ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ দিকে নির্বাচন বর্জন করতে পারে বিএনপি

প্রকাশিত: ১১:১৬, ১২ জানুয়ারি ২০২০

শেষ দিকে নির্বাচন বর্জন করতে পারে বিএনপি

শরীফুল ইসলাম ॥ ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বিএনপি। নির্বাচনের আগেই সুষ্ঠু ভোট হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছে দলটি। এদিকে দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে কোন্ এলাকায় কি কি অনিয়ম হচ্ছে তা জানতে ঢাকা মহানগরের প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড নেতাদের কেন্দ্রে রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে। আবার কেন্দ্র থেকেও মনিটর করা হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নির্বাচনের পরিবেশ প্রতিকূল মনে করলে শেষদিকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিতে পারে বিএনপি। সূত্র মতে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলেও এ নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারবে বলে মনে করছে না বিএনপি। আর এ জন্যই দলটির সিনিয়র নেতারা বলছেন, আন্দোলন ও গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে তারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এ নির্বাচনে ভোট কারচুপির আগাম অভিযোগও করছেন তারা। আবার এ নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে দলের ভেতর মতভেদও রয়েছে। তাই দলের কোন কোন নেতা বলছেন, বিএনপির এ নির্বাচনে অংশ নেয়া নাকি জেনেশুনে বিষ পান করার মতো। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছে জানা যায়, আসন্ন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত বিএনপি থাকবে কিনা তা নিয়ে খোদ দলের ভেতরেই দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। দলটির একাংশ চাচ্ছে নির্বাচনে থাকতে। আর অপর অংশ চাচ্ছে পরাজয় বরণের চেয়ে শেষদিকে গিয়ে বর্জন করতে। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের রিপোর্ট পাওয়ার পর দলীয় হাইকমান্ডের সঙ্গে কথা বলার পর। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের নরমপন্থী সিনিয়র নেতারা চাচ্ছেন শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকতে। দুই সিটির মেয়র প্রার্থীরাও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকার পক্ষে। কিন্তু লন্ডন প্রবাসী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের কট্টরপন্থী অংশ চাচ্ছে বৈরী পরিস্থিতি মোকাবেলা করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে শোচনীয় পরাজয় বরণের চেয়ে শেষদিকে গিয়ে বর্জন করাই শ্রেয়। এ বিষয়টি নিয়ে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর মধ্যে ভেতরে ভেতরে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে শেষদিকে গিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ কোন্দিকে মোড় নেয় তার ওপর। বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তবে এ নির্বাচনে ভোট কারচুপি করলে রাজপথে দুর্বার আন্দোলন শুরু করা হবে। আর ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, আমরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে লড়াই করে যাব। বিএনপির যে অংশটি নির্বাচনে থাকার পক্ষে তাদের যুক্তি হচ্ছে- প্রতিকূল পরিবেশ সত্ত্বেও নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকলে একদিকে রাজধানীর সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে গণসংযোগ এবং অন্যদিকে ভোটের পরিবেশটা শেষ পর্যন্ত কেমন থাকে তা দেখা সম্ভব হবে। ভোটের পরিবেশ মোটামুটি সুষ্ঠু থাকলে কুমিল্লা ও সিলেটের মতো বিএনপির প্রার্থী বিজয়ীও হয়ে যেতে পারে। আর কারচুপি হলে এর প্রতিবাদে রাজপথের কর্মসূচী জোরদার করার পাশাপাশি এ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না তা প্রমাণ করা সম্ভব হবে। বিএনপির যে অংশটি নির্বাচনে থাকার বিপক্ষে তাদের যুক্তি হচ্ছে- যদি ঠিকভাবে প্রচার চালানো না যায় এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ না থাকে তাহলে পরাজয় বরণ করতে হবে। আর যদি পরাজয় বরণই করতে হয় তাহলে এ নির্বাচনে অংশ নিয়ে কি লাভ। বরং আগে থেকেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলে নির্বাচনটি প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। আর এটা করা হলে সাধারণ ভোটারও ভোট দিতে যাবে না। ফলে এ নির্বাচন নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দেবে এবং সরকারী দল আওয়ামী লীগ নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়বে। এতে রাজনৈতিকভাবে বিএনপি লাভবান হবে। নির্বাচন বর্জন করলেও বিএনপি যাতে বিভিন্ন মহলের বড় ধরনের চাপের মুখে না পড়ে সে জন্য আগে থেকেই নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, পুলিশ ও সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ করে রাখছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করে, মাঝে মাঝে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে ও বিবৃতি দিয়ে অভিযোগ করছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করতেও বাধা দেয়া হচ্ছে বলে বিএনপি অভিযোগ করেছে। বিশেষ করে ইভিএমে ভোট হলে ব্যাপক কারচুপি হবে বলেও তারা আগাম অভিযোগ করছে। তবে বিএনপির অভিযোগের জবাবে নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট করেই বলেছেÑ এ নির্বাচনে কোন ধরনের কারচুপি হবে না। যদিও বিএনপি নির্বাচন কমিশনের আশাবাদের ওপর আস্থা আনতে পারছে না।
×