ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিরাপত্তা ছিল কঠোর, কাউকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি

প্রকাশিত: ১০:৪২, ১১ জানুয়ারি ২০২০

 নিরাপত্তা ছিল কঠোর, কাউকে ভোগান্তিতে পড়তে  হয়নি

গাফফার খান চৌধুরী ॥ কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে মুজিববর্ষের ক্ষণগণনার অনুষ্ঠান শুরু হয়। তবে নিরাপত্তার কারণে কাউকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। উপরšুÍ অনলাইনে অনুষ্ঠান দেখার অনুমতি না নেয়া অনেককেই বিশেষ বিবেচনায় ও মানবিক কারণে অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে স্ত্রী ও শিশু সন্তানদের নিয়ে আসা দর্শনার্থীদের বিশেষ মানবিকতা দেখিয়েছেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। তবে প্রবেশের আগে তাদের যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রবেশের আগে তাদের দেহ তল্লাশি করা হয়। প্রত্যেককেই পাঁচটি স্তর পেরিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, যেকোন ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এড়াতে গত সাতদিন ধরে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডসহ আশপাশের এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। মানুষ থেকে শুরু করে যানবাহন সবই ছিল কঠোর নজরদারির মধ্যে। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিতে থাকেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সকাল থেকেই জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড অভিমুখের রাস্তাগুলোতে চেকপোস্ট বসানো হয়। প্রথম ধাপের চেকপোস্ট বসানো হয় শ্যামলীতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ওয়ান্ডার পার্ক হিসেবে পরিচিত শিশু মেলা, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে, ফার্মগেট, খেজুরবাগান আশপাশের সব এলাকায়। এসব চেকপোস্ট থেকে যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। দ্বিতীয় ধাপের চেকপোস্ট বসানো হয় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের আশপাশের রাস্তাগুলোতে। আর তৃতীয় ধাপের চেকপোস্ট বসানো হয় প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রবেশ পথগুলোতে। মোট ১৩টি প্রবেশ পথ তৈরি করা হয়। প্রতিটি প্রবেশ পথে অন্তত ৫০ জন করে পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে। তাদের সহায়তা করেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। প্রথমেই দর্শনার্থীদের সেখানে যাওয়ার পর তল্লাশি করা হয়। এরপর সারিবদ্ধভাবে লাইনে যেতে বাঁশের তৈরি বিশেষ রাস্তা দিয়ে যেতে দেয়া হয়। এরপর দর্শনার্থীদের আর্চওয়ে মেটালডিটেক্টরের ভেতর দিয়ে অনুষ্ঠানস্থলের নির্ধারিত জায়গা যেতে দেয়া হয়। খুবই সুশৃঙ্খলভাবে দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারায়, তারা আনন্দিত বলে জানান। সকাল থেকেই জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের আশপাশে ভিড় করতে থাকে শত শত মানুষ। নিরাপত্তার কারণে তাদের কাউকেই হয়রানির শিকার হতে হয়নি। অনুষ্ঠানের এমন আয়োজনে খুশি দর্শনার্থীরা। অনেককেই পুরো পরিবারসহ আসতে দেখা গেছে। এরমধ্যে অনেক পরিবারের কারও কারও অনলাইনে অনুষ্ঠান দেখার অনুমতিপত্র ছিল না। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে অত্যন্ত মানবিক কারণে ওইসব শিশু কিশোরদের অনুষ্ঠানে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। অনেক শিশু ভেতর প্রবেশের জন্য রীতিমতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে বায়না ধরেন। নিষ্পাপ শিশু কিশোরদের মুখের দিকে তাকিয়ে এমন আবদার অত্যন্ত মানবিকভাবে নিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। শুধু শিশু কিশোর নয়, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও ভেতরে প্রবেশের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে আবদার করেন। শেষ পর্যন্ত মানবিক কারণে তাদেরও প্রবেশ করতে দেয়া হয়। বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়। এরপর গেটগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। গেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও অনেকেই অনলাইনে অনুষ্ঠান দেখার অনুমতিপত্র নিয়ে গেটে হাজির হন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বোঝাতে সক্ষম হন। পরে তারা বাণিজ্য মেলার বিশাল পর্দায় লাইভ অনুষ্ঠান দেখেন। সেখানে শত শত মানুষের ভিড় জমে যায়। যেকোন ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে সেখানেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ও গোয়েন্দারা নজর রাখেন। অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, এসএসএফ, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশসহ সকল বাহিনীর বিপুল সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিটি প্রবেশ পথে অন্যান্য বাহিনীর সদস্য ও বিশেষায়িত বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ছাড়াও পুলিশের কমপক্ষে ৫০ জন করে সদস্য মোতায়েন ছিল। আশপাশের ভবনগুলোতে বসানো হয়েছিল ওয়াচ টাওয়ার। ছিল রুফটপ নিরাপত্তার ব্যবস্থাও। সেখানে শক্তিশালী বাইন্যুকুলার দিয়ে পুরো এলাকার ওপর নজরদারি করা হয়। র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম জনকণ্ঠকে জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে সব ধরনের ব্যবস্থাই ছিল। পেট্রোল ডিউটি থেকে শুরু করে পুরো অনুষ্ঠানস্থল আশপাশের এলাকার ওপর বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। এছাড়া যেকোন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিত এড়াতে বিশাল এই অনুষ্ঠানের পুরো এলাকার ওপর নজর রাখা হচ্ছে।
×