ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আরও মাইলফলকের সামনে মুশফিক

প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ১৩ জানুয়ারি ২০২০

আরও মাইলফলকের সামনে মুশফিক

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) পয়মন্ত হয়ে এসেছে মুশফিকুর রহিমের জন্য। এবারের আসরে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে বিপিএল ইতিহাসে দুই হাজার রানের মাইলফলক পেরিয়েছেন। সর্বশেষ দুই ম্যাচে তামিম ইকবালের ব্যর্থতায় এবার বিপিএল ইতিহাসে রানের দিক থেকে সবার ওপরে উঠে গেছেন মুশফিক। মুশফিকের রান এখন ২২৩২ আর তামিমের ২২১৮। এছাড়া এবার ক্যারিয়ারসেরা টি২০ ইনিংসও খেলেছেন তিনি। কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে শুক্রবার অপরাজিত ৯৮ রান করেন তিনি খুলনা টাইগার্সের হয়ে। বিপিএলের এক আসরে তৃতীয়বার চার শতাধিক রান করার একমাত্র কৃতিত্বও দেখিয়েছেন এর মাধ্যমে। এখন এক আসরে বাংলাদেশী কোন ব্যাটসম্যান হিসেবে সর্বাধিক রান করার হাতছানি। তামিম ইকবাল ২০১৬ সালের বিপিএলে করেছিলেন ৪৭৬ রান। ইতোমধ্যেই নিজেকে পূর্বের যে কোন আসরের পারফর্মেন্সে ছাড়িয়ে যাওয়া মুশফিকের রান এখন পর্যন্ত চলতি আসরে ৪৪৯। ২৮ রান করতে পারলেই তিনি তামিমের রেকর্ড পেছনে ফেলবেন। সবধরনের টি২০ ক্রিকেটে ১৮৮ ম্যাচ খেলে ৩৯৪২ রান করেছেন মুশফিক। আর মাত্র ৫৮ রান করতে পারলেই তামিম ও সাকিব আল হাসানের পর তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে টি২০ ফরমেটে তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ৪ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করবেন তিনি। নির্দিষ্ট একটি ভেন্যুতে ভারতের বিরাট কোহলির পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ২ হাজার রান করতে আর ১১ রান প্রয়োজন তার। এবার বঙ্গবন্ধু বিপিএলে জমে উঠেছিল জাতীয় দলের দুই সতীর্থ তামিম-মুশফিকের রান করার লড়াই। ব্যাট হাতে সার্বিকভাবে যে কোন নৈপুণ্যেই তামিমের পর ছিল মুশফিকের অবস্থান। তবে রানের ব্যবধানে খুব কাছাকাছিই ছিলেন দু’জন। তামিমের বেশ উত্থান-পতনে কেটেছে এবারের বিপিএল। তবে পরের দিকে তিনি বেশ ধারাবাহিক হয়ে যান। রানে ফেরার জন্য মারমুখী ভূমিকায় না থেকে ধীরস্থিরভাবে ব্যাট চালিয়েছেন। কিন্তু মুশফিক ছিলেন দুর্দান্ত। সুযোগও এসেছিল প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিপিএল ইতিহাসে ২ হাজার রান পূর্ণ করার। কিন্তু তামিমের রানে ফেরার কারণে সেটি আর হয়নি, মুশফিকের আগে তিনিই ছুঁয়ে ফেলেন সেই মাইলফলক। তবে খুব অপেক্ষা করতে হয়নি মুশফিককে। তিনিও ২ হাজার রান পূর্ণ করেন। আর এখন তামিমের সঙ্গে চলছে তার রান করায় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। সেই লড়াইয়ে তামিমকে ইতোমধ্যেই পেছনে ফেলেছেন মুশফিক। ঢাকা প্লাটুনের হয়ে খেলছেন তামিম আর খুলনা টাইগার্সের হয়ে মুশফিক। সর্বশেষ দুই ম্যাচে তামিম করতে পেরেছেন ৩৪ ও ১ রান। সেখানে মুশফিক শেষ দুই ম্যাচে খেলেছেন অপরাজিত ৯৮ ও ১৮ রানের ইনিংস। এতেই তিনি বিপিএল রেকর্ডে সর্বাধিক রানের মালিক হয়ে গেছেন। মুশফিক ৮৩ ম্যাচ খেলেছেন এই আসরে। ৭৯ ইনিংস ব্যাট করে ৩৭.২০ গড় ও ১৩৩.৮৯ স্ট্রাইকরেটে করেছেন ২২৩২ রান। আর দ্বিতীয় অবস্থানে চলে যাওয়া তামিম ৬৯ ম্যাচের ৬৮ ইনিংসে ৩৬.৯৬ গড় ও ১২১.৪৬ স্ট্রাইকরেটে করেছেন ২২১৮ রান। মোট রান, গড়, স্ট্রাইকরেটে তামিমকে পেছনে ফেললেও কয়েকটি জায়গায় এখনও মুশফিক পিছিয়ে। তামিম ১ সেঞ্চুরি ও ১৯ হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। আছে ২২৬টি চার ও ৭১ ছক্কা। সেখানে মুশফিক ১৫ হাফ সেঞ্চুরি হাঁকাতে পেরেছেন, আছে ১৮৯টি চার ও তামিমের সমান ৭১টি ছক্কা। বিপিএলে যে কোন এক আসরে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক রান করার রেকর্ড দুটিই তামিমের দখলে। তিনি ২০১৬ সালের বিপিএলে চট্টগ্রাম ভাইকিংসের হয়ে করেছিলেন ১৩ ম্যাচে ৪৭৬ এবং গত বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে ১৪ ম্যাচে করেন ৪৬৭ রান। মুশফিক এর আগে ২০১২ বিপিএলে সিলেট রয়্যালসের হয়ে ১৩ ম্যাচে ৪৪০ ও গত আসরে চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে ১৩ ম্যাচে ৪২৬ রান করেছেন। এবার ১২ ম্যাচে ৪৪৯ রান করে নিজের রেকর্ডকেই পেছনে ফেলেছেন মুশফিক। তবে এক আসরে সর্বাধিক রানের যে বাংলাদেশী রেকর্ড আছে তামিমের তা পেছনে ফেলতে আরও ২৮ রান প্রয়োজন মুশফিকের। আর রাইলি রুশোর পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এক আসরে ৫০০ রান করার জন্য তার প্রয়োজন মাত্র ৫১ রানের। রুশো গত আসরে ৫৫৮ রান করেছিলেন রংপুর রাইডার্সের জার্সিতে। কিন্তু আর কোন ব্যাটসম্যানই বিপিএলের ৩ আসরে চার শতাধিক রান করতে পারেননি। মুশফিক প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে তা করে দেখিয়েছেন এবারও ৪৪৯ রান করে। অবশ্য ১১ ম্যাচে ৩৯৩ রান করা তামিমও সেই রেকর্ড গড়ার কাছাকাছি এখন। অধিনায়ক হিসেবে বিপিএলের এক আসরে সর্বাধিক ৪৭৬ রান করার রেকর্ডও তামিমের দখলে। এবার সেটিকেও হুমকির মুখে ফেলেছেন ৪৪৯ রান করা খুলনার অধিনায়ক মুশফিক। এছাড়া আরও দুটি মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এখন পর্যন্ত সব পর্যায়ের ৮২ টি২০ খেলে ১৯৮৯ রান করেছেন তিনি। আর ১১ রান করতে পারলেই দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে নির্দিষ্ট এক ভেন্যুতে ২ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করবেন মুশফিক। একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে সেই কীর্তি আছে ভারতের কোহলির। তিনি ব্যাঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ৮৯ টি২০ খেলে করেছেন ২৭৬২ রান। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স একই ভেন্যুতে ৬২ টি২০তে করেছেন ১৯৯১ রান। সব পর্যায়ের টি২০ ক্রিকেটে ১৮৮ ম্যাচ খেলা মুশফিক ২৮.৫৬ গড়ে ২৪ ফিফটিতে করেছেন ৩৯৪২ রান। তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে টি২০ ক্রিকেটে ৪ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁতে মাত্র ৫৮ রান দরকার তার। তামিম ২০২ টি২০ খেলে ৫৬১৮ রান করে বাংলাদেশের পক্ষে সবার শীর্ষে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সাকিব সব পর্যায়ে মোট ৩০৮ টি২০ খেলে করেছেন ৪৯৭০ রান। এরপরই মুশফিক।
×