ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শীতের তীব্রতা বেড়েছে, চরম ভোগান্তি

প্রকাশিত: ১১:০৮, ১৩ জানুয়ারি ২০২০

 শীতের তীব্রতা বেড়েছে,  চরম ভোগান্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কনকনে শীতে কাঁপছে দেশ। দুর্ভোগ বেড়েছে দেশবাসীর। কুয়াশা, উত্তরে ঠান্ডা বাতাস এবং সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্যের অব্যাহত হ্রাস শীতের তীব্রতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। রবিবার ঢাকায় এই পার্থক্য ছিল মাত্র ৩.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বিভিন্ন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। উত্তরাঞ্চলে দিনের বেলাতেও অব্যাহত থাকে ঘন কুয়াশা। ঘন কুয়াশায় জল ও সড়কপথে যান চলাচল চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অনেক এলাকায় গত কয়েকদিন সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। এতে সাময়িকভাবে বন্ধ থাকছে ধানের চাতালগুলো। দাম বেড়েছে শীতবস্ত্রের। শীতবস্ত্রের অভাবে শত শত দরিদ্র পরিবার কষ্ট পাচ্ছে। সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। আজ রবিবারও দেশের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। অনুভূত হবে মাঝারি থেকে তীব্র শীত। ২০১৯ সালের পহেলা নবেম্বর থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। রবিবারও সারাদেশে অনুভূত হয় তীব্র শীত। রাজধানীবাসীরাও কনকনে শীত থেকে রেহাই পায়নি। দেখা যায়নি সূর্যের মুখ। দিনভর নগরীর আকাশ ছিল কুয়াশাচ্ছন্ন। বইতে থাকে ঠা-া বাতাস। বাড়তে থাকে ঠা-া বাতাসের দাপট। অধিকাংশ লোকজনকে দিনভর গরম কাপড় ব্যবহার করতে দেখা গেছে। নগরীর শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। শীতবস্ত্রের দামও বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে মানুষের ঢল নামে। এ সুযোগে বেড়ে যায় গরম কাপড়ের দাম। এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, বাংলাদেশে জানুয়ারিতে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দু’টি মাঝারি ও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আর দেশের অন্যত্র বয়ে যেতে পারে এক থেকে দু’টি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ। জানুয়ারি মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল ও নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি/ঘনকুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা/মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে। তবে সারাদেশে একটানা তিন থেকে চারদিন ঘন/মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস। আর ফেব্রুয়ারি মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। ওই মাসের প্রথমার্ধে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে ১টি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। ওই মাসের প্রথমার্ধে দেশের নদ-নদীর অববাহিকা ও অন্যত্র সকালের দিকে হালকা/মাঝারি ধরনের কুয়াশা থাকার সম্ভাবনা আছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষেরদিকে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে ১-২ দিন বজ্রঝড় হতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অধিদফতর। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাল মঙ্গলবার থেকে মাঘের আগমন ঘটবে। পৌষ ও মাঘ মাসে শীত অনুভূত হওয়াটাই স্বাভাবিক। এটি শীতের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্নœ তাপমাত্রা খুব বেশি হ্রাস না পেলেও এই বিষয়ে লক্ষ্য রাখা দরকার যে, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্য কমছে। আর সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য যতই কমবে, শীতের মাত্রাও ততই বাড়বে। পাশাপাশি ঘনকুয়াশা এখনও রয়ে গেছে। কুয়াশার কারণে জলীয়বাষ্প ওপরে উঠতে পারছে না। ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগ শুকানোর সুযোগ পাচ্ছে না। এসব কারণে শীত অনুভূত হবেই। রবিবার এদিন রাজধানীর সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ ডিগ্রী সেঃ ও ১৩.৬ ডিগ্রী সেঃ। আর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা টেকনাফে ২৫.৮ ডিগ্রী সেঃ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রাজারহাটে ৯.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়। রবিবার দেশের প্রায় সবক’টি জেলায় সর্বনিম্নœ তাপমাত্রা ১১ থেকে ১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডাঃ আয়শা আক্তার রবিবার জনকণ্ঠকে জানান, ২০১৯ সালের পহেলা নবেম্বর থেকে ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে শীতজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ১ লাখ ৪০ হাজার ৪৪৪ জন ও মৃত্যু ৪ জন, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত ৫৭ হাজার ১৯৫ জন ও মৃত্যু ২০ জন এবং শীতজনিত অন্যান্য অসুস্থতায় আক্রান্ত ১ লাখ ৬২ হাজার ২৭৯ জন ও মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের। কুড়িগ্রাম ॥ স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, কনকনে শীতে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। বোরো বীজতলা ও আলু ক্ষেত ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। জেলা প্রশাসক মোছাঃ সুলতানা পারভীন জানান, শীত মোকাবেলা করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫৯ হাজার ১৪ পিস কম্বল বিতরণের পর আরও ২ হাজার কম্বল পাওয়া গেছে। এছাড়া কম্বল কেনার জন্য ১০ লাখ টাকা, শিশু পোশাক কেনার জন্য ৩ লাখ টাকা এবং শিশু খাদ্যের জন্য আরও ১ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। পঞ্চগড় ॥ স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় থেকে জানান, কয়েকদিন বিরতির পর রবিবার থেকে আবারও শুরু হয়েছে শীতের দাপট। হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে আকাশ। রাতে বৃষ্টির ফোটার মতো ঝরছে শিশিরপাত। বেলা ১২টার আগে সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। অল্প সময়ের মধ্যে সূর্যের মুখ দেখা মিললেও তাতে নেই কোন উত্তাপ। কনকনে ঠান্ডায় শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষের বেড়েছে দুর্ভোগ। কমছে দিনের ও রাতের তাপমাত্রা। পৌষের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অধিকাংশ সময়েই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে পঞ্চগড়ে। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম জানান, দু’দিন ধরে পঞ্চগড়ে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। থাকছে ঘনকুয়াশা। সেই সঙ্গে হিমালয়ের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে ধেয়ে আসা ঠান্ডা বাতাসে তাপমাত্রা কমে আসছে। মৃদু শৈত্যপ্রবাহটি মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
×