ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুমৃত্যু প্রতিরোধে

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ১২ জানুয়ারি ২০২০

শিশুমৃত্যু প্রতিরোধে

দুই কোটি দশ লাখ শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর কর্মসূচী সফলতার সঙ্গে শনিবার সম্পন্ন হয়েছে। ভিটামিন এ শরীরের জন্য খুবই দরকারি। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখা ও স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে কাজ করে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন এ সব ধরনের মৃত্যুহার কমিয়ে দেয় ২৪ শতাংশ। এছাড়া হামজনিত ৫০ শতাংশ ও ডায়রিয়া সংক্রান্ত রোগে ৩৩ শতাংশ মৃত্যুর আশঙ্কা কমিয়ে দেয়। স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশ বেশ সাফল্য অর্জন করেছে। তবে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে আরও কাজ করতে হবে। শিশুর সুস্থতা, স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও দৃষ্টিশক্তির জন্য ভিটামিন এ প্রয়োজন। ভিটামিন এ-এর অভাবে শিশুদের বিভিন্ন ধরনের অসুখে পড়তে হয়। শিশুমৃত্যু প্রতিরোধ, রাতকানা রোগ ও অপুষ্টি দূরীকরণে সারা বিশ্বে ভিটামিন এ-এর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। বাংলাদেশে বছরে দুইবার ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। এটা একটা সফল কর্মসূচী, যা বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংস্থাও সরকারকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে থাকে। সরকার শিশুদের ভিটামিন এ-এর অভাব পূরণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল বছরে দুইবার দুই কোটির অধিক শিশুকে ভিটামিন এ খাওয়াতে সহায়তা করে। বছরের পর বছর এটা চালিয়ে যাওয়া একটা বড় সফলতা। এটা যথেষ্ট সাহস ও দৃঢ়তার পরিচয় বহন করে। ১৯৭৩ সালে জাতীয় অন্ধত্ব দূরীকরণ কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ভিটামিন এ সম্পূরক কর্মসূচী চালু করা হয়। তখন দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের রাতকানা রোগের হার ছিল ৪ দশমিক ১ শতাংশ। আর ২০০৫ সালে এটি দশমিক শূন্য ৪ শতাংশে নেমে আসে। নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল ১৯৯৭ সাল থেকে জাতীয় ভিটামিন এ সম্পূরক কর্মসূচীতে যুক্ত হয়। ১৯৯৭-২০০৪ সাল পর্যন্ত কর্মসূচীতে প্রয়োজনীয় সব ক্যাপসুল প্রদান করে তারা। সরকার ২০০৭ সাল থেকে নিজস্ব অর্থায়নে ভিটামিন এ ক্যাপসুল কেনা শুরু করলেও যখনই ক্যাপসুল ক্রয় সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দিয়েছে তখনই এনআই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি গত তিন বছরে ভিটামিন এ ক্যাপসুলের পুরোটাই সরবরাহ করেছে এনআই। জাতীয় ভিটামিন এ কর্মসূচীর সফলতা এর যথাযথ মনিটরিংয়ের ওপর নির্ভরশীল। সরকার এই লক্ষ্যে গত বছর ভিটামিন এ সম্পূরক কর্মসূচীতে একটি এ্যাপ ব্যবহার করে। এ সময় বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা থেকে ১০ জন, প্রতি বিভাগ থেকে ৪ জন ও সিটি কর্পোরেশন এলাকা থেকে ৫ জনসহ জাতীয় পর্যায়ে ১৩০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এ ধরনের এ্যাপের ব্যবহার কর্মসূচী মনিটরিংয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ১৯৮২-৮৩ সালে ভিটামিন এ নিয়ে এক জরিপ করা হয়। সেখানে দেখা গেছে, ভিটামিন এ-এর অভাবে ৩০ হাজার শিশু দৃষ্টিশক্তি হারায়। সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে। তবে বর্তমান কর্মসূচীকে টেকসই করতে হলে খাদ্য সমৃদ্ধিকরণ ও খাদ্যবৈচিত্র্যের ওপর জোর দিতে হবে। এছাড়া জন্মের পর শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধ খুব উপকারী। এটা শিশুকে খাওয়াতে হবে। এতে ভিটামিন এ-এর অভাবও পূরণ হবে। গর্ভবতী নারীকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। মায়ের স্বাস্থ্য ভাল থাকলে নবজাতকও ভাল থাকবে। তা না হলে জন্মের পর শিশুর ভিটামিন এ-এর অভাব দেখা দিতে পারে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা যেন ভিটামিন এ-এর অভাবে না ভোগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এখানে পরিবারের ভূমিকাই প্রধান। আগামীতে শিশুমৃত্যুর হার শূন্যের কোঠায় নেমে আসুক- এটিই প্রত্যাশা।
×