ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইরাকে তিন লাখ কর্মী হুমকিতে, সাবধানে চলাফেরার পরামর্শ

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ১১ জানুয়ারি ২০২০

 ইরাকে তিন লাখ কর্মী হুমকিতে, সাবধানে চলাফেরার পরামর্শ

ফিরোজ মান্না ॥ বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার হুমকির মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে ইরাকে বাংলাদেশের তিন লাখ কর্মী চরম হুমকিতে রয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সতর্ক অবস্থায় চলাফেরা করতে বলা হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বলছে, ইরাকে কর্মীরা এখন পর্যন্ত ভাল আছেন। সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্মতারা এ খবর দিয়েছেন। পরিস্থিতি বেশি প্রতিকূলে গেলে কর্মীদের নিরাপদে রাখার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত ইরাকে সে রকম কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ ইরাকে কর্মীদের নিরাপত্তা বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে কথা বলেছেন। সচিব মন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছেন এখন পর্যন্ত ইরাকে তেমন কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। পরিস্থিতি যদি জটিল হয় তার জন্য প্রস্তুতি রয়েছে। তাছাড়া ইরাক সরকার প্রবাসী কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন আছে। আমরা ইরাক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সর্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। তবে নতুন করে কোন কর্মীকে ইরাকে পাঠাতে মানা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা তখন কর্মী নিয়োগের চাহিদা দেবে। বর্তমান পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে ভবিষ্যতে কি হবে সেটা পরে নির্ধারণ করা হবে। তবে আমাদের সব রকমের প্রস্তুতি রয়েছে। মন্ত্রী ইমরান আহমদ মঙ্গলবার জনকণ্ঠকে এ কথা বলেছেন। বৃহস্পতিবার প্রবাসী কল্যাণ সচিব সেলিম রেজা জনকণ্ঠকে জানান, ইরাকে বাংলাদেশীরা ভাল আছেন। আমাদের দূতাবাস কর্মকর্তারা সর্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। বৃহস্পতিবার লেবার কাউন্সিলরের সঙ্গে কয়েক দফা কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, কোন ধরনের অসুবিধা হচ্ছে না। ইরান যে সব জায়গায় আঘাত হানছে সে সব জায়গায় আমাদের কোন কর্মী নেই। তবে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। এদিকে জনশক্তি বিশেষজ্ঞ হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরন বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার চরম হুমকির মধ্যে পড়েছে। কারণ এ পরিস্থিতিতে কর্মীরা নিরাপদ থাকতে পারবেন না। যে কোন সময় যে কোন জায়গায় ইরান আঘাত হানতে পারে। আবার প্রতিঘাত হিসেবে মার্কিন বাহিনীও আঘাত হানবে। যুদ্ধ শুরু হলে সামরিক ব্যয় বাড়লে কর্মীদের মধ্যপ্রাচ্যে টিকে থাকা কঠিন হবে। এ জন্য মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে মালয়েশিয়া, কাতারসহ বড় বড় শ্রম বাজার দ্রুত খোলার চেষ্টা করা। এর বাইরেও নতুন নতুন শ্রমবাজার তৈরি করতে হবে। এ বছর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সাত লাখ কর্মী বিদেশে পাঠানোর টার্গেট নিয়ে তা পূরণ হবে না। বড় আকারে নতুন বাজার খুলতে হবে। তাহলেই মন্ত্রণালয়ের টার্গেট পূরণ হতে পারে। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের বিষয়টি সহজে দূর হবে বলে মনে হচ্ছে না। ইরান-মার্কিন যে বিরোধ তৈরি হয়েছে তা নিরসন হতে বেশ সময় লেগে যেতে পারে। সূত্র জানায়, ইরাকে মার্কিন হামলায় ইরানের কুদস ফোর্সেস প্রধান সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রও বলেছে, প্রতিশোধমূলক কিছু করা হলে পাল্টা হামলা চালানো হবে। এরই মধ্যে প্রতিশোধের অংশ হিসেবে ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, মধ্যপ্রাচ্যের বাজার নিয়ে নতুন করে সঙ্কট সৃষ্টির তেমন কোন কারণ নেই। নতুন দুই তিনটি শ্রমবাজার তৈরি হয়েছে, ওসব বাজারে কর্মী পাঠানো হবে। ফলে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে খুব বেশি ভাবার কিছু নেই। মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি খারাপ হলে বাংলাদেশের কর্মীদের নিরাপত্তা ও শ্রমবাজার দুটোই হুমকির মুখে পড়বে। তবে এই মুহূর্তে বড় কোন সঙ্কট দেখছেন না তারা। বেসরকারী গবেষণা সংস্থা রামরু জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে যে পরিস্থিতি চলছে, তা যে কোন সময় যে কোন স্থানে ঘটতে পারে। সেজন্য সরকারের বিকল্প জরুরী পরিকল্পনা থাকলে তেমন প্রভাব পড়বে না। তবে সরকারের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তুতি সব সময় থাকতে হবে, যাতে যে কোন সময় কর্মীদের সরিয়ে আনা যায়। প্রয়োজন অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেয়া যাতে সম্ভব হয়।
×