ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কুঁজো বিআরটিএ ॥ থমকে গেছে ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্যক্রম

প্রকাশিত: ১১:০৬, ১৩ জানুয়ারি ২০২০

কুঁজো বিআরটিএ ॥ থমকে গেছে ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্যক্রম

রাজন ভট্টাচার্য ॥ সারাদেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্যক্রম থমকে গেছে। মূলত স্মার্টকার্ড সঙ্কটের কারণে লাইসেন্স দিতে পারছে না বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। অথচ প্রায় ২০ লাখ আবেদন এখন জমা আছে। আবেদনের ভারে কুঁজো হয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটি। অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা বদনামের মধ্যে নতুন করে যুক্ত হয়েছে কার্ড না থাকা। অন্যদিকে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর লাইসেন্স রিনিউ করার আবেদন আছে দুই লক্ষাধিক। মাসের পর মাস যাচ্ছে কিন্তু লাইসেন্স মিলছে না। আবেদনের পর কার্ড কিংবা পরীক্ষার জন্য সময় দেয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত! ফলে বেড়েছে গ্রাহক ভোগান্তি। শীঘ্রই সঙ্কট সমাধানের কোন পথও দেখছেন না সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। যদিও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা ও বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলছেন, সঙ্কট সমাধানের চেষ্টা চলছে। সব মিলিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে বিআরটিএ এখন মহা অশান্তির কারণ। রাজধানীর আশপাশের দুটি বিআরটিএ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুব বেশি তদবির না থাকলে তারা এখন ড্রাইভিং লাইসেন্স করার আবেদন জমা নিচ্ছেন না। জমা নিলেও পরবর্তী প্রক্রিয়া বেশি দূর এগোচ্ছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইকুরিয়া বিআরটিএ কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, আবেদন জমা নিয়ে কি লাভ। জমা নেয়া মানেই লোকজন বার বার জানতে চান কবে লাইসেন্স দেয়া হবে। কার্ড সরবরাহ বাড়লে সবকিছু স্বাভাবিক হবে। ভুক্তভোগী আনোয়ার, জামাল, আশরাফসহ অনেকেই জানালেন, লাইসেন্স করার আবেদন জমা দেয়ার পর সব পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু ছবি তোলার জন্য কয়েক মাস ধরে সময় দিয়ে পেছানো হয়। কিন্তু ছবি তোলা হচ্ছে না। বার বার বলা হচ্ছে একটু সমস্যা আছে। তা মিটে গেলেই ছবি তোলা হবে। আরও একাধিক ব্যক্তি জানালেন, আবেদনের পর এক বছর সময় নেয়া হয়েছে পরীক্ষা বা কার্ডের জন্য। সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স সঙ্কটেই ডুবতে যাচ্ছে সরকারী সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটি। এই যখন পরিস্থিতি, তখন পরিবর্তন এসেছে সংস্থাটির প্রধান অর্থাৎ চেয়ারম্যান পদেও। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আগের অপরিকল্পিত পথচলার মাসুল দিতে হবে নতুন চেয়ারম্যানকেও। সঙ্কট অন্তত দেড় বছর ধরে লাইসেন্স প্রার্থীরা বলছেন, এক থেকে দেড় বছর ধরে শোনা যাচ্ছে কার্ড কম। লাইসেন্সের জন্য যোগ্য গড়ে প্রতিদিন এ রকম ৪শ’ ব্যক্তি বিআরটিএর মিরপুর অফিসে ছবি তোলার জন্য গিয়ে থাকেন। মিরপুর ছাড়াও ঢাকার উত্তরা, ইকুরিয়া অফিসেও তাদের ভিড় থাকে। ঢাকাসহ সারাদেশে বিআরটিএর ৫৭টি সার্কেল অফিস রয়েছে। সব অফিসেই সেবাপ্রার্থী সাধারণ মানুষের ভিড় ও ভোগান্তি দেখা গেছে লাইসেন্সের জন্য। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে মিরপুর অফিসের জন্য মাত্র ২০টি কার্ড। অন্য সার্কেল অফিসে এ সংখ্যা আরও কম। ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা অফিসে ১০টি, অন্য বিভাগীয় শহরে পাঁচটি এবং কিছু অঞ্চলে দিনে তিনটি করে স্মার্টকার্ড দেয়া হচ্ছে। বিআরটিএতে বর্তমানে প্রায় ২০ লাখ আবেদন জমা রয়েছে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য। অথচ দিনে গড়ে সরবরাহ করা হচ্ছে এক শ’রও কম। ডেলিভারির নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে এক সপ্তাহে সারাদেশের ৫৭টি সার্কেল অফিস মিলিয়ে সর্বমোট যথাক্রমে ১১২, ১০৪, ১১১, ৫৯ ও ১০৮টি কার্ড সরবরাহ করেছে। নবেম্বর মাসে সারাদেশে কার্ড ডেলিভারির সংখ্যা ১ হাজার ৯৪২টি। ডিসেম্বরে এ্ই সংখ্যা আরও কম। অথচ দিনে ৪ হাজার কার্ড সরবরাহের কথা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। চাইলে আরও দুই হাজার কার্ড সরবরাহ করতে পারে মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান। সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বিআরটিএর চেয়ারম্যান ড. কামরুল আহসান বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স চাহিদা অনুযায়ী দেয়া যাচ্ছে না; এটা ঠিক। দরপত্র প্রক্রিয়া চলছে। সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ ও তদারকিতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি দূর করাই আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। বিআরটিএ সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান খান বলেন, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কার্যকর করার পর সব পক্ষ থেকেই যানবাহনের বৈধ কাগজপত্র করা ও ড্রাইভিং লাইসেন্স করার তাগিদ বেড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় যদি গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হন তাহলে আইন বাস্তবায়নেও সমস্যা সৃষ্টি হবে। সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, অনেকেই দিনের পর দিন ঘুরে লাইসেন্স সমস্যার সমাধান পাচ্ছেন না। এ ব্যাপারে আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু কার্ড না থাকলে সমস্যার সমাধান মিলবে কিভাবে। সম্প্রতি মতিঝিল বিআরটিসি ডিপোতে আয়োজিত এক শুনানিতে বিআরটিসি চালকরা যথাসময়ে লাইসেন্স ও কার্ড পাচ্ছেন না বলে মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলামের কাছে সরাসরি অভিযোগ করেন। সময় মতো লাইসেন্স কার্ড সরবরাহে দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়ায় না যাওয়ায় তৈরি হয়েছে এ দুরবস্থা। দেরিতে টের পেয়ে বিআরটিএ অতিরিক্ত কার্ড ছাপানোর উদ্যোগ নিলেও তাতে লেজেগোবরে দশা সৃষ্টি হয়। ফলে থেমে যায় ওই প্রক্রিয়া। এখন লাইসেন্স কার্ড সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে দরপত্র প্রক্রিয়া অনুমোদনের উদ্যোগ নেয়ার সময় যখন, তখন তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে একের পর এক অভিযোগের তীরে এবং বিভিন্ন মহলের চাপের কারণে। পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে চলছে তদবির, আসছে চাপ। দরপত্র আহ্বান এবং কার্যাদেশ নিয়ে বিপাকে বিআরটিএ একাধিক কর্মকর্তা জানান, সারাদেশে এখন ড্রাইভিং লাইসেন্সের ভয়াবহ সঙ্কট চলছে। লাইসেন্স মুদ্রণে দরপত্র আহ্বান এবং কার্যাদেশ প্রদান নিয়ে বিপাকে পড়েছে বিআরটিএ। একদিকে দরদাতা বাছাই শেষে কার্যাদেশ প্রদানের প্রস্তাব পাঠানো নিয়ে আসছে নানা চাপ। অন্যদিকে গ্রাহকেরও চাপের মুখে পড়েছেন সংস্থার কর্মকর্তারা। দীর্ঘদিন ধরে স্মার্টকার্ড সঙ্কট শুনতে শুনতে গ্রাহকরা এখন অনেকটাই ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছেন। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন জেগেছে, সমস্যার উত্তরণে আগে থেকে কেন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি? এর উত্তর নেই কারও কাছে। কার্ডের খবর নেই সঙ্কট আছে। এটি ধামাচাপা দেয়ার কিছু নেই। তাই বলে গ্রাহকরা কতদিন ঘুরবেন বিআরটিএ’র দ্বারে দ্বারে? রাজধানীর মিরপুর বিআরটিএ অফিসে গিয়ে দেখা যায়, পরীক্ষায় পাসের পর কার্ড সরবরাহের জন্য প্রথমে তিন মাসের সময় দেয়া হচ্ছে। এরপর নির্ধারিত তারিখে কার্ডের জন্য হাজির হলে আরও ৬ মাস পরের আরেকটি তারিখের কথা বলা হচ্ছে। সেই ৬ মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও কার্ড প্রদান করা সম্ভব হবে না এবং ফের সময় নিয়ে নতুন আরেকটি তারিখ দেয়া লাগবে- এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে খোদ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কথায়। তাই সাধারণ আবেদনকারীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এদিকে শিক্ষানবিস লাইসেন্স পেতে আবেদন করেছেন, তাদের পরীক্ষা গ্রহণের তারিখ দেয়া হয়েছে এক বছরেরও পর। লাইসেন্স সরবরাহের পরিসংখ্যান নিরাপদ সড়কের দাবিতে ২০১৮ ও ১৯ সালে দু’দফা সারাদেশে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। এরপর থেকেই ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা অপ্রত্যাশিত রকমের বেড়ে যায়। এ ছাড়া নতুন সড়ক আইন অনুযায়ী লাইসেন্স না থাকার অপরাধে প্রথম বার ৫ হাজার টাকা ও দ্বিতীয় বার ১০ হাজার টাকা জরিমানা করার কথা ট্রাফিক পুলিশ বিভাগের। এ কারণেও লাইসেন্স প্রত্যাশীর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। একদিকে বিপুল চাহিদা অন্যদিকে সক্ষমতা সত্ত্বেও হাতেগোনা কয়েকটি কার্ড মুদ্রণের কারণ জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি জানায়, কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নির্দেশনা অনুযায়ী কার্ড মুদ্রণ করা হয়। বিআরটিএর প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারাও বিষয়টি স্বীকার করেন। তাদের মতে, চুক্তি অনুযায়ী কার্ডগুলো এক সঙ্গে মুদ্রণ করে দিলে পরে বড় ধরনের বিপদ দেখা দেবে। তাই জরুরী বিবেচনায় সীমিত পরিসরে কার্ড সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে পাঁচ বছরে ১৫ লাখ লাইসেন্স সরবরাহের জন্য টাইগার আইটি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় বিআরটিএ। তাদের সময়সীমা ২০২২ সাল। তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই বেশি কার্ড ছাপাতে হয় চাহিদার কারণে। এ পর্যন্ত ডেলিভারি দেয়া হয়েছে ১৪ লাখ ৩৭ হাজার ৪২৮টি কার্ড। এর মধ্যে পেশাদার লাইসেন্স ৭ লাখ ৯৭ হাজার ৩৮টি এবং অপেশাদার লাইসেন্স ৬ লাখ ৪০ হাজার ৩৯০টি। সেই হিসাবে ৬২ হাজার ৫৭২টি কার্ড সরবরাহ করবে চুক্তিবদ্ধ ভেন্ডর। কিন্তু এখনই এসব কার্ড সরবরাহ করে দিলে পরবর্তীতে বড় ধরনের বিপত্তির আশঙ্কা থেকে যায় বলে গুরুত্ব বিবেচনায় এখন খুবই সীমিত পরিসরে কার্ড দিচ্ছে বিআরটিএ। দরপত্র নিয়ে যত জটিলতা নতুন করে ড্রাইভিং লাইসেন্স মুদ্রণের জন্য গত বছরের ১০ জুন দরপত্র আহ্বান করা হয়। ১৯ সেপ্টেম্বর তিনটি প্রতিষ্ঠান আবেদন জমা দেয়-এক. আইবিসিএস ও এসইএলপি; দুই. লজিক ফোরাম ও এমএসপি এবং তিন. পিএনএমবি ও বাবর। এগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন যোগ্য বিবেচিত হয় আইবিসিএস ও এসইএলপি নামের প্রতিষ্ঠানটি। দরপত্র মূল্যায়নকালেই এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা দেয় আরেক প্রতিষ্ঠান এমএসপি। এ নিয়ে অভিযোগ যাচাই শেষে সেলপ (এসইএলপি) নামের প্রতিষ্ঠানটিকে যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি। এরপর প্রস্তাবটি পাঠানো হয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে অনুমোদনের জন্য পাঠানোর কথা সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে। তার আগেই এ নিয়ে প্রভাব খাটানো এবং চাপ দেয়ার অভিযোগ আসে। তাই এ নিয়ে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির কার্যক্রমের ওপর পর্যালোচনা করেন। সেখানে চারটি অভিযোগ ও এর পরিপ্রেক্ষিতে পর্যবেক্ষণ দিয়ে মতামত পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় থেকে গত ১ ডিসেম্বর সই করা এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয় বিআরটিএ অফিসে। এর মাধ্যমে দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়াতে ‘অসামঞ্জস্যতা/অনিয়মের’ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ আকারে তুলে ধরা হয়েছে। এর ফলে নতুন করে জবাব চাওয়া হবে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির কাছে। একই সময়ে এ দরপত্র প্রক্রিয়া বাতিলের জন্য চাপ আসতে শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নতুন করে দরপত্র আহ্বান করলে আরও এক বছর পিছিয়ে যেতে হবে। কার্যাদেশ শেষে যন্ত্রপাতি আমদানিসহ মুদ্রণ প্রক্রিয়ায় যেতে মোট দেড় বছর লাগবে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণে মধ্যবর্তী সঙ্কট নিরসনের জন্য বর্তমান প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটিকে কাজ দিতে চেয়েছিল বিআরটিএ। বিদ্যমান চুক্তির অতিরিক্ত ৩০ শতাংশ তথা সাড়ে ৪ লাখ কার্ড ছাপানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে। টাইগার আইটি বিশ্ব ব্যাংকের কালো তালিকাভুক্ত এমন যুক্তিতে প্রস্তাবটি গত ২৮ আগস্ট নাকচের পর ঘটনার নাটকীয় মোড় নেয়। এদিকে মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের আগেই টাইগার আইটিকে অতিরিক্ত ৩০ শতাংশ কার্ড মুদ্রণের জন্য চিঠি দেয় বিআরটিএ। আবার এমএসপিকেও কার্ড ছাপানোর জন্য অনুরোধ করে চিঠি দেয় সংস্থাটি। এ প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দেয়া সংক্রান্ত প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে চিঠি দেয় বিআরটিএ। এর মধ্যে বিষয়টি আইনী জটিলতায় গড়ায়। ফলে থেমে যায় ওই প্রক্রিয়া। বলা হয়, এ প্রতিষ্ঠান বর্তমান দরপত্রে অংশ নিয়েছে। আবার একই প্রতিষ্ঠান ২০১৬ সালের দরপত্রে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন হয়েছিল। সব মিলে প্রতিষ্ঠানটিকে বিনা দরপত্রে কাজ দেয়ার প্রক্রিয়া ঝুলে যায়। জানা গেছে, নতুন করে দরপত্র আহ্বান কিংবা বর্তমান পদ্ধতিতে কালক্ষেপণ হলে জরুরী বিবেচনায় বিনা দরপত্রে কার্ড মুদ্রণের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে। সেটি হতে পারে সেনাবাহিনীর অধীন বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) মাধ্যমে। বিএমটিএফের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাওয়া গেছে গত ১০ অক্টোবর। এরও আগে বিআরটিএ ও বিএমটিএফের মধ্যে গত ১০ ও ১১ জুন এ সংক্রান্ত চিঠি চালাচালি হয়। বিএমটিএফের সর্বশেষ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, প্রতিটি স্মার্টকার্ড ৪ দশমিক ২৫ ডলারে সরবরাহ করতে তারা প্রস্তুত। সরকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরাসরি পদ্ধতিতে বিএমটিএফের মাধ্যমে লাইসেন্স সরবরাহ করার প্রস্তাবটি মাথায় রাখছে বিআরটিএ। গাড়ি বনাম লাইসেন্স বর্তমানে ৪৩ লাখ এক হাজার ৬১০টি গাড়ি রয়েছে। এর বিপরীতে লাইসেন্স রয়েছে ৩৬ লাখ ২ হাজার ৪১৯টি। বাস রয়েছে ৪৯ হাজার ২৭২টি, কার্গোভ্যান ৯ হাজার ৭০১টি, কাভার্ডভ্যান ৩৩ হাজার ৮৪৬টি, বিশেষ বাহন ১১ হাজার ৪৮৬টি, ট্যাঙ্কার ৫ হাজার ৭৩২টি, ট্রাক ১ লাখ ৫১ হাজার ৭৮৪টি। এর বিপরীতে ভারি লাইসেন্স রয়েছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৭২০টি। ২ লাখ ৬১ হাজার ৮২১ গাড়ির তুলনায় এ লাইসেন্স কম। এবার হালকা বাহনের মধ্যে রয়েছে এ্যাম্বুলেন্স, হিউম্যান হলার, জীপ, মাইক্রোবাস, পিকআপ, ট্যাক্সিক্যাব মিলে রয়েছে ৭ লাখ ২৬ হাজার ৪৮টি। এর বিপরীতে লাইসেন্স রয়েছে ১৯ লাখ ২১ হাজার ৯২৮টি। এবার মাঝারি আকারের গাড়ি ডেলিভারিভ্যান, মিনিবাস, ট্রাক্টর মিলে ৫৯ হাজার ৫৫৪টি গাড়ির জন্য লাইসেন্স রয়েছে ৯৫ হাজার ৫০৩টি। এ ছাড়া অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ৭০ হাজার গাড়ির বিপরীতে মাত্র ৯২১টি লাইসেন্স আছে। থ্রি হুইলার ৩ লাখ ১২ হাজার ৪৬০টি গাড়ির বিপরীতে লাইসেন্স আছে ৬৮ হাজার ৬৪৪টি। আর দুই চাকার বাহন মোটরসাইকেল আছে ২৭ লাখ ৮৬ হাজার ৯৫৪টি। এর বিপরীতে লাইসেন্স আছে ১৩ লাখ ৬০ হাজার ৭০৩টি। পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মোটরসাইকেলের অধিকাংশই লাইসেন্সবিহীন। এখন লাইসেন্স করতে গেলেও লার্নার কার্ড, পরীক্ষা ও স্মার্টকার্ড পেতে বড় বিড়ম্বনায় পড়ছেন আবেদনকারীরা। এ কারণে বিদেশ যাওয়া বা সরকারী চাকরি পেতেও অসুবিধা হচ্ছে। এদিকে রাজধানী ঢাকায় বিআরটিএ লাইসেন্সপ্রাপ্ত যানবাহনের সংখ্যা ১৫ লাখ ২৮ হাজার ৯১৭টি। ২০ লাখ আবেদনের কি হবে এদিকে সম্প্রতি বিআরটিএকে দেয়া টাইগার আইটির চিঠিতে বলা হয়েছে, তারা ১৫ লাখ লাইসেন্স সরবরাহের কাজ পেয়েছিল। এরই মধ্যে ১৩ লাখ ৮৪ হাজার লাইসেন্স সরবরাহ করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, বাকি এক লাখ ১৬ হাজার লাইসেন্স যথাসম্ভব দ্রুত সরবরাহ করা হবে। চুক্তি নবায়ন করা না হলে টাইগার আইটি লাইসেন্স মুদ্রণের কাজ করবে না। টাইগার আইটির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, ১৫ লাখ লাইসেন্স মুদ্রণ ও সরবরাহের কথা ছিল ২০২২ সালের মধ্যে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের তিন বছর আগে প্রায় ২০ লাখ লাইসেন্সের আবেদন জমা পড়েছে। সূত্রের খবর, ২০২২ সাল পর্যন্ত ১৫ লাখ ডিজিটাল লাইসেন্স সরবরাহ করতে হবে বলে যে ধারণা বিআরটিএ করেছিল, তা ভুল। সমীক্ষা ছাড়াই কার্যাদেশ দেয়ার খেসারত দিতে হচ্ছে। ডিজিটাল লাইসেন্স সরবরাহের দরপত্র প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ১৫০ কোটি টাকার এ প্রকল্পের আওতায় আগামী পাঁচ বছরে ৩৫ লাখ লাইসেন্স সরবরাহ করা হবে। টাইগার আইটির প্রকল্প পরিচালক এ বি এম মহিউদ্দিন বলেছেন, চুক্তি অনুযায়ী ২০২২ সালের মধ্যে তাদের ১৫ লাখ লাইসেন্স সরবরাহের কথা ছিল। কিন্তু চাহিদার কারণে সময়ের তুলনায় বেশি লাইসেন্স মুদ্রণ করে দিতে হয়েছে তাদের। চার বার চিঠি দিয়ে বিষয়টি বিআরটিএকে জানানো হয়। কিন্তু তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। তাই কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়া হচ্ছে।
×