ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বঙ্গবন্ধু বিপিএলে আজ চট্টগ্রাম-রাজশাহী শীর্ষস্থান দখলের লড়াই, দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি ঢাকা-খুলনা

বিপিএলে লীগ পর্ব শেষ হচ্ছে আজ

প্রকাশিত: ০৯:৫২, ১১ জানুয়ারি ২০২০

 বিপিএলে লীগ পর্ব শেষ  হচ্ছে আজ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ চলমান বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) রাউন্ড রবিন লীগপর্বের শেষদিন আজ। গত ১১ ডিসেম্বর মাঠে গড়ানোর পর ৫ ধাপে মোট ৩২ দিনে আজকের দুই ম্যাচ নিয়ে মোট ৪২ ম্যাচ শেষ হবে। ইতোমধ্যেই হয়ে যাওয়া ৪০ ম্যাচের পর এককভাবে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। আজ শেষ ম্যাচে তাদের সেই শীর্ষস্থান ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ। ১৪ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে থাকা রাজশাহী রয়্যালস আজ জিতলেই উঠে আসবে পয়েন্ট টেবিলের এক নম্বরে। আর চট্টগ্রাম জিতে গেলে তাদের এক নম্বরে থেকেই লীগপর্ব শেষ করা নিশ্চিত হবে। চট্টগ্রাম যদি হেরে যায় শেষ পর্যন্ত তাদের অবস্থান কি হবে তা জানা যাবে দিনের দ্বিতীয় ম্যাচের ফলাফল হওয়ার পর। ঢাকা প্লাটুন ও খুলনা টাইগার্স মুখোমুখি হবে সেই ম্যাচে। চট্টগ্রাম হারলে আর ঢাকা জিতলে উঠে আসবে শীর্ষে। কিন্তু ঢাকা হেরে গেলে পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষ চারটি দলের অবস্থানে আসবে পরিবর্তন। তাই আজ শেষদিনও থাকছে উত্তেজনা। আসরের বাইলজ অনুসারে শীর্ষ দুটি দল খেলবে কোয়ালিফায়ার ম্যাচ আর পয়েন্ট টেবিলের তিন ও চারে থাকা দুই দল খেলবে এলিমিনেটর ম্যাচ। শেষ পর্যন্ত এ দুই ম্যাচ কোন দলগুলো খেলবে তা নিশ্চিত হবে আজ। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বেলা ১টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম-রাজশাহী এবং সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে ঢাকা-খুলনা মুখোমুখি হবে। বঙ্গবন্ধু বিপিএলে সিলেট পর্বের শেষদিনে সবার আগে প্লে-অফ নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম। একইদিনে রাজশাহীও পরবর্তী ম্যাচ জিতে প্লে-অফ নিশ্চিত করে। তৃতীয় দল হিসেবে প্লে-অফ নিশ্চিত করতে ঢাকাকে কিছুটা অপেক্ষা করতে হয়েছে। গত বুধবার তারা রংপুরকে হারিয়ে নিজেরা প্লে-অফ নিশ্চিত করে এবং রংপুরের বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে দেয়। এরপরই শুরু হয়ে যায় শীর্ষস্থান দখলের লড়াই। এবারের আসরে প্রথম থেকেই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এগিয়ে ছিল চট্টগ্রাম, তাই বেশিরভাগ সময় শীর্ষস্থানে ছিল তারা। রাজশাহীও বেশ কিছুদিন এক নম্বরে থেকেছে। তবে ঢাকা ও খুলনাকেও দেখা গেছে পয়েন্ট টেবিলের এক নম্বরে। আজ রবিন লীগের শেষদিনে মাঠে নামার আগে শীর্ষস্থানে থেকেই সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠা রাজশাহীর মুখোমুখি হচ্ছে তারা। সমান পয়েন্ট নিয়ে গত মঙ্গলবার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছিল দু’দল। সেই ম্যাচে রাজশাহীকে ৭ উইকেটে বিধ্বস্ত করে নিজেদের শক্তিমত্তার প্রমাণ দেয় চট্টগ্রাম। ওই পরাজয়ে একেবারে শীর্ষস্থান থেকে ছিটকে তিন নম্বরে নেমে গেছে রাজশাহী। এবার সেই পরাজয়ের শোধ তোলার পাশাপাশি আবার এক নম্বরে ফিরে আসার সুযোগ রাজশাহীর। এই মুহূর্তে চট্টগ্রাম ১১ ম্যাচে ৮ জয়ে পেয়েছে ১৬ পয়েন্ট আর রাজশাহীর সমান ম্যাচ খেলে ৭ জয়ে অর্জন ১৪ পয়েন্ট। পিছিয়ে থাকলেও নেট রানরেটে চট্টগ্রামের (০.২৩৮) চেয়ে এগিয়ে আছে রাজশাহী (০.৩৬১)। আর সে জন্যই শীর্ষে উঠতে শুধু জিতলেই চলবে রাজশাহীর। তখন চট্টগ্রামের সঙ্গে পয়েন্ট সমান হয়ে গেলেও তারা উঠে আসবে শীর্ষে। তখন ফলাফলের ব্যবধানের ওপর নির্ভর করবে চট্টগ্রাম কোন অবস্থানে থাকবে। কারণ একইদিনে চলতি আসরের শেষ ম্যাচ খেলবে ঢাকা ও খুলনা। সেই ম্যাচের জয়-পরাজয়ের ওপরও নির্ভরশীল পয়েন্ট টেবিলের অনেক কিছুই। রাজশাহীর কাছে চট্টগ্রাম হেরে গেলে এবং খুলনাকে ঢাকা পরাজিত করলে এক লাফে শীর্ষস্থানে উঠে আসবে ঢাকা। এই মুহূর্তে ১১ ম্যাচে ৭ জয়ে ১৪ পয়েন্ট পাওয়া ঢাকার রানরেটই এর মূল কারণ। চট্টগ্রাম ও খুলনার চেয়ে রানরেট অনেক বেশি ঢাকার (০.৭০১)। তাই চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও ঢাকার পয়েন্ট সমান ১৬ হয়ে গেলেও ঢাকা হবে এক নম্বর দল। আর জয়-পরাজয়ের ব্যবধানের ভিত্তিতে রাজশাহী ও চট্টগ্রামের মধ্যে নেট রানরেটে এগিয়ে থাকা দলটি থাকবে দ্বিতীয় অবস্থানে। তবে চট্টগ্রাম জিতে গেলে আর কারও সুযোগ থাকছে না শীর্ষে উঠে আসার। কারণ সবচেয়ে বেশি ১৮ পয়েন্ট নিয়ে এককভাবেই এক নম্বর দল হিসেবে কোয়ালিফায়ার খেলবে তারা। আর কোয়ালিফায়ারে তাদের প্রতিপক্ষ কে হবে সেটা নির্ধারিত হবে ঢাকার ম্যাচটির ফলাফলের ওপর। রাজশাহীর পর ঢাকাও হেরে গেলে নেট রানরেটে এগিয়ে থাকা দলটি দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে এবং কোয়ালিফায়ার খেলবে। সেক্ষেত্রে সমীকরণে আসবে খুলনাও। চট্টগ্রাম ও ঢাকা হারলে খুলনার সুযোগ রয়েছে ওপরের দিকে উঠে আসার। এমনকি শেষ পর্যন্ত খুলনাও হতে পারে কোয়ালিফায়ার খেলা দল। লীগপর্ব শেষে শীর্ষ দুটি দল খেলবে কোয়ালিফায়ার। আর এই কোয়ালিফায়ার ম্যাচে বিজয়ীরা সরাসরি পৌঁছে যাবে ফাইনালে। হেরে গেলেও সুযোগ থাকবে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার খেলে ফাইনালে ওঠার সুযোগ। সে কারণেই এত হিসেব-নিকেশ। অপরদিকে এলিমিনেটর ম্যাচে মুখোমুখি হবে পয়েন্ট টেবিলের ৩ ও ৪ নম্বরে থাকা দুটি দল। এই ম্যাচের পরাজিতরা বিদায় নেবে আসর থেকে। আর জয়ীরা খেলবে ফাইনালে ওঠার ম্যাচে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে। এ কারণে আজ দুটি ম্যাচই দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। এবার বঙ্গবন্ধু বিপিএলের লীগপর্বে দেখা গেছে পেসারদের দাপট। বাংলাদেশের পেসাররাই তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। রংপুরের বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের তরুণ বাঁহাতি মেহেদী হাসান রানা এগিয়ে আছেন। তবে ব্যাটিংয়ে দুই বিদেশী ইংল্যান্ডের ডেভিড মালান ও দক্ষিণ আফ্রিকার রাইলি রুশো এগিয়ে। তাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছেন দেশের ব্যাটসম্যানরাও। তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, মোহাম্মদ নাইম শেখ, মোহাম্মদ মিঠুনরা আছেন খুব কম ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে পরবর্তী অবস্থানে। এবার সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ছিল চট্টগ্রামের ৪ উইকেটে ২৩৮। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে গত ২০ ডিসেম্বর তারা এই সংগ্রহ পেয়েছিল কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে। একই ম্যাচে কুমিল্লা ৭ উইকেটে ২২২ রান তোলার পর বিপিএলের ইতিহাসে এক ম্যাচে সর্বাধিক ৪৬০ রানের রেকর্ড হয়েছে। যে দু’টি সেঞ্চুরি হয়েছে করেছেন বিদেশী দুই ব্যাটসম্যান আন্দ্রে ফ্লেচার ও মালান। বোলিংয়ে ৩ ইনিংসে কোন বোলার নিয়েছেন ৫ উইকেট। সেই কৃতিত্বও বিদেশীদের। ঢাকার পাকিস্তানী পেসার ওয়াহাব রিয়াজ রাজশাহীর বিপক্ষে সেরা বোলিং করেছেন ৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে। এছাড়া খুলনার প্রোটিয়া পেসার রবি ফ্রাইলিঙ্ক (৫/১৬) ও ঢাকার লঙ্কান পেসার থিসারা পেরেরা (৫/৩০) এই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। দলগতভাবে বিপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে নৈপুণ্য দেখিয়েছে সিলেট থান্ডার। ১২ ম্যাচে মাত্র একটি জয় পেয়েছে তারা। এর আগে কোন দলই এত কম জয় নিয়ে লীগপর্ব শেষ করেনি।
×