ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের জালিয়াত চক্র শনাক্ত, হোতাকে খুঁজছে পুলিশ

প্রকাশিত: ১১:২৭, ১২ জানুয়ারি ২০২০

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের জালিয়াত চক্র শনাক্ত, হোতাকে খুঁজছে পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুধু জালিয়াতি করে গত ১৬ বছরে তারা শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। ভুয়া সঞ্চয়পত্র ব্যাংকে জমা রেখে তারা ঋণ নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। ব্যাংক ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের এই সিন্ডিকেট বারবার একই কায়দায় বড় বড় জালিয়াতি করার পরও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। তাদের জালিয়াতি ধরতে সিআইডির মতো সংস্থার সময় লেগেছে এক যুগেরও বেশি। শেষ পর্যন্ত সিআইডির বিশেষ টিম গত ৭ জানুয়ারি তাদের গ্রেফতারের পর বেরিয়ে এসেছে জালিয়াতির চাঞ্চল্যকর কাহিনী। সিআইডি প্রাথমিকপর্যায়ে নিশ্চিত হয়েছে একুশটি ভুয়া সঞ্চয়পত্র জমা দিয়ে দুটি বেসরকারী ব্যাংক থেকে ৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। বাকি টাকার উৎস কোথায় তারও সন্ধান চলছে। শনিবার সিআইডি সদর দফতরে এই তদন্ত সংস্থার ইকোনমিক ক্রাইম স্কোয়াডের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। আটক ব্যক্তিরা হলো- এইচ এম এ বারিক ওরফে বাদল ওরফে বাদল হাওলাদার ওরফে মোস্তাক আহমেদ ও তার স্ত্রী মরশিদা আফরীন। আটক দম্পতিকে দুদিনের রিমান্ড শেষে আদালতে পাঠানো হয়েছে। সিআইডি জানায়, আটক দম্পতির গুলশানে শত কোটি টাকার বাড়ি ছাড়াও ধানম-ি, বনানী উত্তরা ও মিরপুরে আরও কয়েকটি ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই দম্পতির তিন কন্যার সবাই দেশের বাইরে। তাদের কোন সম্পদ আছে কিনা তারও সন্ধান চলছে। এই চক্রের জালিয়াতির ঘটনায় দুদক সাতটি মামলা দায়ের করেছে, যা এখন তদন্ত করছে সিআইডি। সিআইডি কর্মকর্তা ফারুক হোসেন বলেন-২০০৪ সাল থেকে এই প্রতারকরা ২১ ভুয়া সঞ্চয়পত্র বানিয়ে এর বিপরীতে এবি ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে ৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাত করে। এ ঘটনার সঙ্গে এবি ব্যাংকের ধানম-ি শাখার তৎকালীন ম্যানেজার জড়িত ছিল। এই দম্পতি জালিয়াত চক্রের সদস্য। তারা জালিয়াতি করে ঢাকায় একাধিক বাড়ি ও অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছে। তাদের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে জালিয়াতি করে উপার্জিত দুই কোটি টাকার সন্ধান মিলছে। তাদের নামে গুলশান-২ এ প্রায় একশ’ কোটি টাকা মূল্যের একটি নয় তলা বাড়ি একাধিক ফ্ল্যাট, গাড়ি ও জমির তথ্য পাওয়া গেছে। ফারুক হোসেন জানান, ২০০৪ সালে জালিয়াতি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় ব্যাংকটি মামলা করে। তবে তখন থেকে পালিয়েছিল বাদল হাওলাদার। ওই মামলায় তার সাজাও হয়েছে। সে সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া ও ভারতে পালিয়েছিল। ’১১ সালে গোপনে দেশে এসে আবার জালিয়াতি শুরু করে। ১৬ বছর ধরে পলাতক বাদলকে খুঁজছিল পুলিশ। ওই মামলায় এবি ব্যাংকের ধানম-ি ব্রাঞ্চের তৎকালীন ম্যানেজার আসিরুল হককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ২০০৬ সালে সে তিন মাস কারাভোগ করে। পরে জামিনে মুক্তির পর হৃদরোগে মারা যায়। এই জালিয়াতির সঙ্গে ব্যাংকের আর কোন কর্মকর্তা জড়িত আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখছে সিআইডি। ব্যাংক থেকে ভুয়া সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে অর্থ আত্মসাতের এ ঘটনায় দুদক ২০০৪, ’১১ ও ’১৬ সালে গুলশান ধানম-ি উত্তরা পশ্চিম ও মোহাম্মদপুর থানায় সাতটি মামলা করে। মামলাগুলো সিআইডি তদন্ত করছে। এদিকে রিমান্ডে থাকাবস্থায় বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে আটক দম্পতি। তারা সিআইডিকে জানিয়েছে, চক্রটির হোতা এক শিল্পপতি। তার নাম তানলীন মাশফু ববি। তিনি ঢাকা স্টক একচেঞ্জের বড় ব্যবসায়ী। রাজধানীর দিলু রোডে তার বাসা। আটক বাদল হাওলাদার জানিয়েছে এক সময় ববির অফিসে চাকরি করত সে। পরে ববির মদতেই জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ঋণ তোলার কৌশল শিখে নেয় সে। জানা গেছে, ববিকে গ্রেফতারের জোর চেষ্টা চালাচ্ছে সিআইডি। ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্জিত টাকায় ব্যবসা করে ববি শিল্পপতি হয়েছে। তার সম্পর্কেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে সিআইডি। এবি ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক ছাড়া আর কোন ব্যাংক থেকে এই চক্র জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রশ্নের উত্তরে ফারুক হোসেন জানান, এ দুটো ব্যাংক সম্পর্কে প্রাথমিক নিশ্চিত হওয়া গেছে। আটক দম্পতিকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও যেসব তথ্য দিয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
×