ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচারে সরগরম ॥ ঢাকা সিটি নির্বাচন

প্রকাশিত: ১১:১০, ১২ জানুয়ারি ২০২০

প্রচারে সরগরম ॥ ঢাকা সিটি নির্বাচন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়িয়েছেন প্রার্থীরা। দ্বারে দ্বারে ভোট প্রার্থনার পাশাপাশি সমর্থন ও দোয়া চেয়েছেন। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। বিশেষ করে নির্বাচনে জয়লাভ করলে কেমন ঢাকা উপহার দেবেন তাও নগরবাসীকে শোনাচ্ছেন। এদিকে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোট প্রার্থনায় পাড়ামহল্লা এখন সরগরম। প্রার্থীরা নিজে উপস্থিত থেকে ভোট প্রার্থনা করছেন। পাশাপাশি তাদের সমর্থকরাও মিছিল-মিটিং করছেন। শুক্রবার প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমে পড়েন প্রার্থীরা। শনিবার প্রায় সারাদিন তারা ভোট প্রার্থনায় ব্যস্ত সময় পার করেন। মেয়র পদে অন্য কোন আলোচিত প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের ঘিরে এখন ভোটের হিসাব-নিকাশ করছেন ভোটাররা। ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী মোঃ আতিকুল ইসলাম সারাদিন ভোট প্রার্থনায় ব্যস্ত ছিলেন। তিনি মিরপুরে শাহ আলী মাজার থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। বলেন, গত ৯ মাসে মেয়র হিসেবে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, নৌকায় ভোট দিয়ে মেয়র হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত করলে ঢাকা শহরকে একটি পরিকল্পিত, সুন্দর, আধুনিক, সুস্থ, সচল ও একটি মানবিক ঢাকা হিসেবে গড়ে তুলব। দ্বিতীয় দিনের মতো উত্তরে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ এম আউয়াল রাজধানীর উত্তরায় নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে আগামী দিনে নিরাপদ শহর গড়ে তোলার জন্য যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করবেন। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস এবং বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন নির্বাচনের মাঠে ব্যস্ত সময় পার করেছেন শনিবার সারাদিন। দিয়েছেন পরিচ্ছন্ন ঢাকা উপহার দেয়ার প্রতিশ্রুতি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস শনিবার পুরান ঢাকার ওয়ারীর ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। এক পর্যায়ে ঢাকা দক্ষিণের বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনের বাড়িতে যান ভোট প্রার্থনা করতে। তিনি বলেন, সম্প্রীতির রাজনীতির মাধ্যমেই ঢাকার উন্নয়ন সম্ভব। মাদক ও সন্ত্রাসের মতো অপরাধ দমনে ‘জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হবে বলে জানালেন। দক্ষিণের প্রার্থী ইশরাক হোসেন এদিন কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো প্রচার শুরু করেন। তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে ঢাকা নগরীতে পরিবর্তন আনা হবে। ঢাকা নগরী বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেছে। বিজয়ী হলে তিনি পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেন। আতিকুলের ভোট প্রার্থনা ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এই সিটির সদ্য সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসের উপনির্বাচনে তিনি মেয়র হিসেবে জয়লাভ করেন। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের ৯ মাসের মাথায় আবারও সাধারণ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি। এবারও তিনি নৌকার প্রার্থী হয়ে লড়ছেন। ভোটের মাঠে নেমে তিনি নৌকাকে বিজয়ী করার জন্য ভোটারদের আহ্বান জানাচ্ছেন। বলছেন, ৯ মাসের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নগরীর সমস্যা সমাধানে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। শনিবার রাজধানীর মিরপুরে শাহ আলী মাজার থেকে নিজের নির্বাচনী প্রচারে নেমে তিনি নির্বাচনে সব ভোটারকে কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানান। বলেন, ৩০ জানুয়ারি নির্বাচনে সর্বাধিক সংখ্যক ভোটার কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবেন। নগরবাসীর জন্য এবারের নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি জনবান্ধব নগরী গড়ার লক্ষ্য নিয়ে নয় মাস কাজ করেছি। নারীবান্ধব শহর হবে এই ঢাকা। জলাবদ্ধতা নিরসন হবে, যানজট দূর হবে। নগরকে আলোকিত করতে ৪৪ হাজার এলইডি বাতি স্থাপনের কাজ শুরু করেছিলাম। এ ধরনের উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ কী উন্নয়ন করেছে জানেন? এই শহরের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগের ওপর আপনাদের আস্থা থেকে আমাকে ভোট দিন। এরপর শাহ আলী মাজার জিয়ারত করে মোনাজাত করেন আতিকুল ইসলাম। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ঢাকা-১৪ মিরপুর এলাকার এমপি আসলামুল হক আসলাম এবং ঢাকা-১৩ আসনের সাদেক খান। তার নির্বাচনী প্রচারে আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক মান্নান কচিসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তাবিথের নির্বাচনী প্রচার ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে বিএনপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাবিথ এম আউয়াল। তিনি এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে। আগেরবার ঢাকা সিটি নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থী ছিলেন তিনি। ওই নির্বাচনের দিন মাঝপথে এসে দলের সিদ্ধান্তে বর্জন করেন। এবারও তিনি প্রার্থী হয়ে বলেন, এবার নির্বাচন বর্জন করবেন না। শেষ পর্যন্ত তিনি ভোটের মাঠে থাকবেন। শুক্রবার ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ নিয়েই তিনি ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। শনিবারও উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ করেন। ভোট প্রার্থনা ও ভোটারদের দোয়া ও সমর্থন চান। বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মাঠে কোন প্রতিপক্ষকে খাটো করে দেখতে চাই না। নির্বাচনের মাঠে সকল প্রতিপক্ষকে সমান চোখে দেখি। কে ভাল, কে খারাপ, সেটা জনগণই সিদ্ধান্ত দেবে। নির্বাচনের মাঠে নেমে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। যেখানে যাচ্ছি, ভোটের উত্তপ্ত পরিবেশ দেখেছি। জনগণ চাচ্ছে বিএনপিকেই ভোট দিতে। লক্ষ্য রাখছি, প্রচারে বাধা আছে কি না। প্রতিপক্ষ আচরণবিধি মেনে চলে কিনা। আগামী দিনগুলোতে বলতে পারব, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কেমন আছে। উত্তরার আজমপুর বাজার থেকে প্রচার শুরু করেন তিনি। এ সময় বলেন, উত্তরখানে ও দক্ষিণখানের যেসব এলাকা নতুন করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সেখানে জলাবদ্ধতা, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য, মশা নিবারণ ইস্যুতে অনেক কাজ করার রয়েছে। উত্তরখানে জনতার উদ্দেশে তাবিথ বলেন, আগামী দিনে নিরাপদ শহর গড়ে তোলার জন্য যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, বাস্তবায়ন হবে। এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী নির্বাচনী গণসংযোগে তাবিথের সঙ্গে ছিলেন। রোজ গার্ডেন থেকে তাপসের নির্বাচনী প্রচার শুরু শনিবার দ্বিতীয় দিনে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেন থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন তাপস। সকালে রোজ গার্ডেনে পৌঁছালে আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী তাকে স্বাগত জানান। তিনি পুরান ঢাকাকে আধুনিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চান। নির্বাচনী প্রচারের অংশ নিয়ে এক সময় তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপির ইশরাক হোসেনের বাড়িতেও যান। দুপুরে গোপীবাগে আর কে মিশন রোডে ইশরাকের বাড়িতে উপস্থিত হন তাপস। এ সময় নৌকার এই প্রার্থী বলেন, এখন থেকে ঢাকায় সম্প্রীতির রাজনীতি চলবে। সম্প্রীতির রাজনীতির মাধ্যমেই উন্নয়ন সম্ভব। মাদক ও সন্ত্রাসের মতো অপরাধ দমনে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হবে। প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে খেলাধুলার ব্যবস্থা করা হবে। মা-বোন ও মুরব্বিদের জন্য হাঁটার ব্যবস্থা করা হবে। ঢাকার রাস্তাঘাট পুনর্বিন্যাস করে জনগণের ভোগান্তি কমানো হবে। ঢাকা অচল হয়ে গেছে। এই অচল ঢাকাকে সচল করব। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায়, ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু, যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহি। ইশরাকের নির্বাচনী প্রচার বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন ধানের শীষ প্রতীকে লড়ছেন। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মতোই ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এদিন তিনি কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে প্রচার শুরু করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ১৩ বছর যারা ক্ষমতায় রয়েছেন তাদের কোন জনসমর্থন নেই। ভোটার নেই। তারা প্রশাসনকে ব্যবহার করে নির্বাচনের ফল পাল্টে দেয়ার চেষ্টা করছে। আমরা এর দাঁতভাঙ্গা জবাব দেব।
×