ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্ব শেষ ॥ শুক্রবার থেকে দ্বিতীয় পর্ব

লাখো কণ্ঠে ‘আমিন’ ধ্বনিতে মুখর তুরাগ তীর

প্রকাশিত: ১১:১২, ১৩ জানুয়ারি ২০২০

লাখো কণ্ঠে ‘আমিন’ ধ্বনিতে মুখর তুরাগ তীর

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু/ নুরুল ইসলাম, টঙ্গী থেকে ॥ টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কণ্ঠে আমিন আল্লাহুমা আমিন ধ্বনিতে মুখরিত আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে রবিবার শেষ হলো এবারের বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্ব। মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি, সমৃদ্ধি, ইহলৌকিক ও পরলৌকিক মুক্তি এবং দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার তৌফিক কামনা করা হয়। জীবনের সব পাপ-তাপ থেকে মুক্তির জন্য, পরম দয়াময় আল্লাহর দরবারে অনুনয়-বিনয় করে ক্ষমা ভিক্ষা করছিলেন মুসল্লিরা। ক্ষমা লাভের আশায় লাখো মানুষের সঙ্গে একত্রে হাত তুলতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে এসেছিলেন তারা ভোর থেকেই। বহু মানুষের অংশগ্রহণে ইহলোকের মঙ্গল, পরলোকের ক্ষমা, দেশের কল্যাণ, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও বিশ্বশান্তি কামনা করা হয় তবলিগ জামাতের ৫৫তম বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতে। এর আগে হেদায়েতি বয়ান করা হয়। মাওলানা জোবায়ের অনুসারী প্রথম পর্বের পর দ্বিতীয় পর্বের এজতেমা হবে আগামী ১৭ জানুয়ারি থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। রবিবার আখেরি মোনাজাতের আগে আগামী বছর (২০২১ সালে) জোবায়ের অনুসারীদের এজতেমা দু’পর্বে আয়োজনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের তবলীগ মারকাজের কাকরাইল মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের আহমদ ছোট ছোট বাক্যে আরবী-উর্দু ও বাংলা ভাষায় ৩৯ মিনিটব্যাপী আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন। এবারের বিশ্ব এজতেমার এ পর্বের আখেরি মোনাজাত পরিচালনার দায়িত্ব পড়ে তার ওপর। তিনি বেলা ১১টা ৭ মিনিট থেকে মোনাজাত শুরু করেন এবং তা চলে বেলা ১১টা ৪৬ মিনিট পর্যন্ত। ৩৯ মিনিটব্যাপী মোনাজাতের মধ্যে প্রথম ১৮ মিনিট পবিত্র কোরানের আরবী আয়াত এবং পরের ২১ মিনিট বাংলা ও উর্দু ভাষায় মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। মোনাজাত শুরু হতেই পুরো এলাকা জুড়ে নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। যে যেখানে ছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। খানিক পর পর শুধু ভেসে আসে আমিন, ছুম্মা আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন। অনুতপ্ত মানুষের কান্নার আওয়াজে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। জীবনের সব পাপ-তাপ থেকে মুক্তির জন্য, পরম দয়াময় আল্লাহর দরবারে কেঁদে কেঁদে অনুনয়-বিনয় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে পানাহ ভিক্ষা করছিলেন তারা। ক্ষমা লাভের আশায় ধনী-গরিব-শ্রমিক-মালিক নির্বিশেষে সর্বস্তরের লাখো মানুষের সঙ্গে একত্রে হাত তুলতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে এসেছিলেন তারা ভোর থেকেই। বহু মানুষের অংশগ্রহণে ইহলোকের মঙ্গল, পরলোকের ক্ষমা, দেশের কল্যাণ, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও বিশ্বশান্তি কামনার মধ্য দিয়ে তবলিগ জামাতের বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হয়েছে রবিবার। এবারের প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতে প্রায় ২০ লক্ষাধিক মানুষ অংশ নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের ধারণা। ভিআইপিদের মোনাজাতে অংশগ্রহণ বিশ্ব এজতেমার মূল আকর্ষণ হচ্ছে আখেরি মোনাজাত। প্রতিবারের মতো এবারের বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা গণভবনে মন্ত্রিপরিষদের বিভিন্ন সদস্যবর্গ, সাংসদ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেছেন। তারা টেলিভিশনের সামনে বসে সরাসরি সম্প্রচার দেখে মোনাজাতে অংশ নেন। এদিকে বিশ্ব এজতেমায় আগত লাখো লাখো মুসল্লির সঙ্গে এজতেমা ময়দানে বসে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ আনোয়ার হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। আগামী বছর জোবায়ের অনুসারীদের এজতেমা দু’পর্বে ২০২১ সালে মাওলানা জোবায়ের অনুসারী আলেম ওলেমা কওমিপন্থী তাবলীগ অনুসারীদের বিশ্ব এজতেমা দু’পর্বে আয়োজনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বিশ্ব এজতেমার মুরব্বি ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান জানান, এবারের বিশ্ব এজতেমায় অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করে ৩০ লক্ষাধিক মুসল্লির সমাগম ঘটে। স্থান সঙ্কুলানের কারণে মুসল্লিদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে ২০২১ সাল হতে কওমিপন্থী তবলীগ অনুসারীদের বিশ্ব এজতেমা দু’পর্বে আয়োজনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আরও চার মুসল্লির মৃত্যু রবিবার আখেরি মোনাজাতের পূর্ব পর্যন্ত বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্বে যোগ দিতে আসা ৪ মুসল্লি হৃদরোগ ও বার্ধক্যজনিত কারণে এজতেমা ময়দানে মারা গেছেন। এ নিয়ে এবারের বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্বে মোট ১২ জন মুসল্লি মারা গেছেন। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ মনজুর রহমান জানান, রবিবার ভোর রাতে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানার করাচিপাড়া এলাকার মৃত অচিম আলীর ছেলে আলী আহমেদ (৭৪), জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি থানার হাটখোলা এলাকার জসিম উদ্দিনের ছেলে আব্দুল মোমেন (৫৫) ও কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি থানার গুচিহাটা এলাকার নুরুল ইসলাম (৮০) মারা যান।
×