ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কেশবপুরে নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত ॥ বিপাকে কৃষক

৫০ বিলে জলাবদ্ধতা ॥ আবাদ অনিশ্চিত

প্রকাশিত: ০৯:৩৪, ১১ জানুয়ারি ২০২০

৫০ বিলে জলাবদ্ধতা ॥ আবাদ অনিশ্চিত

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেশবপুর, ১০ জানুয়ারি ॥ বোরো আবাদের লক্ষ্যে জলাবদ্ধ বিলের পানি শ্যালো মেশিন দিয়ে নিষ্কাশন করছেন কৃষকরা। পাউবোর বেড়িবাঁধ অপসারণ না করা এবং শ্রীহরি নদীর নাব্য না থাকায় পানি হরিহর ও আপারভদ্রা নদী দিয়ে বেরুতে পারছে না। ফলে পশ্চিম বিলখুকশিয়ার ৪৭ টি মৎস্য ঘেরের বেড়িবাঁধ ভেঙে একাকার হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৫ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। উপচে পড়া সেচের পানি উপজেলার বাগডাঙ্গা ও কালিচরণপুর গ্রামের অর্ধশত বাড়িতে ঢুকে পড়েছে। পানি নিষ্কাশন সম্ভব না হলে চলতি ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হবে না বলে জানিয়েছে কৃষি অফিস। একমাত্র ফসল বোরো আবাদ করতে না পারায় কৃষকরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় যশোর সদরের সুতিঘাটা, মনিরামপুর ও কেশবপুরের পশ্চিমাংশের ২৭ বিলসহ কেশবপুর উপজেলার ৬ ইউনিয়নের প্রায় ৫০টি বিল জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এসব বিলের অতিরিক্ত পানি বিল খুকশিয়ার ডায়েরখালের ৮ ব্যান্ড স্লুইস গেট দিয়ে শ্রীহরি নদীতে নিষ্কাশন হয়ে থাকে। কিন্তু বিল ও খালের তলদেশ থেকে শ্রীহরি নদীর তলদেশ পলিতে উঁচু হওয়ার কারণে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। এছাড়া কেশবপুর পৌর এলাকার বিল গলালিয়া, টেপুর বিল, বিল বলধালি, সদর ইউনিয়ন, মঙ্গলকোটের একাংশ, পাঁজিয়া, সুফলাকাটি ও গৌরিঘোনা ইউনিয়নের বুড়ুলিয়া, সারুটিয়া, কায়েমখোলা, হাড়িয়াঘোপ, ভেরচি, দশকাহুনিয়াসহ প্রায় ৫০ টি বিল জলাবদ্ধ হয়ে রয়েছে। এলাকার কৃষকরা বোরো আবাদের লক্ষ্যে বুড়ুলিয়া ও পাথরা গেটে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি নিষ্কাশন করে বোরো আবাদের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু হরিহর ও আপারভদ্রা নদী খননের জন্য পাউবো বাঁধ দিয়ে আটকে রেখেছে। যে কারণে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সুফলাকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাস্টার আব্দুস সামাদ জানান, জলাবদ্ধ বিলের পানি শ্যালো মেশিন দিয়ে নিষ্কাশন করার কারণে পানি ডায়েরখাল উপচে পশ্চিম বিলখুকশিয়ায় ঢুকছে। ইতোমধ্যে ৪৭ টি মৎস্য ঘেরের বেড়িবাঁধ ভেঙে একাকার হয়ে গেছে। উপচেপড়া পানিতে সুজিত হালদার, রবিন মন্ডল, বিশ্বনাথ মন্ডল, দীপক মন্ডল, সুকদেব মন্ডল, অমল মন্ডলসহ কমপক্ষে ৪৭ টি ঘের মালিকের ঘেরের বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। পানির চাপে এখনও বাঁধ ভাঙা অব্যাহত আছে। উপজেলার বাগডাঙ্গা ও কালিচরণপুর গ্রামের অর্ধশত বাড়ির উঠানে এখন পানি। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে মানুষ চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবে। পানির কারণে এসব বিলে এবার বোরো আবাদ হবে না। শেষ পর্যন্ত পানি নিষ্কাশন সম্ভব না হলে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক জমিতেও বোরো আবাদ হবে না। সেক্ষেত্রে গত বছরের চেয়ে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন ধান কম উৎপাদন হবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাদেব চন্দ্র সানা জানান, চলতি বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৫ হাজার হেক্টর জমি। জলাবদ্ধতার কারণে এবার বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। বার বার মিটিং করে পানি সরানোর কথা জানানো হচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। তারা বলেছে পানি সরিয়ে দেবে। কিন্তু তেমন সময়ও নেয়। শেষ পর্যন্ত পানি নিষ্কাশন সম্ভব না হলে জলাবদ্ধতার কারণে ৪ থেকে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ সম্ভব হবে না। উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় গত ডিসেম্বরের মধ্যে নদীর বাঁধ অপসারণ করে পানি নিষ্কাশন করে দেবার প্রতিশ্রুতি দিলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি। ‘পানি সরাও কৃষক বাঁচাও’ আন্দোলন ও নাগরিক সমাজের নেতা এ্যাডভোকেট আবুবকর সিদ্দিকী বলেন, বিলের পানি নিষ্কাশনে ইতোমধ্যে স্থানীয় ও জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। তারা পানি নিষ্কাশনে ব্যর্থ হয়েছে। যার কারণে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। সুফলাকাটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুনজুর রহমান বলেন, এক সপ্তাহ ধরে পাঁজিয়া ও সুফলাকাটি ইউনিয়নের ১০/১২টি বিলের পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে ২৫টি স্যালো মেশিন দিয়ে। কিন্তু হরিহর নদীতে বাঁধ থাকায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আপারভদ্রা দিয়ে পানি শ্রীহরি নদীতে নিষ্কাশন হতে পারছে না। কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুন্সি আছাদুল্লাহ বলেন, ২৭ বিলের পানি ডায়েরখাল হয়ে শ্রীহরি নদীতে নিষ্কাশন হয়ে থাকে। কিন্তু বিল ও খালের চেয়ে ওই নদীর তলদেশ উঁচু হওয়ায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। সে কারণে ডায়েরখালের পানি উপচে পড়ছে। খনন কাজ সম্পূর্ণ না হলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূসরাত জাহান জানান, এ বিষয়ে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। বিষয়টি আমি দেখব।
×