ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিটি ভোটে জমজমাট প্রচারযুদ্ধ শুরু, মাঠ কাঁপাচ্ছেন প্রার্থীরা

প্রকাশিত: ১০:৪৬, ১১ জানুয়ারি ২০২০

 সিটি ভোটে জমজমাট প্রচারযুদ্ধ শুরু, মাঠ কাঁপাচ্ছেন প্রার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুরু হলো সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের জমজমাট প্রচার যুদ্ধ। শুক্রবার প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই নেমে পড়েন প্রচারে। এর আগে সকাল থেকে ঢাকার দুই সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেন। মেয়র পদে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের জন্য প্রতীক আগেই নির্ধারিত ছিল। কিন্তু আনুষ্ঠানিক বরাদ্দ পাওয়ার পর তারা ভোট প্রার্থনায় মাঠে নেমে পড়েন। প্রতীক বরাদ্দের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলার বিষয়টি ‘কঠোর’ তদারকি করবেন বলে জানান। প্রার্থীর আচরণবিধি মেনেই নির্বাচনে প্রচার চালাবেন বলে অঙ্গীকার করেন। উত্তরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ও বিএনপির তাবিথ আউয়াল উত্তরা থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। আতিকুল ইসলাম উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে নামাজ পড়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তাদের কাছে দোয়া ও ভোট চান। অপরদিকে বিএনপির তাবিথ আউয়াল উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর সড়ক থেকে প্রচার শুরু করেন। তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চান, লিফলেট বিলি করেন। ঢাকা দক্ষিণে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজ আদায় শেষে উত্তর গেট থেকে প্রচার শুরু করেন। সকালে আগারগাঁওয়ে এনআইএলজি উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ও গোপীবাগে সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারে দক্ষিণের রিটার্র্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে দুই সিটিতে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীসহ ৭৫৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী তারা ১৮দিন নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন। অবশ্য ভোটের ৩২ ঘণ্টা আগে সব ধরনের প্রচার নিষিদ্ধ। উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামের পক্ষে প্রতীক বুঝে নেন তার প্রতিনিধি তৌফিক জাহিদুর রহমান। আতিক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকের প্রতীক বুঝে পাওয়ার পর তার প্রতিনিধি তৌফিক সাংবাদিকদের বলেন, আতিকুল ইসলাম ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী, তাই আমাদের নির্বাচনী আচরণবিধি খুব কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। অপর দিকে উত্তরের বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে প্রতীক বুঝে নেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন। তাবিথ এম আউয়াল ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনী প্রচার চালাবেন। প্রতীক বুঝে নেয়ার সময় তার প্রতিনিধি সাংবাদিকদের বলেন, প্রতীক বরাদ্দ পেলাম। উত্তরা থেকে আমাদের নির্বাচনী প্রচার শুরু হবে। আশা করি, উৎসবমুখর পরিবেশেই ভোট হবে। মেয়র পদে ঢাকা দক্ষিণের আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপসের পক্ষে নৌকা প্রতীক নিয়েছেন তাঁর আইনজীবী আলী আসিফ খান। এদিকে মেয়র পদে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের পর কাউন্সিলর পদের প্রার্থীদের প্রতীক দেয়া হয়। ঢাকা উত্তরে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ৫৪টি পদে ২৫১ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ১৮টি পদে ৭৭ প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক দেয়া হয়। অপরদিকে দক্ষিণে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ৭৫টি পদে ৩৩৫ এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ২৫টি পদে মোট ৮২ প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে ৭ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শুক্রবার তাদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসের নৌকা প্রতীক এবং ইশরাক হোসেনের ধানের শীষ প্রতীক ছাড়াও জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন মিলন লাঙ্গল, ইসলামী আন্দোলনের মোঃ আবদুর রহমান হাতপাখা, ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির (এনপিপি) বাহরানে সুলতান বাহার আম, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোঃ আকতার উজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লা ডাব ও গণফ্রন্টের আব্দুস সামাদ সুজন মাছ প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। অপরদিকে ঢাকা উত্তরের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোঃ আতিকুল ইসলামকে নৌকা, বিএনপির তাবিথ এম আউয়ালকে ধানের শীষ, সিপিবির প্রার্থী আহম্মেদ সাজেদুল হককে কাস্তে, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী শেখ ফজলে বারী মাসউদকে হাতপাখা, এনপিপির র্প্র্থাী আনিসুর রহমান দেয়ানকে আম প্রতীক এবং পিডিপি শাহীন খানকে বাঘ প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। এই সিটিতে মেয়র পদে মোটি ছয় প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দুই সিটির মেয়র পদে ১৩ প্রার্থীর সবাই ইসিতে নিবন্ধিত দলের মনোনীত হওয়ায় যার যার দলীয় প্রতীক নিয়েই মাঠে নেমেছেন। কাউন্সিলর পদের প্রার্থীদের ইসিতে নির্ধারিত প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই পদে ভ্টো হবে নির্দলীয় ভিত্তিতে। প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের পর উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম বলেন, নির্বাচন যেন উৎসব হতে পারে, সেই চেষ্টা থাকবে কমিশনের পক্ষ থেকে। এটাকে কোনক্রমেই সংঘর্ষের রূপ নিতে দেয়া যাবে না। দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বলেন, প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে প্রার্থীরা এখন আইন মেনে প্রচার চালাতে পারবেন। দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইকিং করা যাবে। প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নিয়ে ক্যাম্প স্থাপন করতে পারবেন। সেখানে শুধু নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন। কোন ধরনের মিছিল, শো ডাউন, বড় ধরনের জনসভা ও তোরণ নির্মাণ করা যাবে না। তবে ঘরোয়া বৈঠকে প্রার্থীরা অংশ নিতে পারবেন। উত্তরা থেকে আতিকুল এবং তাবিথের প্রচার শুরু এদিকে প্রতীক বরাদ্দ নিয়েই রাজধানীর উত্তরা থেকে আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম এবং বিএনপির তাবিথ এম আউয়াল নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। আতিকুল উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে নামাজ পড়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিরাপদ সড়ক ও নিরাপদ শহর দরকার। আমি নিরাপদ শহর গড়ে তুলতে চাই। এই শহরকে পরিকল্পিত শহর হিসেবে গড়ে তুলব। নির্বাচনী প্রচারে সমান সুযোগ নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। যারা এমপি-মন্ত্রী তারাও দলের অংশ। কিন্তু তারা কাজ করতে পারছেন না। অন্যদিকে মওদুদ আহমেদসহ বিএনপি নেতারা প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। তারা সাবেক এমপি ও মন্ত্রী। বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ করছি। অন্যদিকে ধানের শীষের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর সড়ক থেকে প্রচার শুরু করেন। তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চান, লিফলেট বিলি করেন। বলেন, আশা করছি নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করবেন। জনগণ ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন। এদিকে ঢাকা দক্ষিণের বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজ আদায় শেষে মসজিদের উত্তর গেট থেকে প্রচার শুরু করেন। এসময় ইশরাকের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাসসহ দলটির অসংখ্য নেতাকর্মী। এর আগে ইশরাক জুরাইন কবরস্থানে তার বাবা সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার কবর জিয়ারত করেন। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর গোপীবাগের সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারে নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দ অনুষ্ঠানে ধানের শীষ প্রতীক পাওয়ার পর সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন কমিশন মেরুদন্ডহীন, নখদন্তহীন ভূমিকা পালন করছে। তিন দিন আগে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে। তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
×