ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্ব এজতেমার আখেরি মোনাজাত আজ

প্রকাশিত: ১১:১৩, ১২ জানুয়ারি ২০২০

বিশ্ব এজতেমার আখেরি মোনাজাত আজ

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু/নুরুল ইসলাম, টঙ্গী থেকে ॥ রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত ৫৫তম বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্ব। প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনে শনিবার তুরাগ তীরে সোনাবান বিবির শিল্প শহর টঙ্গীর এজতেমা ময়দানে শনিবার লাখ লাখ মুসল্লির উদ্দেশে চলে পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বয়ান। রবিবার সকাল ১০টা থেকে সাড়ে এগারোটার মধ্যে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে বলে এজতেমা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। মোনাজাতের আগে অনুষ্ঠিত হবে হেদায়তি বয়ান। তবলীগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বিদের পরামর্শের ভিত্তিতে এ পর্বে তবলীগ জামাতের মুরব্বি বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের আরবী ও বাংলায় আখেরি মোনাজাত পরিচলনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। মোনাজাতে বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ার মানুষের সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে দোয়া করা হবে। বিদেশী নিবাসের পূর্বপাশে বিশেষ মোনাজাত মঞ্চ থেকেই রবিবার সকালে এ আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করা হবে। আখেরি মোনাজাতে প্রায় ২০/২৫ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নিবেন বলে আয়োজকদের ধারণা। মাওলানা জোবায়ের অনুসারী আলেম ওলেমা কওমিপন্থী তবলীগ অনুসারীদের প্রথম পর্বের এজতেমা রবিবার শেষ হওয়ার পর ১৭ জানুয়ারি হতে দ্বিতীয় ধাপের এজতেমায় মাওলানা সা’দ কান্ধলভী অনুসারী ওয়াসেকুল ইসলামের তবলীগ অনুসারীরা অংশ নিবেন। বিশ্ব এজতেমায় আগত লাখ লাখ মুসল্লির পদভারে টঙ্গীর তুরাগ তীর মুখরিত। এজতেমার প্রথম পর্বে শিল্প নগরী টঙ্গী ইতোমধ্যেই ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে। শনিবার সকালেই টঙ্গী শহর এবং এজতেমাস্থল ও এর আশপাশ এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। ইসলামী দাওয়াতের মাধ্যমে ইমান আকিদা বিষয়ে শিক্ষা লাভ করে ইহলৌকিক ও পরলৌকিক মঙ্গল কামনার জন্য মুসল্লিরা দেশের দূর-দূরান্ত থেকে এজতেমা ময়দানে উপস্থিত হয়েছেন। শনিবারও টঙ্গী অভিমুখী বাস, ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহনে ছিল মানুষের ভিড়। রবিবার আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মানুষের এ ঢল অব্যাহত থাকবে। এবারের এজতেমার শেষ দফায় (দ্বিতীয় পর্ব) মাওলানা সা’দ কান্ধলভী অনুসারী ওয়াসেকুল ইসলামের তবলীগ অনুসারীরা অংশ নিবেন। তবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বিদের গুরুত্বপূর্ণ বয়ান ও মুসল্লিদের নফল নামাজ, তাসবিহ তাহলিল, জিকির আসগারের মধ্য দিয়ে শনিবার বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হয়েছে। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে মুসল্লিদের সুবিধার্থে শনিবার মধ্যরাত থেকে ওই এলাকায় যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে পুলিশ। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ বিধিনিষেধ বলবৎ থাকবে। এবারের বিশ্ব এজতেমা নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রায় ১২ হাজার র‌্যাব ও পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি রয়েছে সাদা পোশাকে প্রায় ৩ হাজার গোয়েন্দা সদস্য। আকাশ ও নৌপথে রয়েছে র‌্যাবের সতর্ক নজরদারি। দ্বিতীয় দিন শনিবার যারা বয়ান করলেন এজতেমার প্রথম দফার দ্বিতীয় দিন শনিবার ফজরের নামাজের পর থেকে বয়ান করেছেন ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমান। আর বাংলাদেশের মাওলানা মোঃ আব্দুল মতিন তা বাংলায় তরজমা করেন। এ সময় ইংরেজী, উর্দুসহ বিভিন্ন ভাষায় বয়ান তরজমা করা হয়। এছাড়া বাদ জোহর সৌদি আরবের মুরব্বি মাওলানা শেখ ইসমাইল, বাদ আছর মাওলানা জুহাইরুল হাসান এবং বাদ মাগরিব মাওলানা ইব্রাহিম বয়ান করেছেন বলে জানান বিশ্ব এজতেমার মুরব্বি ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান। যা বয়ান করলেন দুদিন ধরে এজতেমা মাঠে সার্বক্ষনিক ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত রয়েছেন প্রতিদিন ফজর থেকে এশা পর্যন্ত এজতেমা মাঠে ইমান, আমল, আখলাক ও দ্বীনের পথে মেহনতের ওপর আম বয়ান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শনিবার বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় দিনে দেশ বিদেশী আগত মুরব্বিগণ তবলীগের ছয় ওছুলের মধ্যে দাওয়াতে দ্বীনের মেহনতের ওপর গুরুত্বারোপ করে বয়ান করেন। বয়ানে তবলীগ মুরব্বিগণ বলেন, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে আমাকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন এবং আল্লাহ তায়ালা এটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, দুনিয়াতে যে একবার আসবে তাকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। আল্লাহ পাকের এ সিদ্ধান্তের কোন পরিবর্তন হবে না। দুনিয়া হচ্ছে ধোকার ঘর, এ দুনিয়া হচ্ছে ধোকার জীবন। মিছে এই দুনিয়ার আরাম আয়েশের কথা ভুলে গিয়ে আখেরাতের কথা চিন্তা কর। দুনিয়ার জিন্দেগি ক্ষণস্থায়ী, যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের দিল থেকে আসবাবের (সম্পদের) এক্বিন বের না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার দিলে কুদরতি এক্বিন পয়দা হবে না। সকলকে দ্বীনের জন্য মেহনত করতে হবে। আল্লাহর কাছে আমল ছাড়া এ দুনিয়ার জিন্দেগির কোন মূল্য নেই। বয়ানে আরও বলা হয়, দ্বীনের দাওয়াতের মাধ্যমে ইমান মজবুত হয়। ইমান মজবুত হলে আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর এ সম্পর্ক গড়ে উঠলে দুনিয়া ও আখেরাতে কামিয়াবি হাসিল হয়। তাশকিলের কামরায় চিল্লাভুক্ত মুসল্লি এজতেমার প্যান্ডেলের উত্তর-পশ্চিমে তাশকিলের কামরা স্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন খিত্তা থেকে বিভিন্ন মেয়াদে চিল্লায় অংশ গ্রহণেচ্ছু মুসল্লিদের এ কামরায় আনা হচ্ছে এবং তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। পরে তবলিগী মুরব্বিদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এলাকা ভাগ করে তাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় তবলিগী কাজে পাঠনো হবে। আখেরি মোনাজাত আজ সকালে এজতেমার আয়োজক কমিটির মুরব্বি ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান জানান, রবিবার সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত করার কথা রয়েছে। তবলীগ জামাতের মুরব্বি বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের আরবী ও বাংলায় এ পর্বের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করার কথা রয়েছে। ইতোপূর্বে মাওলানা জোবায়ের তবলীগের প্রয়াত বিশ্ব আমির মোঃ জোবায়রুল হাসান এবং মাওলানা সা’দের বয়ান বিশ্ব এজতেমায় আগত বাঙালীদের বাংলায় অনুবাদ করে শুনাতেন। তবলীগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বিদের পরামর্শের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এজন্য ব্যাপক প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। আরও পাঁচ মুসল্লির মৃত্যু শনিবার দুপুর পর্যন্ত বিশ্ব এজতেমায় দ্বিতীয় পর্বে যোগ দিতে আসা ৯ মুসল্লি হৃদরোগ ও বার্ধক্যজনিত কারণে এজতেমা ময়দানে মারা গেছেন। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ মনজুর রহমান জানান, শুক্রবার রাতে কুমিল্লার দেবীদ্বার থানার বিংলাবাড়ী গ্রামের তমিজ উদ্দিন (৬৫), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থানার তল্লা গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে শাহজাহান (৬৫), বরিশালের গৌরনদী থানার খালিজপুর গ্রামের আলী আজগর (৭০) ও নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার দক্ষিণ কলাবাগান গ্রামের ইউসুফ আলী মেম্বার (৪৫)। এর আগে শুক্রবার বিকেলে চরঘাট থানার বনকিশোর এলাকার আব্দুর রহমানের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক (৫০), সকালে নওগাঁর শহিদুল ইসলাম (৫৫), বৃহস্পতিবার সকালে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া এলাকার ইয়াকুব শিকদার (৮৫) এবং রাতে সিরাজগঞ্জের খোকা মিয়া (৬০) ও চট্টগ্রামের মোহাম্মদ আলী (৭০) মারা যান। চার বছর পর যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত প্রায় চার বছর বিরতি দিয়ে এবারের বিশ^ এজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনে এজতেমা ময়দানে কনের অনুপস্থিতিতে এজতেমার মূল আকর্ষণ যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা জোবায়ের ও মাওলানা সা’দ কান্ধলভী অনুসারীদের মতবিরোধের কারণে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এজতেমা ময়দানে যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে বর ও কনে পক্ষের সম্মতিতে তাদের সংশ্লিষ্ট এলাকার মসজিদে যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। এজতেমা ময়দানের শীর্ষ মুরব্বি প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, গতকাল শনিবার বাদ আসর বিশ^ এজতেমা ময়দানের মূলমঞ্চে ৬১ জোড়া যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিয়ে পরিচালনা করেন মাওলানা জোহায়েরুল হাসান। তবলীগের রেওয়াজ অনুযায়ী এজতেমার দ্বিতীয় দিন বাদ আসর বয়ান মঞ্চের পাশে বসে যৌতুকবিহীন বিয়ের আসর। কনের সম্মতিতে ও তার অনুপস্থিতিতে বর এবং কনে পক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে ওই বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বিয়েতে মোহরানা ধার্য করা হয় ‘মোহর ফাতেমী’র নিয়মানুযায়ী। এ নিয়মানুযায়ী মোহরানার পরিমাণ ধরা হয় দেড়শ’ তোলা রূপা বা উহার সমমূল্য অর্থ। বিয়ের পর নবদম্পতিদের সুখ-সমৃদ্ধিময় জীবন কামনা করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে মোনাজাতের মাধ্যমে দোয়া করা হয়। এসময় মঞ্চের আশপাশের মুসল্লিদের মাঝে খোরমা খেজুর ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়। বিদেশী মুসল্লি শনিবার দুপুর পর্যন্ত বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্বে বিশে^র ৬৯টি দেশের প্রায় এক হাজার ৯শ’ বিদেশী মুসল্লি অংশ নেন। তাছাড়া এ পর্বে দেশের ৬৪টি জেলার কয়েক লাখ মুসল্লিরা এজতেমায় অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন গাজীপুরে জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম। জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম জানান, এজতেমাস্থলের আশপাশে বিভিন্ন খাবার দোকান ও হোটেলে শুক্রবার থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে ভেজাল খাবার পরিবেশন ও বিক্রির দায়ে বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে কয়েক ব্যক্তিকে জরিমানা ও আদায় করেন। এজতেমাস্থলের আশপাশে ৫টি করে দুশিফটে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের মোট ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ ওইসব আদালত পরিচালনা করেন। বিশেষ ট্রেন এবারের বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে আখাউড়া, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন রুটে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এজতেমা উপলক্ষে এসব ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোগ করা হয়েছে। এছাড়া আখেরি মোনাজাতের আগে ও পরে সকল ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে। টঙ্গী রেলওয়ে জংশন সূত্রে জানা গেছে, প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত টঙ্গী থেকে জামালপুর, আখাউড়া, লাকসাম রুটসহ কয়েকটি বিশেষ ট্রেন চলবে। রবিবার আখেরি মোনাজাতের দিন টঙ্গী থেকে ঢাকা, লাকসাম, আখাউড়া, ময়মনসিংহ এবং ঈশ্বরদী রুটে একাধিক বিশেষ ট্রেন যাতায়াত করবে। আখেরি মোনাজাতের পরের দিন টিকেটধারী মুসল্লিরা যাতে উঠতে পারেন সেজন্য সকল ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে। এছাড়া এজতেমায় আগত যাত্রীদের কথা বিবেচনায় রেখে টঙ্গী রেলওয়ে জংশনে অতিরিক্ত টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। মোনাজাতের দিন চলবে শাটল বাস গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান, প্রথমপর্বের বিশ্ব এজতেমা রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল আছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শনিবার রাত ১২টা থেকে রবিবার আখেরি মোনাজাতের দিন বিকেল পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস মোড় থেকে আব্দুল্লাহপুর এবং টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের মীরেরবাজার হতে টঙ্গী স্টেশন রোড হয়ে কামারপাড়া ও সাভারের বাইপাইল থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত এ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের গাড়ি ছাড়া সকল প্রকার সাধারণ যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া ঢাকা বাইপাস সড়কের ভোগড়ায়, শাখারোড বোর্ডবাজার, মীরেরবাজার থেকে আসা প্রত্যেকটি সড়ক ক্রসিংগুলোতে বন্ধ করে দেয়া হবে। সেজন্য মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে আখেরি মোনাজাতের দিন রবিবার ভোর থেকে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস মোড় এলাকা থেকে এজতেমাস্থল পর্যন্ত মুসল্লিদের সুবিধার্থে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রায় অর্ধশত শাটল বাস (এজতেমার স্টিকার লাগানো) চলাচল করবে। নিরাপত্তা বিশ্ব এজতেমা উপলক্ষে এজতেমা ময়দানসহ আশপাশ এলাকায় কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রয়েছে। টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়াম, টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল মাঠ ও মন্নু টেক্সটাইল মিলে পুলিশের অস্থায়ী ব্যারাক নির্মাণ করা হয়েছে। এজতেমা মাঠে প্রবেশের ২০টি রাস্তায় ৫ স্তরে নিরাপত্তা তল্লাশি পেরিয়ে মুসল্লিদের মাঠে প্রবেশ করতে হচ্ছে। প্যান্ডেলের ভিতর ও বাইরে মুসল্লি বেশে রয়েছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রায় ৩ হাজার সদস্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ৫টি স্তরে নিরাপত্তা দিচ্ছে। এজতেমা ময়দানের সব প্রবেশপথে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ও বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে। এজতেমার ইতিহাস এজতেমার মুরব্বিদের দেয়া তথ্যমতে, ১৯৪৬ সালে প্রথম কাকরাইল মসজিদে এজতেমার আয়োজন শুরু করা হয়। তারপর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজী ক্যাম্পে ও ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে এজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৬৬ সালে টঙ্গীর তুরাগ তীরে বর্তমানস্থলে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরে সরকারীভাবে তুরাগ তীরের ১৬০ একর জমি স্থায়ীভাবে এজতেমার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। মুসল্লিদের স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় এবং নিরাপত্তার কথা ভেবে ২০১১ সাল থেকে দুই পর্বের এজতেমা শুরু হয়। একই কারণে ২০১৬ হতে আবারও চার পর্বে দুবছরে এজতেমা আয়োজনের পরিবর্তন আনা হয়। তবলীগের আমির মাওলানা সা’দ কান্ধলভী ও মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীর বিরোধের কারণে গত বছর থেকে দুই পক্ষ আলাদাভাবে এজতেমার আয়োজন করতে শুরু করে। বিশ্ব এজতেমার শীর্ষ পর্যায়ের মুরব্বিরা এজতেমার এ তারিখ নির্ধারণ করেন।
×