ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকাকে হারিয়ে সান্ত্বনার জয় রংপুরের

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ১১ জানুয়ারি ২০২০

ঢাকাকে হারিয়ে সান্ত্বনার জয় রংপুরের

মিথুন আশরাফ ॥ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল টি২০) শুরুটা হার দিয়ে হলেও শেষটা জয় দিয়েই করল রংপুর রেঞ্জার্স। শুক্রবার নিজেদের শেষ ম্যাচে ঢাকা প্লাটুনকে ১১ রানে হারিয়ে দিয়েছে রংপুর। দলটি আগেই লীগ থেকে বিদায় নিয়েছে। তবে ১২ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে শেষ হলো। এটাই রংপুরের প্রাপ্তি। আর ঢাকা ১১ ম্যাচে ৭ জয়ে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা প্লাটুন। ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে ৯ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৪৯ রানের বেশি করতে পারেনি রংপুর। ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যান লুইস গ্রেগরি সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেন। থিসারা পেরেরা ৩ উইকেট শিকার করে নেন। জবাব দিতে নেমে এই রানও করতে পারেনি ঢাকা। ৯ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৩৮ রানের বেশি করতে পারে তারা। ২ উইকেট করে নেয়া জুনাইদ খান, তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানির অসাধারণ বোলিংয়ে ঢাকাকে হারাতে পারে রংপুর। ঢাকার হয়ে তামিম ইকবাল সর্বোচ্চ ৩৪ রান করেন। ঢাকার ইনিংসে শুরুতেই এনামুল হক বিজয় (৫) রানে আউট হয়ে যান। ‘নো’ বলে রান নিতে গিয়ে আউট হন বিজয়। বিজয় আউট হওয়ার পর অবশ্য তামিম ইকবাল ও মেহেদী হাসান মিলে খানিক সামলে নেন। দুইজন মিলে দলকে ৫০ রানে সহজেই নিয়ে যান। যখন দলের ৫৫ রান হয় তখন মেহেদী (২০) আউট হয়ে যান। দুইজনের ৪৬ রানের জুটি হয়। তামিম বরাবরের মতো উইকেট টিকিয়ে রেখে খেলতে থাকেন। টি২০ স্টাইলের সঙ্গে মিল রেখে তামিম ব্যাটিং করছেন না। তিনি ধীরে ধীরে এগিয়ে চলতে চাচ্ছেন। দল তামিমের কাছ থেকে নাকি এমনই চায়। কিন্তু খুব বেশিদূর যে যেতে পারছেন না তামিম। দলও তাতে ভোগে। দলের ৭৯ রানের সময় ৩৩ বলে ৩৪ রান করে আউট হয়ে যান তামিম। মুমিনুল হকও (১৮) কিছুক্ষণ পর যখন আউট হয়ে যান তখন বিপদেই পড়ে যায় ঢাকা। থিসারা পেরেরাকে নিয়ে আশা থাকে। কিন্তু তিনিও হতাশ করেন। দলের ১০০ রান হওয়ার পর আর ২ রান হতেই পেরেরা (৮) আউটের পর তো হারের মুখেও পড়ে যায় ঢাকা। এরপর টপাটপ উইকেট পড়তে থাকে। ১১৯ রানের মধ্যে ৯ উইকেট হারিয়ে হারের খপ্পরে পড়ে যায় ঢাকা। আসিফ আলী (১), আরিফুল হক (১), ফাহিম আশরাফ (৩), শাদাব খান (১৬) আউট হয়ে যান। জুনাইদ খান ১৮তম ওভারের শেষ দুই বলে ফাহিম ও শাদাবকে আউট করে দেন। ১১ রানের মধ্যে ৪ উইকেটের পতন ঘটে। ৬ বলে জিততে ২৩ রানের প্রয়োজন থাকে। শেষ ওভারে ১১ রানের বেশি আসেনি। এরমধ্যে নো, ওয়াইড, আবার বাই রানই আসে। ১৩৮ রানের বেশি করা যায়নি। মাশরাফি বিন মর্তুজা শেষ পর্যন্ত ১২ রান করে অপরাজিত থাকেন। কিন্তু দলকে জেতাতে পারেননি। রংপুর এবার বিপিএলে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলতে নামে। শুরুতে ধাক্কা খায়। ২৮ রানের মধ্যেই ২ উইকেট হারিয়ে বসে। শেন ওয়াটসন (১০) ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। ক্যামেরন ডেলপোর্টও (৬) নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। দলের ৫০ রানের সময় যখন নাঈম শেখও (১৭) সাজঘরে ফিরেন তখন বিপদে পড়ে যায় রংপুর। আগেই লীগ থেকে বাদ পড়েছে দলটি। শুরুর মতো শেষেও যদি হারই মিলে তাহলে এরচেয়ে খারাপ আর কি হতে পারে। তা আর হয়নি। জয় নিয়েই শেষ করে রংপুর। খারাপ পরিস্থিতিতে একজন ব্যাটসম্যানকে হাল ধরা ছাড়া কোন গতি থাকেনি। লুইস গ্রেগরি রানের গতি সচল করার চেষ্টা করেন। তার সঙ্গে আল-আমিন জুনিয়র উইকেট আঁকড়ে থাকেন। রানও তুলতে থাকেন। দলের রান ১০০ রানের কাছেও নিয়ে যান গ্রেগরি ও আল-আমিন জুনিয়র। যখন দলের রান ৯৯ হয় তখন গ্রেগরিও (৪৬) আর টিকে থাকতে পারেননি। থিসারা পেরেরা আউট করে দেন গ্রেগরিকে। তাতে করে রংপুর বিপত্তিতেই পড়ে যায়। গ্রেগরি উইকেটে থাকতে বড় স্কোর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তিনি আউট হতেই যেন সেই আশা শেষ হয়ে যায়। ১৪তম ওভারে গিয়ে রংপুর ১০০ রান করে। আল-আমিন জুনিয়র ও জহুরুল ইসলাম অমি মিলে দুর্দান্ত ব্যাটিং করতে থাকেন। আল-আমিন ব্যাটিং ঝড় তুলতে শুরু করেন। দলকে ১৪০ রানেও নিয়ে যান। এমন সময় ২৪ বলে ৩৫ রান করা আল-আমিন জুনিয়রকে আউট করে দেন শাদাব খান। জহুরুলও অসাধারণ ব্যাটিং করতে থাকেন। কিন্তু থিসারা পেরেরার করা শেষ ওভারের চতুর্থ বলে গিয়ে ফুলটস বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে গিয়ে খেলতে যান জহুরুল। বোল্ড হয়ে যান তিনি। ২৪ বলে ২৮ রান করে আউট হন। পরের বলেই তাসকিন আহমেদও বোল্ড হয়ে যান। পেরেরার হ্যাটট্রিকের আশা তৈরি হয়ে যায়। মুস্তাফিজুর রহমানও ব্যাট হাতে নামেন, আর রান আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেন। ওয়াইড বলটিতে রান নিতে গিয়ে আউট হন মুস্তাফিজ। শেষ বলে এক রান নিয়ে দুই রান নিতে গিয়ে আবার আরাফাত সানিও রান আউট হন। শেষ তিন বলে চার উইকেট হারায় রংপুর। এরপরও পেরেরার হ্যাটট্রিক হয়নি। দুই ব্যাটসম্যানকে টানা দুই বলে আউট করা গেলেও পরের দুটি উইকেট রান আউটের কারণে যায়। রংপুর ১৪৯ রানের বেশি করতেও পারেনি। ঢাকার মতো শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের সামনে বড় স্কোর না ছুড়ে দিলে কি আর জেতা যায়? রংপুর এরপরও জিতেছে। বোলারদের ঐক্যবদ্ধ নৈপুণ্যে জয় মিলেছে। তাতে করে শেষটা জয় দিয়েই করতে পেরেছে ঢাকা। স্কোর ॥ ঢাকা প্লাটুন-রংপুর রেঞ্জার্স ম্যাচ- মিরপুর রংপুর রেঞ্জার্স ইনিংস- ১৪৯/৯; ২০ ওভার; ওয়াটসন ১০, নাঈম ১৭, ডেলপোর্ট ৬, গ্রেগরি ৪৬, আল-আমিন ৩৫, জহুরুল ২৮, নাদিফ ২*, তাসকিন ০, মুস্তাফিজ ০, আরাফাত ০; পেরেরা ৩/২২, শাদাব ২/২৫। ঢাকা প্লাটুন ইনিংস- ১৩৮/৯; ২০ ওভার; তামিম ৩৪, বিজয় ৫, মেহেদী ২০, মুমিনুল ১৮, পেরেরা ৮, শাদাব ১৬, আসিফ ১, আরিফুল ১, ফাহিম ৩, মাশরাফি ১২*, হাসান ০*; জুনাইদ ২/২২, তাসকিন ২/২৫, আরাফাত ২/২৯। ফল ॥ রংপুর রেঞ্জার্স ১১ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ লুইস গ্রেগরি (রংপুর রেঞ্জার্স)।
×