ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৭৪ দেশের দুই শতাধিক সিনেমা, দেখার দারুণ সুযোগ

প্রকাশিত: ১১:২৫, ১২ জানুয়ারি ২০২০

৭৪ দেশের দুই শতাধিক সিনেমা, দেখার দারুণ সুযোগ

মোরসালিন মিজান ॥ সত্যি যদি দেশ-বিদেশের সিনেমা সম্পর্কে জানতে চান, যদি দেখতে আগ্রহী হন সমকালীন চলচ্চিত্র, তবে প্রস্তুত হয়ে যান। আপনার শহর ঢাকায় শুরু হয়ে গেছে বড়সড়ো উৎসব। শনিবার থেকে শুরু হওয়া উৎসবে জাপান, আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, চীন, ফ্রান্স, প্যালেস্টাইন, ভারত, ইরান, লেবানন, লুক্সেমবার্গ, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, রাশিয়া, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, সিরিয়া, আরব-আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ ৭৪ দেশ অংশ নিয়েছে। আর মোট ছবি ২২০টি। ১১ দিনের লম্বা আয়োজনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে সাত সাতটি ভেন্যু। যে কোন একটিতে ঢুঁ মারলেই হবে। সিনেমা গোল্লায় গেছে, ফিল্ম বলতে দেশে কিছু নেই ইত্যাদি আলোচনা আছে। থাকবেও। কিন্তু এত এত ছবি দেখার সুযোগ বেশি দিন থাকবে না। বিশেষ এ সুযোগ করে দিয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। এবার পর্দা উঠল ১৮তম আসরের। উৎসবের এবারের স্লোগান: ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’। বিকেলে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত নির্মাতাদের উপস্থিতিতে উৎসবের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। আয়োজনটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক পরিচয়ে মঞ্চে ছিলেন একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল। প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী চলচ্চিত্রের প্রতি তার নিজের প্রেমের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেন। দর্শকের অবস্থান থেকে তিনি বলেন, আমি ছবি দেখি। ছবি দেখতে ভালবাসি। দেশী বিদেশী কয়েকটি চলচ্চিত্রের নামও উল্লেখ করেন তিনি। এই যেমন ‘মুখ ও মুখোশ’। ‘জীবন থেকে নেয়া’। সাম্প্রতিক সময়ে উড়োজাহাজে বসে দেখা ‘শঙ্খচিল’ সিনেমাটির গল্পের প্রশংসা করেন তিনি। ‘টাইটানিক’সহ বেশ কয়েকটি বিদেশী চলচ্চিত্র দেখার কথাও জানান। ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব প্রচুর মানসম্পন্ন ছবি দেখার সুযোগ করে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর পাশাপাশি আমাদের ফিল্মমেকাররা বিশ্বের অন্য ফিল্মমেকারদের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন। পরস্পরের মধ্যে চিন্তার আদান প্রদান ঘটানো সম্ভব হবে। মুজিববর্ষ উদ্যাপনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই প্রথম বিএফডিসি প্রতিষ্ঠা করেন। মহান নেতার একটি বায়োপিক নির্মাণ করা হচ্ছে। মুক্তি পাওয়ার পর আপনারা সবাই ছবিটি দেখবেন। অবশ্য মূল আয়োজক আহমেদ মুজতবা জামালের কণ্ঠে কিছুটা ক্ষেদ লক্ষ্য করা যায়। উৎসব আয়োজনকে যুদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি। বলেন, প্রতিবার উৎসব করাটাই আমার কাছে একটা যুদ্ধ। ১৯৯২ সালে এ যুদ্ধ শুরু করেছিলাম। এখনও টিকে আছি। কথা রাখতেই উৎসবটি আয়োজন করতে হয়। এ অবস্থায়ও ব্যাপ্তি এবং মান বিবেচনায় নিজের উৎসবকে এশিয়ার অন্যতম বলে দাবি করেন তিনি। অধিকাংশ চলচ্চিত্র বিনা টিকেটে দেখা যাবে জানিয়ে সবাইকে সুযোগটি গ্রহণের আমন্ত্রণ জানান তিনি। উদ্বোধনী দিন প্রদর্শিত হয় চলচ্চিত্র ‘উইন্ডো টু দ্য সি’। স্পেন ও গ্রিসের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন মিগুয়েল এ্যাঞ্জেল জিমেনেজ। তবে এবারও ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সঙ্গে দেশের চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনয় শিল্পী, কলাকুশলী বা ফিল্ম ক্রিটিকদের এক ধরনের দূরত্ব লক্ষ্য করা গেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তেমন কাউকে দেখা যায়নি। সবেধন নীলমনি হয়ে এসেছিলেন দুই বাংলার খ্যাতিমান নায়ক ফেরদৌস। কিন্তু এদিন দর্শক সারিতেই বসে কাটাতে হয়েছে তাকে। আয়োজকের বিরুদ্ধে একলা চলো নীতির এ অভিযোগ অনেক পুরনো। অভিযোগটি এবারের উৎসবের বেলায় প্রযোজ্য হবে বলেই প্রথম দিন মনে হয়েছে। একই কারণে আয়োজকের ‘যুদ্ধ’ শেষ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সে যাই হোক, ছবি দেখতে কিন্তু কোন বাধা নেই। প্রধান দুটি ভেন্যু শাহবাগ এলাকায় অবস্থিত। একটি সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তন। অন্যটি জাতীয় জাদুঘর। জাদুঘরের দুটি মিলনায়তনে চলছে প্রদর্শনী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে ও পরে ভেন্যু দুটি ঘুরে দেখা যায়, বরেণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রতিকৃতি দিয়ে সাজানো হয়েছে গোটা এলাকা। জাতীয় গণগ্রন্থাগারে উৎসব দফতর খোলা হয়েছে। তবে অধিকাংশ বুথ শূন্য পড়ে ছিল। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়ার মতো কাউকে পাওয়া যায়নি। অন্য ভেন্যুগুলোর মধ্যে রয়েছে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ও নৃত্যশালা মিলনায়তন। আলিয়ঁস ফ্রঁসেস মিলনায়তন। মধুমিতা সিনেমা হল ও বসুন্ধরা সিটি স্টার সিনেপ্লেক্স। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন, গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন, মধুমিতা সিনেমা হল ও স্টার সিনেপ্লেক্সে দর্শনীর বিনিময়ে ছবি দেখা যাবে। বাকি ভেন্যুগুলোতে দেখা যাবে বিনা খরচে। এছাড়াও, জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন ও কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে বিনা দর্শনীতে ছবিতে দেখতে পারবেন। এ দুটি টিকিটের দাম ধরা হয়েছে মাত্র ৫০ টাকা। এদিকে, এবারের উৎসবে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৯৫জন প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন বলে জানা যায়। তাদের কেউ নিজেদের নির্মিত সিমেনা নিয়ে এসেছেন। কেউ এসেছেন পেপার পড়তে। অন্য সময় চলবে গল্প আড্ডা। আয়োজকরা জানান, উৎসবের ২২০টির মধ্যে পূর্ণদৈর্ঘ্য (৭০ মিনিটের বেশি) চলচ্চিত্রের সংখ্যা ১১৭টি। স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন চলচ্চিত্রের সংখ্যা ১০৩টি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র থাকছে ২৬টি। এগুলোর ১৮টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন এবং ৮টি পূর্ণদৈর্ঘ্য। চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর পাশাপাশি চলবে সেমিনার। রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি আয়োজিত উৎসব চলবে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।
×