ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ধর্ষণ মহামারী আকার ধারণ করেছে, যা উদ্বেগের

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ১২ জানুয়ারি ২০২০

ধর্ষণ মহামারী আকার ধারণ করেছে, যা উদ্বেগের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে নারীদের সম্ভ্রমহানি মহামারী আকার ধারণ করেছে। নারী ও শিশুরা সম্ভ্রমহীন হলেও সেসব বিষয়ে সরকারের মাথা ব্যথা নেই বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, দেশের জেলায় জেলায় যে নারী ধর্ষণ হচ্ছে, তাতে বোঝা যায় দেশে ধর্ষণ মহামারী আকার ধারণ করেছে। এটা কেন? এতে বোঝা যায় আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা কমেছে। এটা আমাদের জন্য গভীর উদ্বেগের। সম্প্রতি রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হওয়া ও সারাদেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে সরকারবিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য রাখেন। দেশের মানুষ নানা শ্রেণী-পেশা অনুযায়ী নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করলেও সরকার তার নিজ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ এমন মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধু সরকারের সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, তারা আইনের শাসন নিশ্চিত করতে পারেনি। এ কারণে দেশব্যাপী নারী নির্যাতন বেড়ে গেছে, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা হারিয়ে গেছে। জাতীয় সংসদ থাকলেও তা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। জনমানুষের কল্যাণে সংসদে কথা বলার কথা থাকলেও সেখানে তা বলা হচ্ছে না। প্রকৃত অর্থেই দেশের গণতন্ত্র হারিয়ে গেছে। নারী নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়ে সাবেক এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, যে কোন মূল্যে সরকারকে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ বন্ধ করতে হবে। দেশের সংবিধানে বহু দলমতের কথা বলা আছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে বলা হলেও বর্তমান সরকার তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ জন্য সকলকে মিলে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ড. কামাল আরও বলেন, স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পার হতে চললেও আইনের শাসন পেতে শীতের সকালে আমাদের রাজপথে নেমে বিচার চাইতে হচ্ছে। এটি জাতির জন্য একটি লজ্জাজনক ঘটনা, নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ কারণে সারাদেশে ধর্ষণ, নির্যাতন মহামারী আকার ধারণ করেছে। দ্রুত দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নতুবা সরকারকে ব্যর্থ হিসেবে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে। যোগ্য বক্তিকে এ আসনে বসানো হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মইন খান বলেন, দেশে নারী নির্যাতন ও নারী সম্ভ্রমের ঘটনা রেকর্ড আকার ধারণ করছে। প্রতিবছর এ সংখ্যা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার নারীদের প্রতি সম্মান দেয় না বলে গণতন্ত্রের আপোসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ষড়যন্ত্র করে জেলখানায় আটক করে রেখেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে মজনু নামে এক যুবকের গ্রেফতার হওয়া প্রসঙ্গে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, এই ঘটনা নিয়ে সরকার জজ মিয়ার কাহিনী তৈরির চেষ্টা করছে। ধর্ষণের অপরাধে একজন দুর্বল, রোগা ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তার পক্ষে একজন মেয়েকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা অস্বাভাবিক। ৫ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হন। ৮ জানুয়ারি ওই ঘটনায় মজনু নামে একজনকে গ্রেফতারের কথা জানায় র‌্যাব। র‌্যাব জানায়, গ্রেফতার মজনু একজন সিরিয়াল রেপিস্ট। সে মাদকাসক্ত। বাড়ি হাতিয়ায়। সে এর আগেও ওই একই এলাকায় ভিক্ষুক ও প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণ করেছে। ধর্ষণের শিকার ছাত্রী মজনুর ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করেছেন বলেও জানানো হয়। মান্না বলেন, একজন রোগা ব্যক্তি একজন মেয়েকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করতে পারে না। তাকে রোধ করা একজন মেয়ের পক্ষে অসম্ভব নয়। অথচ সেই রোগা ব্যক্তিকে ধর্ষক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শনাক্ত করেছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগের একজন শিক্ষক জবানবন্দী দিয়েছেন। অথচ অন্য কোন দলের শিক্ষক, ডাকসু ভিপিসহ কাউকে ধর্ষিতা ছাত্রীর সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। মান্না বলেন, আমরা কেউ নিরাপদে নেই, সরকার কোন নাটক কোন সময় ঘটাচ্ছে তা একটি চিন্তার বিষয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রীর ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও ছাত্রলীগ কখনও এগিয়ে আসে না, অথচ ডাকসু ভিপি নূরকে মারধরের পর সেই ছাত্রলীগ সকাল বেলা ধর্ষণের প্রতিবাদে মিছিল বের করে। ছাত্র রাজনীতিকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। ভিপি নূরের ওপর হামলার ঘটনা ধামাচাপা দিতে নতুন করে জজ মিয়ার ঘটনা তৈরি করার চেষ্টা করা হলে আমরা তা মেনে নেব না। তিনি বলেন, সরকার অর্থনীতির রোল মডেল দাবি করলেও পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে আগের তুলনায় আটগুণ ব্যয় বেড়েছে। কয়েকটি ফ্লাইওভার বানিয়ে উন্নয়নের জোয়ার তোলা হলেও ঢাকা শহরে যানজট আরও বাড়ানো হয়েছে। মেগা প্রকল্পের নামে মেগা লুট করা হচ্ছে। নতুন করে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে মান্না বলেন, সিটি নির্বাচনকে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়া হচ্ছে। আমরা এ ভোট করছি ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, নারীর সম্ভ্রম রক্ষা করতে, খুন-গুম চিরতরে রক্ষা করতে। আপনারা (সরকার) যা করেছেন ভাল করেছেন, এখন বন্ধ করে ভাল হয়ে যান। আগামী ৩০ জানুয়ারি যদি নতুন করে কোন ষড়যন্ত্র করেন, তবে সকলে দলবন্ধ হয়ে ৩১ জানুয়ারি দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিকল্পধারার চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ, এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতারা।
×