ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্লে অফের চার দল চূড়ান্ত

কুমিল্লাকে বিদায় করে স্বপ্নপূরণ খুলনার

প্রকাশিত: ১২:৪৩, ১১ জানুয়ারি ২০২০

কুমিল্লাকে বিদায় করে স্বপ্নপূরণ খুলনার

মোঃ মামুন রশীদ ॥ শুক্রবার বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) চতুর্থ দল হিসেবে প্লে অফ নিশ্চিত করেছে খুলনা টাইগার্স। রাতে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সকে ৯২ রানে হারিয়ে দেয় খুলনা। ফলে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স, রাজশাহী রয়্যালস ও ঢাকা প্লাটুনের পর খুলনাও প্লে অফে জায়গা করে নিল। আর এই পরাজয়ে সিলেট থান্ডার ও রংপুর রেঞ্জার্সের পর তৃতীয় দল হিসেবে রাউন্ড রবিন লীগ থেকে ছিটকে পড়ল কুমিল্লা। চলতি আসরে এটিই ছিল তাদের শেষ ম্যাচ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ছিল শুক্রবার। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনাও শুরু হয়েছে এদিন। দেশের ‘হোম অব ক্রিকেট’ মিরপুর স্টেডিয়ামে রাখা দুটি জায়ান্ট স্ক্রিনে বারবারই সেই ক্ষণ গণনা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিসহ দেখানো হয়েছে। এমন একটি দিনেই টি২০ ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরিটি হাতছাড়া করেন মুশফিকুর রহীম। তবে তা-ব চালিয়ে ৫৭ বলে তার করা ১২ চার, ৩ ছক্কায় ৯৮ রানের অপরাজিত ইনিংসে বিশাল সংগ্রহ পায় খুলনা। মেহেদি হাসান মিরাজও ৪৫ বলে ৫ চার, ৩ ছক্কায় ৭৪ রান করেন। নির্ধারিত ২০ ওভারে খুলনা তোলে ২ উইকেটে ২১৮ রান। জবাব দিতে নেমে ২০ ওভারে কুমিল্লা ৯ উইকেটে ১২৬ রান করতে সক্ষম হয়। এবারের বিপিএল বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষেই বিশেষভাবে আয়োজিত হচ্ছে। জাতির জনকের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে শুক্রবার তার জন্ম শতবার্ষিকীর যে ক্ষণগণনা শুরু হয় সেদিনই ব্যাট হাতে ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস উপহার দেন মুশফিক। তবে অপরাজিত ৯৮ রানের ইনিংসটির শুরুতে ও শেষে দু’বার ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গেছেন তিনি। চলতি আসরেই মুশফিক তার আগের সেরা টি২০ ইনিংস খেলেছিলেন রাজশাহী রয়্যালসের বিপক্ষে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। গত ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে ৫১ বলে ৯ চার, ৪ ছক্কায় ৯৬ রান করে আউট হয়েছিলেন। সেঞ্চুরির দেখা সেদিনও পাননি, এদিনও পেলেন না। তবে দলকে প্লে অফে ওঠার রাস্তাটা প্রশস্ত করেছেন বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলে। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামে খুলনা। প্রথম ওভারেই নাজমুল হোসেন শান্তকে (১) হারিয়ে বাজেভাবে শুরু হয় তাদের। এরপর ফর্মের তুঙ্গে থাকা রাইলি রুশো স্বভাবসুলভ ঝড়ো ব্যাটিং করছিলেন। কিন্তু তিনিও ১১ বলে ৩ ছয়ে ২৪ রান করার পর ইনিংসের চতুর্থ ওভারে মুজিব উর রহমানের পেসে সাজঘরে ফিরেছেন। শুরুর সেই ধাক্কাটা আরও বড় হতে পারত। সুমন খান বোলিং করতে এসেই উইকেট পেতে পারতেন। ইনিংসের অষ্টম ওভারে তার করা দ্বিতীয় বলে ব্যক্তিগত ৪ রানে সহজ একটি সুযোগ করে দিয়েছিলেন মুশফিক। কিন্তু উপুল থারাঙ্গা সেটিকে তালুবন্দী করতে ব্যর্থ হন। জীবন ফিরে পাওয়ার পর মুশফিক আর পেছনে ফিরে তাকাননি, খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। হাঁকিয়েছেন বঙ্গবন্ধু বিপিএলে নিজের চতুর্থ অর্ধশতক। এর আগে কোন আসরেই চারটি অর্ধশতক হাঁকাতে পারেননি মুশফিক। ২০১২ সালের প্রথম আসরে সিলেট রয়্যালসের হয়ে এবং গত বিপিএলে চিটাগং ভাইকিংসের জার্সিতে ৩টি করে অর্ধশতক হাঁকিয়েছিলেন তিনি। যে সুমনের বলে জীবন পেয়েছিলেন তাকেই ১১তম ওভারে তুলোধুনো করে ১৯ রান তুলে নেন মুশফিক। সেই ওভারেই খুলনার দলীয় সংগ্রহ একশ’ পেরিয়ে যায়। ওপেনার মিরাজও তার ব্যাট চালিয়ে যাচ্ছিলেন দ্রুত। তৃতীয় উইকেটে এই জুটি কুমিল্লার বোলারদের গলদঘর্ম করেছেন। ইনিংসের ১৪তম ওভারে মিরাজ চলতি আসরে তার দ্বিতীয় অর্ধশতক তুলে নেন মাত্র ৩৩ বলে। পরের ওভারে মুশফিকও হাফসেঞ্চুরি পেয়ে যান স্টিয়ান ভ্যান জিলের বোলিংকে তছনছ করে ২০ রান তুলে নিয়ে। ৩৮ বলে ফিফটি পান মুশফিক। মিরাজ-মুশফিক জুটিকে আর থামাতে পারেননি কুমিল্লার কোন বোলারই। ১৮তম ওভারে সবচেয়ে বড় ঝড় যায় আবু হায়দার রনির ওপরে। ওই ওভারে ৩ ছক্কা ও ১ চারে মুশফিক তুলে নেন ২৬ রান। জুটিতে উঠে যায় ১৬৮ রান। চলতি আসরে যেকোন উইকেটে এটিই সর্বাধিক রানের রেকর্ড। আর বিপিএল ইতিহাসে তৃতীয় উইকেটে দ্বিতীয় সেরা জুটি। গত আসরেই রংপুর রাইডার্সের এ্যালেক্স হেলস ও এবি ডি ভিলিয়ার্স চট্টগ্রামে ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে তৃতীয় উইকেটে অবিচ্ছন্ন ১৮৪ রানের জুটি গড়েছিলেন। মিরাজ-মুশফিকের জুটিটি আরও বড় হতে পারত। কিন্তু মিরাজ ১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে রান নিতে গিয়ে হ্যামস্ট্রিংয়ে তীব্র টান অনুভব করেন, পরে তাকে কোলে করে দুজন মাঠের বাইরে নিয়ে গেছেন। আর নামতে পারেননি তিনি। মিরাজ ৪৫ বলে ৫ চার, ৩ ছক্কায় ৭৪ রান করেছিলেন। তবে মুশফিক অবিচল থেকে সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। শেষ ওভারে সুযোগটাও পেয়েছিলেন, কিন্তু সৌম্য দুর্দান্ত বোলিং করেন। শেষ বল থেকে শতরানের জন্য প্রয়োজনীয় ৩ রান আর করতে পারেননি মুশফিক। আরেকবার জীবন পেয়েছেন সৌম্য রিটার্ন ক্যাচ ফেলে দেয়ায়। সিঙ্গেল নিয়ে ৯৮ রানে অপরাজিত থেকেই মাঠ ছাড়তে হয়েছে মুশফিককে। সেই সঙ্গে বিপিএলে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে তৃতীয়বারের (২০১২ সালে ৪৪০ ও গত আসরে ৪২৬) মতো এক আসরে চার শতাধিক রানের মাইলফলক পেরিয়েছেন মুশফিক। রাইলি রুশো ও তামিম ইকবাল দুইবার করে বিপিএলের এক আসরে চার শতাধিক রান করতে পেরেছেন। এবার মুশফিকের রান ১১ ম্যাচে ৪৩১। মুশফিক-মিরাজের ব্যাটিং তান্ডবে শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ২ উইকেটে ২১৮ রান তোলে খুলনা। তারা ইনিংসের শেষ ৬ ওভারে ৮৮ রান তোলার কারণে চলতি আসরে খুলনা পেয়ে যায় তাদের সর্বোচ্চ ইনিংস। জবাব দিতে নেমে শুরু থেকেই বিপর্যয়ে পড়ে কুমিল্লা। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারের মধ্যেই তারা ৩ উইকেট হারায়, দলীয় স্কোরবোর্ড তখন রান মাত্র ৪১। ধুঁকতে থাকা কুমিল্লার দলীয় সংগ্রহ ৫০ ছুঁয়েছে অষ্টম ওভারে। তখনই বোঝা যাচ্ছিল প্লে অফে ওঠার আশা বাঁচিয়ে রাখার ম্যাচে হতাশার হারে নিমজ্জিত হতে চলেছে কুমিল্লা। ওয়ানডাউনে নামা থারাঙ্গা লড়ছিলেন, তবে সঙ্গী পাননি তিনি। ফর্মে থাকা অধিনায়ক ডেভিড মালান (৮), রানে ফেরা সৌম্য (১০) রানেই সাজঘরে ফিরেছেন। থারাঙ্গাও ২৩ বলে ৬ চারে ৩২ রান করার পর অনিয়মিত অফস্পিনার শামসুর রহমান শুভর শিকার হন। পরে ইয়াসির আলী রাব্বি ১৬ বলে ১ চার, ১ ছয়ে ২০ এবং ফারদিন হাসান অনি ২৩ বলে ২২ রান করে ব্যবধানটাই একটু কমিয়েছেন শুধু। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকটে ১২৬ রানের বেশি যেতে পারেনি কুমিল্লা। শহীদুল ইসলাম ৩টি এবং আমিনুল ইসলাম বিপ্লব ও মোহাম্মদ আমির ২টি করে উইকেট নেন। স্কোর ॥ খুলনা টাইগার্স ইনিংস- ২১৮/২; ২০ ওভার (মুশফিক ৯৮*, মিরাজ ৭৪*, রুশো ২৪; মুজিব ১/১৮, ইরফান ১/৩৮)। কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ইনিংস- ১২৬/৯; ২০ ওভার (থারাঙ্গা ৩২, ফারদিন ২২, ইয়াসির ২০; শহীদুল ৩/২৭, বিপ্লব ২/১৯, আমির ২/২৪)। ফল ॥ খুলনা টাইগার্স ৯২ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ মুশফিকুর রহীম (খুলনা টাইগার্স)।
×