স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সমাজের অধিপতি হোক, রাজনীতিবিদ হোক কিংবা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হোক অন্যায় করলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। রবিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। নারকোটিক্স ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এনআইএমএস) ওয়েবসাইট ও মাদকবিরোধী বিজ্ঞাপন উদ্বোধন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
স্বরাষ্টমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শুধু মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেননি, পাশাপাশি তিনি সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। যারা মাদক বিক্রি করে অন্যায়ভাবে টাকা উপার্জন করে তারা সেটি অন্যায়ভাবেই ব্যয় করে। অনেকে নির্বাচন করে জনপ্রতিনিধি সেজে নিজেকে জাহির করতে চান। তবে আমরা কাউকেই ছাড় দিচ্ছি না। মাদকবিরোধী অভিযানের গতি কমে গেছে কিনা জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, অভিযান মোটেও স্তিমিত হয়নি। মাদকের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া অভিযান এখনও বন্ধ হয়নি। মাদকের গডফাদারদের ধরতে এখনও অভিযান অব্যাহত আছে। গত দুই বছরে এসব গডফাদারদের অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর যারা এখনও পালিয়ে বা গা ঢাকা দিয়ে আছে। সেসব যেসকল গডফাদারদের খোঁজা হচ্ছে। যেখানেই খবর পাওয়া যাবে সেখান থেকেই তাদের পাকড়াও করা হবে। তিনি জানান, যারা মাদক ব্যবসা করে, মাদক ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করে, বড় বড় মাদক সম্রাটদের সবাইকেই ধরা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ডসহ সব বাহিনী কাজ করছে। দেশে মাদকের চাহিদা কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, চাহিদা হ্রাস পেলে মাদকের সাপ্লাই হ্রাস পাবে। এরই অংশ হিসেবে আজকের এ অনুষ্ঠান। ধূমপানের বিরুদ্ধে আমরা রাস্তা নেমে প্রচার চালিয়েছিলাম। আমাদের প্রচেষ্টার কারণে আজ ধূমপান অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। আজ কেউ প্রকাশ্যে ধূমপান করে না, করলে আড়ালে গিয়ে করে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক তৈরি হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল জানান, একটা ছোট জায়গায় (টেকনাফ-উখিয়া) ১১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করে। তাদের ম্যানেজ করা অনেক কঠিন। তারপরও আমরা বন্ধু দেশের সহায়তায় কাজটি করে যাচ্ছি। আমার জানা মতে, সেখানে মাদক তৈরি হয় না। তবে তাদের কেউ কেউ এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। আমরা সবাইকে নজরদারিতে রেখেছি। যারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, আমাদের দেশে মাদক তৈরি হয় না। পার্শ্ববর্তী দেশের মাধ্যমে আমরা ভিকটিম। সীমান্তে অনেক দুর্গম জায়গা আছে। সেসব স্থানে নজরদারির জন্য আমরা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) হেলিকপ্টার দিয়েছি। বর্ডারে সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে সেসব জায়গায় টহল বাড়ানোর জন্য। পাশাপাশি কোস্টগার্ডকেও শক্তিশালী করা হয়েছে। আমরা কাজ করে যাচ্ছি, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা সজাগ রয়েছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা যেভাবে জঙ্গী-সন্ত্রাস কন্ট্রোলে আনতে পেরেছি, একইভাবে মাদককেও কন্ট্রোলে আনতে পারব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাদকের চাহিদা কমাতে আমরা কাজ করছি। যারা মাদকাসক্ত, তাদের আলোর পথে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কোরিয়া সরকার আমাদের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি মাদক প্রতিরোধেও সহযোগিতা করছে। ২০৩০ ও ২০৪১ সালের মধ্যে যাতে তরুণরা সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে পায় সেই লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, মাদক প্রতিরোধে আমরা তিন পর্বে কাজ শুরু করেছি। সাপ্লাই হ্রাস, ডিমান্ড হ্রাস ও মাদকাসক্তদের চিকিৎসা দিয়ে পুনর্বাসন করা। ডিমান্ড হ্রাসের জন্য স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল প্রতিষ্ঠানে ক্যাম্পেইন করা হচ্ছে।