন অভিযোগ পরবর্তীকালে আনেনি বা তাদের চলাচলে বাধাও দেয়নি। পরদিন বেলা ১০টা। শহরে লোকজন তেমন একটা নেই। আমরা ঘুরছি তথ্য সংগ্রহ করতে। জানতে পারলাম রাতে নিজ নিজ বাড়িতেই ৩১ জন হিন্দুকে খুন করা হয়েছে। কয়েক হাজার বাড়িঘর, দোকানপাট পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। লুটপাটও হয়েছে বিস্তর। নিহতদের নাম-ধামও সংগ্রহ করেছিলাম। দু’তিনজন শিক্ষক ও একজন প্রভাবশালী আইনজীবী বাদে প্রায় সবাই ছিলেন ব্যবসায়ী। বিকেলে এই তথ্যগুলো এবং আগের রাতের ঘটনাবলী লিখে প্রেস টেলিগ্রাম করলাম সংবাদ ও মর্নিং নিউজে। পরদিন পত্রিকা এলে দেখি খবরটা কোথাও নেই। টেলিগ্রাম অফিসে গিয়ে ব্যাপারটা জানতে পারলাম যে, ডিএসবি টেলিগ্রামগুলো আটকে দিয়েছে। পরদিন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে টাউন হলের অভ্যন্তরে একটি সভা ডাকা হয় শহরের শান্তিরক্ষার জন্য সরকারী-বেসরকারী ব্যক্তি নিয়ে কমিটি গঠনের লক্ষ্যে। জেলা প্রশাসক আমাকেও ডেকেছিলেন ওই সভায়। গেলাম, ঢুকেই বেরিয়ে এলাম। জেলা প্রশাসক জিজ্ঞেস করলেন, ফিরে যাচ্ছেন কেন? বললাম, প্রতিবাদে। কারণ, দেখেছি গতরাতে যে ব্যক্তি ট্রাকে করে মশাল হাতে গু-া সরবরাহ করেছে সারারাত তাকেও দেখছি এখানে। যে এসপিওসি শহরজুড়ে অগ্নিসংযোগ, হত্যা, লুণ্ঠন প্রভৃতি ঘটে যাওয়া সত্ত্বেও এবং এমনকি, যে এসপিওসি ১৪৪ ধারা প্রকাশ্যে ভঙ্গ করা সত্ত্বেও গু-া সরবরাহে বিন্দুমাত্র বাধা দিলেন না বা কাউকে গ্রেফতার পর্যন্ত করলেন না তাদের সঙ্গে বসে শান্তি কমিটি গঠন করতে রাজি নই। বেরিয়ে এসে আমার প্রতিবাদের কথা উল্লেখ না করে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে এবং পুলিশ কর্মকর্তা ও বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে দাঙ্গা বিধ্বস্ত পাবনা শহরে শাক্তি রক্ষায় একটি কমিটি গঠিত হয়েছে এবং কমিটির পক্ষ থেকে সকলকে আহ্বান জানান হয়েছে শান্তিশৃংখলা বজায় রাখার জন্য- এই জাতীয় একটি প্রেস টেলিগ্রাম পরদিনও পাঠালাম। ফল দাঁড়ালো একই। টেলিগ্রামটি যেতে দেয়া হলো না। কোন পত্রিকায় তা প্রকাশও হতে পারল না। পরের দিন টেলিগ্রাম করলাম- শহরের দোকনপাট খুলছে না, গাড়ি-ঘোড়া চলছে না, গ্রাম থেকে শাক-সবজি, তরিতরকারি, মাছ-মাংস আসছে না, স্কুল-কলেজ চলছে না, শিশুদের খাদ্য দুধও পাওয়া যাচ্ছে না পাবনা শহরে। এভাবে লিখে পুনরায় প্রেস টেলিগ্রাম করলাম। কিন্তু তাও গেল না। ছাপাও হলো না কোন পত্রিকায়। দিন কয়েকের মধ্যে পাবনায় বিদায়ী সাক্ষাতকারে এলেন পাঞ্জাবে বদলির আদেশপ্রাপ্ত গবর্নর মেজর জেনারেল আজম খান। পাবনার ঘটনা জানতে পেরে তিনি সারা শহর ঘুরে বেরিয়ে পোড়া দোকানপাট, বাড়িঘর স্বচক্ষে দেখলেন অশ্রুজল ভরা চোখে। অতঃপর একটি জমায়েতে প্রশাসনকে নির্দেশ দিলেন তিনদিনের মধ্যে দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার করে বিচারামলে আনতে। সমগ্র প্রদেশের সকল জেলায় বিদায়ী সাক্ষাতে বেরিয়েছিলেন তিনি। গবর্নর চলে যাওয়ার পর শহরে পুলিশী তৎপরতা শুরু হলো। পরদিন এসে গেল ইপিআর বাহিনীর এক বিশাল বহর। শুরু হয়ে গেল গণগ্রেফতার। নির্দোষ মানুষরাই গ্রেফতার হতে থাকলেন। বাড়ল আতঙ্ক। গ্রেফতার করা হয়েছিল ৫৪ ধারায়। ক’দিন পর সবাই জামিনে মুক্তি পেলেন। মামলা চালানো হলো না। অপমৃত্যুর গহ্বরে চলে গেল মামলাগুলো। যা হোক, গবর্নর আজম খানের সফর পাবনা শহর প্রদক্ষিণ এবং তাঁর বক্তব্য দিয়ে ওইদিনই পাঠালাম আরও একটি টেলিগ্রাম। মর্নিং নিউজ ও সংবাদে পাঠালাম আমি এবং অন্যান্য পত্রিকায় সেগুলোর জেলা প্রতিনিধিরা। কিন্তু গবর্নরের সফর এবং বক্তব্য আলোর মুখ দেখল না। সে টেলিগ্রামগুলোও আটকে দেয়া হয়েছিল। ভাবছি কি করা যায়। এত দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করেও এমন একটি খবর প্রকাশ করতে পারছি না। মানুষ তো জানতেই পারল না কেন এত বড় ঘটনার খবর প্রকাশ হলো না কোন একটি পত্রিকায়ও। তাঁরা তো আর জানছেন না কেন ছাপা হচ্ছে না। ফলে সাংবাদিক হিসেবে মান-সম্মান রক্ষাইবা করি কি করে। অকস্মাত একটা বুদ্ধি বের করলাম। দাঙ্গা, হত্যা, অগ্নিসংযোগ প্রভৃতি উল্লেখ না করে শহরে হঠাৎ কয়েকদিন যাবত অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে, গাড়ি-ঘোড়া সাতদিন ধরে চলছে না, দোকানপাট খুলছে না, স্কুল- কলেজ বন্ধ ইত্যাদি সবিস্তারে বর্ণনা দিয়ে ‘সংবাদ’-এর তৎকালীন বার্তা সম্পাদক তোয়াব খানের নামে একটি খামে পুরে ‘সংবাদ’-এর বংশাল রোড কার্যালয়ের ঠিকানায় বুক পোস্টে পাঠানোর জন্য লোক মারফত শহর থেকে পাঁচ মাইল দূরবর্তী টেবুনিয়া পোস্ট অফিস থেকে পোস্ট করার ব্যবস্থা করলাম। দিন সাতেক পর সংবাদে তিন কলাম শিরোনামে প্রথম পৃষ্ঠায় আমার নাম দিয়ে প্রকাশ হলো খবরটি। হট কেকের মতো সেদিন ‘সংবাদ’ বিপুল সংখ্যায় বিক্রি হলো পাবনায়। অনেকে ভয় পেয়ে গেলেন আমি গ্রেফতার হয়ে যেতে পারি এই আশঙ্কায়। অবশ্য তেমন কিছু ঘটাতে সম্ভবত পুলিশ সাহস পেল না দেশের সাংবাদিক মহলে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে এই আশঙ্কায়। এ এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা পাকিস্তান আমলের সাংবাদিকতার। লেখক : সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত [email protected]
×