ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশবিরোধী বিকৃত প্রচারে এ্যামনেস্টি

প্রকাশিত: ১১:১০, ১৩ জানুয়ারি ২০২০

 বাংলাদেশবিরোধী বিকৃত প্রচারে এ্যামনেস্টি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিরিয়ার যুদ্ধে ধ্বংসযজ্ঞের ছবি দিয়ে বাংলাদেশের নাম ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর এক ফেসবুক পোস্ট করেছে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ফেসবুকে পোস্টটি প্রোমোশন করার পর বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় নিজেদের অফিসিয়াল পেজ থেকে হাইড করে রাখলেও এখনও তা শেয়ার হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। তবে এমন পোস্ট যাওয়া উচিত হয়নি বলে দায়সারা বক্তব্য দিয়ে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা। এদিকে বিভ্রান্তিকর এই ছবি ছড়িয়ে প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও। এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এমন তৎপরতায় ক্ষুব্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময়েও বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মনগড়া তথ্য ছড়িয়েছে। তারা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বন্ধের জন্য নানাভাবে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে। চাপ নিয়েছে। আর এখন তারা সিরিয়ার একটি ছবি দিয়ে বাংলাদেশের নাম ব্যবহার করে যে মিথ্যা ও বিকৃত তথ্য বিশ্বজুড়ে ছড়িয়েছে তা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না। এর জন্য তারা যদি ক্ষমাও চায় আমি মনে করি এ অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ তৎপরতার মাধ্যমে প্রমাণ করেছে তারা কোন রকম সঠিক তথ্য উপাত্ত ছাড়াই মনগড়া তথ্য ছড়িয়ে সব সময় কাজ করে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সময়েও প্রতিষ্ঠানটি এভাবে সঠিক তথ্য উপাত্ত ছাড়া বিকৃত ভুল তথ্য নিয়ে তাদের কর্মকান্ড চালিয়েছে। এটা কোনভাবেই মানা যায়না। এ মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির আসল উদ্দেশ্য নিয়েই বিশ্বজুড়ে প্রশ্ন উঠছে। জানা গেছে, চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি নিজেদের অফিসিয়াল পেজ থেকে একটি পোস্ট করে সকলকে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সদস্য হওয়ার আহ্বান জানায় প্রতিষ্ঠানটি। সেই পোস্টে যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে তা সিরিয়ার। ছবিটিতে একটি ধসেপড়া বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় দুই শিশুকে। অন্যদিকে সেই পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে অনেক সাধারণ মানুষ ভুল সময় ভুল স্থানে থাকার কারণে আক্রমণ, ভায়োলেন্স ও মৃত্যুর মুখে পড়ছে। যুদ্ধ ও সংঘর্ষের সময় আক্রান্তদের কথা প্রকাশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি আমরা। না বলা গল্পগুলো জানাতে লাখো মানুষের এই আন্দোলনে আপনিও যোগ দিন।’ এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এই পোস্টে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশীরা। সেখানে তাদের এক টপ ফ্যান মোঃ সজীব ইসলাম লেখেন, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কী পাগল হয়ে গেছে? বাংলাদেশে কোন যুদ্ধ চলছে না। এটা কিভাবে লেখা হলো! এখনি পোস্টটি মুছে দিন। ১০ তারিখে ফেসবুকে দেয়া এই পোস্ট নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলেও বিষয়টি নিয়ে অবগত ছিল না এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। পোস্টটি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এমন পোস্ট যাওয়া উচিত হয়নি। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর আমাদের টেকনিক্যাল দলের কাছে পাঠানো হয়েছে। পোস্টটি প্রদান করা হয়েছিল সারাবিশ্বের যে কোন মানুষকে মানবাধিকারের এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে সেখানে নির্দিষ্ট একটি দেশের নাম দেয়া উচিত হয়নি। তিনি আরও জানান, পোস্টটি মূল পেজ থেকে দেখা যাচ্ছে না। এর অর্থ হলো আমাদের টিম এই পোস্ট নিয়ে কাজ করছে। পোস্টটি মুছে ফেলা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে অবগত করার পর এখন ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে সক্রিয় ছিল এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এ সময় বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে আরও বেশ কিছু ইস্যুতে সোচ্চার ছিল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানটি। ২০১২ সাল থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সরব থাকা এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করার চেষ্টার অভিযোগ উত্থাপিত হয় ২০১৫ সালে। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পরও বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনালের সক্ষমতা ও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
×