ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মানহীন শিক্ষা ॥ নেই তদারকি

রাজশাহীতে অনুমোদনহীন স্কুল-কলেজের ছড়াছড়ি

প্রকাশিত: ০৯:১০, ১২ জানুয়ারি ২০২০

রাজশাহীতে অনুমোদনহীন স্কুল-কলেজের ছড়াছড়ি

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ অনুমোদন ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রাজশাহীরত আবাসিক ভবন ও বাজার এলাকায় যত্রতত্র বাড়ি ভাড়া নিয়ে গড়ে উঠছে নামসর্বস্ব স্কুল-কলেজ। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শিক্ষকসহ শিক্ষার মান ও পরিবেশ নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। অথচ অনুমোদনহীন এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করছে খোদ অনুমোদিত স্কুল-কলেজ। স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তদারকিতে চার সরকারী প্রতিষ্ঠান থাকলেও প্রকাশ্য এই অনিয়মের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন কর্তৃপক্ষের কোন পদক্ষেপ নেই। অভিভাবকদের দাবি, দ্রুতসময়ের মধ্যে মানহীন ও অনুমোদনহীন এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা না গেলেও তাদের অন্তত সরকারী নিয়মনীতির অধীনে এনে নিয়মিত তদারকি করা হোক। রাজশাহী জেলা শিক্ষা অফিস, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এবং রাজশাহী অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষ অধিদফতর স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তদারকির পাশাপাশি শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের মান উন্নয়নে কাজ করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের দেয়া হিসেবে, রাজশাহী জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের অনুমোদিত স্কুলের সংখ্যা ১ হাজার ৫৫৮টি। যার মধ্যে প্রথমিক পর্যায়ের অনুমোদন প্রাপ্ত স্কুলের সংখ্য ১ হাজার ৫৭টি এবং রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন প্রাপ্ত মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলের সংখ্যা ৫০১। তবে অনুমোদনহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোন হিসাব নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে। এদিকে রাজশাহী নগরীসহ জেলার ৯ উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন আবাসিক ও বাজার এলাকার ছোটবড় ভবনগুলোতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে দুই হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বছরের শুরুতে ভর্তি মৌসুম হওয়ায় বিভিন্ন মোড় ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ব্যানার ও সাইনবোর্ডের মাধ্যমে প্রকাশ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের চটকদার বিজ্ঞাপন শোভা পাচ্ছে। আকর্ষণীয় সুযোগ পাওয়ার লোভে অভিভাবকদের অনেকেই না বুঝে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের সন্তানদের ভর্তি করছেন। রাজশাহী অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের দেয়া তথ্য মতে, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদন প্রাপ্তির ক্ষেতে সরকারের দেয়া বেশকিছু নিয়ম আছে। তার মধ্যে আছে নিজস্ব ভূমি থাকা, যেখানে ক্লাসরুমের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য খেলার মাঠ থাকবে। একটি স্কুল থেকে অন্যটির দূরত্ব হবে শহর ও উপজেলা ভেদে এক থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে। শিক্ষকদেরও থাকতে হবে ন্যূনতম যোগ্যতা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ। শিক্ষা কারিকুলাম হতে হবে অনুমোদিত। তবে অনুমোদনহীন স্কুলগুলো এসব নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না। অনুমোদনহীন এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের দাবি, শুরুতে চটকদার কথা ও প্রলোভন দেখিয়ে সন্তানদের এসব স্কুলে ভর্তির জন্য অনুনয় বিনয় করা হয়। পরবর্তীতে যখন স্কুলে ভর্তি করা হয় তখন দেখা যায় স্কুলগুলোতে শিক্ষার মান আশানুরূপ নয়। শিক্ষকরাও দক্ষ নয়। অভিভাবকেরা আরও জানান, অনুমোদন না থাকায় স্কুলগুলোকে তাদের শিক্ষার্থীদের পিইসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিতে অনুমোদিত স্কুলোর শরণাপন্ন হতে হয়। অনুমোদিত স্কুল বা কলেজগুলো এসব অনুমোদনহীন স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীদের নিজেদের শিক্ষার্থী হিসেবে রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন দেখিয়ে পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেয়। অথচ অনুমোদনহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত নিবন্ধন ফি এর চাইতে কয়েকগুণ বেশি অর্থ আদায় করে থাকে। রাজশাহীর বেসরকারী বা এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এসব অনুমোদনহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ করে দিচ্ছে। রাজশাহী শহরের এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক পর্যায়ের একাধিক স্কুলের প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে অভিভাবকদের এমন অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোকবুল হোসেন বলেন, গণশিক্ষা কার্যক্রমের বিস্তারে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। অনুমতি ছাড়া কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা সম্পূর্ণ বেআইনী। আমরাসহ কয়েকটি সরকারী প্রতিষ্ঠান স্থানীয় স্কুল ও কলেজ মনিটরিং করি। তবে সরকারী এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় না থাকায় অনিয়ম রোধ করা যাচ্ছে না। রাজশাহী অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. শারমিন ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, অনুমতি ছাড়া মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষ কার্যক্রম সম্পূর্ণ বেআইনী। প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের জন্য আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শনের জন্য বলা হয়। আমরা পরিদর্শন করি। শিক্ষপ্রতিষ্ঠানগুলো ন্যূনতম শর্ত পূরণ করতে না পারায় আমরা তদের বিরুদ্ধে নিগেটিভ রিপোর্ট দেই। অনুমোদনহীন স্কুল বা কলেজে না ভর্তি হওয়ারও পরামর্শ দেন এই শিক্ষা কর্মকর্তা। রাজশাহী জেলা প্রথমিক শিক্ষা অধিদফতরের তথ্য মতে, প্রাথমিক পর্যায়ের ১ হাজার ৫৭ স্কুলের মধ্যে রয়েছে গোদাগাড়ী উপজেলায় ১৬৫, চারঘাটে ৭৩, দুর্গপুরে ৮৩, তানোরে ১২৮, বাগমারায় ২২০, বাঘায় ৭৪, পুঠিয়ায় ৯০, পবায় ৮৩, মোহনপুরে ৮১ এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৬০টি। আর রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন প্রাপ্ত মাধ্যমিক পর্যায়ের ৫০১টি স্কুলের মধ্যে রয়েছে রাজশাহী নগরীতে ৬৫, পবা উপজেলায় ৩৭, বাগমারা উপজেলায় ৭৫, গোদাগাড়ী উপজেলায় ৬২, তানোর উপজেলায় ৫২, বাঘা উপজেলায় ৪৪, মোহনপুর উপজেলায় ৩৫, দুর্গাপুর উপজেলায় ৩৪, পুঠিয়া উপজেলায় ৪২ ও চারঘাট উপজেলায় ৫৫টি।
×