ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবাসে স্ত্রী সন্তান ফেলে ডাক্তার স্বামী দেশে অন্তরীণ

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ১১ জানুয়ারি ২০২০

প্রবাসে স্ত্রী সন্তান ফেলে ডাক্তার স্বামী দেশে অন্তরীণ

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ১০ জানুয়ারি ॥ অসুস্থ স্ত্রী সন্তানকে আমেরিকায় ফেলে ডাক্তার দেবব্রত সাহা এখন পাবনার বাড়িতে গোপনে অবস্থান করছেন। ডাক্তার স্বামীর অত্যাচারে গৃহবধূ গৌরপিয়া (বিউটি) সাহা স্কুলপড়ুয়া মেয়েসহ আমেরিকায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। স্বামী দেবব্রত সাহা দীর্ঘকাল স্ত্রী সন্তানের প্রতি কোন দায়িত্ব যেমন পালন করছেন না আবার স্ত্রীকে ডিভোর্সও দিচ্ছেন না। এ পরিস্থিতিতে আমেরিকায় বছরের পর বছর কন্যাসহ অসহায় জীবন কাটাচ্ছেন অসুস্থ বিউটি সাহা। আদালতে ডিভোর্স মামলা দায়ের করায় ডাক্তার দেবব্রত সাহা আমেরিকা থেকে পাবনা শহরের বাড়িতে আত্মগোপন করে আছেন বলে বিউটি সাহা অভিযোগে জানান। তাই বিউটি সাহা মানবিক সহায়তা চেয়ে পাবনা পুলিশ সুপারের কাছে ই-মেলে আবেদন করেছেন। জানা গেছে, ১০ জুলাই ১৯৯৮ সালে নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার চাচকৈড় বাজারের গোপাল চন্দ্র সাহার মেয়ে বিউটি সাহার সঙ্গে পাবনা শহরের শালগাড়ীয়ার সুবোধ সাহার ছেলে আমেরিকা প্রবাসী ডাক্তার দেবব্রত সাহার বিয়ে হয়। বিয়ের ১০-১২ দিন পর দেবব্রত সাহা আমেরিকায় ফিরে যায়। সে সময় বিউটি সাহা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। মেয়ে দেখার ৭ দিনের মাথায় বিউটির বাবা যৌতুকসহ ১০ লাখ টাকা ব্যয় করে মেয়ের বিয়ে দেন। বিয়ের পরও তার বাবাকে তার ভরণপোষণ লেখাপড়ার খরচ বহন করতে হয়। ২০০১ সালে বিয়ের সাড়ে ৩ বছর পর বিউটি সাহা শ্বশুর শাশুড়ির অমতে একাই আমেরিকায় চলে যায়। শ্বশুর শাশুড়ি তাকে আমেরিকায় যেতে বাধা সৃষ্টি করলে পিতার খরচে তিনি আমেরিকায় যান। দেবব্রত মা-বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করায় বিউটির শ্বশুর, শাশুড়ি ও ননদ তাকে কিছুতেই মেনে নেয় না। তাই শ্বশুর বাড়িতে বিউটিকে কাজের মহিলার মতো জীবন কাটাতে হয়। এদিকে আমেরিকা যাওয়ার পর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নানা বিষয়ে বিরোধ দেখা হয়। বিউটি সাহা জানান, স্বামী কখনও কারও সঙ্গে কথা বলতে বা বাইরেও যেতে দিত না। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিউটি সাহার দাম্পত্য জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠে। ইতোমধ্যে ২০০২ সালে বিউটি সাহা কন্যা সন্তানের জননী হন। বিউটির ধারণা ছিল সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে হয়তো ডাক্তার স্বামীর ব্যবহারে পরিবর্তন আসবে। কিন্তু তার জীবনে উল্টো ঘটনা ঘটে। সন্তান জন্ম নেয়ার পর ডাক্তার দেবব্রত সাহার নির্যাতন যেন বেড়ে যায়। এরই মধ্যে দেবব্রত তার মা বাবাকে আমেরিকায় নিয়ে গেলে বিউটি সাহার জীবনে অমাবস্যার ঘোর অন্ধকার নেমে আসে। কথায় কথায় বিউটির ওপর স্বামী দেবব্রত সাহার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। স্বামী শ্বশুর ও শাশুড়ির নির্যাতন এমন পর্যায়ে যায় যে বিউটির সঙ্গে তারা কথা বলাও বন্ধ করে দেন। মায়ের নিষেধাজ্ঞায় স্ত্রীর সঙ্গে এক ঘরে ঘুমানো বন্ধ করে দেয় দেবব্রত সাহা। বিউটি সাহার ছোট শিশু কন্যার সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করে শ্বশুর-শাশুড়ি। তার কন্যা সন্তান ছেলের নয় বলে দাবি করে ডিএনএ টেস্টের জন্য ছেলের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। বিউটি সাহা শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামীর নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে থানায় অভিযোগ দিলে পারিবারিক কোর্ট প্রটেকশন আদেশ দেয়। এর পরও বাড়িতে টিকতে না পেরে বিউটি সাহা ২০০৬ সালে ৩ বছরের মেয়ে দেবী সাহাকে নিয়ে হোমলেস সেন্টারে আশ্রয় নেন। সে থেকে স্বামীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি। বিউটি সাহার মা বাবা ও আত্মীয়রা বার বার বৈবাহিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করেও তাদের একরোখা আচরণের কারণে ব্যর্থ হন। নিরুপায় বিউটি সাহা ৩ বার ডিভোর্স ফাইল করলেও দেবব্রত সাহা তাতে স্বাক্ষর করেননি। তিনি পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। দেবব্রত পাবনা শহরের বাড়িতে গত প্রায় ৩ মাস গোপনে অবস্থান করছেন বলে বিউটি সাহা দাবি করেছেন। সর্বশেষ আমেরিকার আদালত বার বার দেবব্রতকে ডিভোর্সের মামলায় নোটিস করলেও তিনি সাড়া দিচ্ছেন না। এ ব্যাপারে নিউইয়র্কের ব্রুকলিন শহরের ২০৫৫ ওশান এভিনিউ থেকে বিউটি সাহা ফোনে জানান, ডাক্তার ছেলের সঙ্গে মা-বাবা কোন কিছু না দেখেই মেয়ের সুখের জন্য বিয়ে দিলেও ২২ বছর ধরে তিনি সংগ্রাম করতে করতে এখন অসুস্থ মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। স্বামী দেবব্রত দীর্ঘকাল তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখছেন না আবার ভরণপোষণও দিচ্ছেন না। আবার তাকে ডিভোর্স দিয়ে মুক্তিও দিচ্ছেন না। শুধু তাই নয় হাইস্কুল পড়ুয়া মেয়েকেও তিনি কোন খরচ দেয়া দূরে থাক দেখা পর্যন্ত করেন না। শুধু মেয়ের জন্মদিন ও নববর্ষে ইমেইল করেন মাত্র। বিউটি সাহা জানান, তিনি শারীরিক-মানসিক নির্যাতনে এতই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে তাকে স্কুলের শিক্ষিকার চাকরি পর্যন্ত ছেড়ে দিতে হয়। তার স্বামীর ডিভোর্স না দেয়ার কারণ হিসেবে জানান ডিভোর্স দিলে স্ত্রীর ভরণপোষণ ও মেয়ের সাবালকত্ব পর্যন্ত খরচ বহন করতে হবে । এ ভয়েই তিনি বাংলাদেশে পালিয়ে গেছেন। বিউটি সাহা নিরুপায় হয়ে তাই পাবনা পুলিশ সুপারের কাছে মানবিক আবেদন করেছেন। এ ব্যাপারে ডাক্তার দেবব্রতের সঙ্গে চেষ্টা করেও তার সঙ্গে দেখা করা যায়নি।
×