ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পকলায় সংস্কার নাট্যদলের ‘গীতি চন্দ্রাবতী’ নাটকের মঞ্চায়ন

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ১১ জানুয়ারি ২০২০

 শিল্পকলায় সংস্কার নাট্যদলের  ‘গীতি চন্দ্রাবতী’  নাটকের মঞ্চায়ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় ‘গীতি চন্দ্রাবতী’ নাটকের বিশেষ মঞ্চায়ন হলো। সংস্কার নাট্যদলের সপ্তম প্রযোজনা ‘গীতি চন্দ্রাবতী’নাটকটি রচনা করেছেন নয়ান চাঁদ ঘোষ। নাটকটির মঞ্চ সঙ্গীত ও নির্দেশনা দিয়েছেন ড. ইউসুফ হাসান অর্ক। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন মনামী ইসলাম কনক, বাপ্পী সাইফ, ফাতেমা তুজ জোহরা ইভা, আশিকুর রহমান, নাবা চৌধুরী, খন্দকার রাকিবুল হক, মাসুদ কবির, হুমায়রা তাবাসসুম নদী, রাকিবুল ইসলাম রাসেল, মেছবাহুর রহমান, জান্নাত তাসফিয়া বাঁধন, ইগিমি চাকমা, মোস্তফা জামান সৌরভ, উষ্মিতা চৌধুরী, নির্ঝর অধিকারী, মায়ান মাহমুদ, টুটুন চাকলাদার, মোস্তাফিজুর রহমান মফিজ, সানাউল্লা সান্টু। নাটকের সহ-নির্দেশনা খন্দকার রাকিবুল হক, পোশাক আইরিন পারভীন লোপা, আলো অম্লান বিশ্বাস, কোরিওগ্রাফি করেছেন শ্রাবন্তী গুপ্ত, প্রপ্স এ কে আজাদ সেত, আলো সহকারী সাজ্জাদ হাওলাদার, প্রপ্স ব্যবস্থাপনা মাসুদ কবির, পোশাক ব্যবস্থাপনা, ফাতেমা তুজ জোহরা ইভা, মিলনায়তন ব্যবস্থাপক ইসমাইল হোসেন, সাইফুল ইসলাম, সাজিদ আহমেদ উৎস, সহমঞ্চ ব্যবস্থাপনা মাসুদ কবির, রূপসজ্জা শুভাশীষ দত্ত তন্ময়, মঞ্চ ব্যবস্থাপনা হুমায়রা তাবাসসুম নদী, সহ প্রযোজনা অধিকর্তা আশিকুর রহমান, সেলিম রেজা স্বপন, মেছবাহুর রহমান, প্রযোজনা অধিকর্তা, এন ডি চঞ্চল। ‘গীতি চন্দ্রাবতী’ নাটকের গল্পে দেখা যায় বাল্যকালে চন্দ্রাবতীর বন্ধু ও খেলার সাথী ছিল জয়ানন্দ নামের এক অনাথ বালক। কৈশোর উত্তীর্ণ হলে স্থির হয় বিয়ে করবে তারা। ঠিক হয় বিয়ের দিন। এরই মাঝে জয়ানন্দ প্রেমে পড়ে এক মুসলিম নারী আসমানীর। জয়ানন্দ ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য হয় এবং বিয়ে করে আসমানীকে। যেদিন জয়ানন্দ বিয়ে করে সেইদিনই চন্দ্রাবতীর সঙ্গে তার বিয়ে হওয়ার কথা। বধূ সাজে সজ্জিত চন্দ্রাবতী জানতে পারে জয়ানন্দ বিয়ে করেছে অন্যত্র। ব্যথাতুর চন্দ্রাবতী প্রতিজ্ঞা করে কুমারী থেকে শিবের সাধনায় জীবন কাটাবে। পিতার কাছে অনুমতি চাইলে চন্দ্রাবতীকে তিনি পরামর্শ দেন রামায়ণ লেখার। চন্দ্রাবতী শুরু করে শিব স্তুতি ও সাহিত্য সাধনা। এর মাঝে কেটে যায় বেশ কিছুকাল। এক সময় জয়ানন্দ উপলব্ধি করে আসমানীর প্রতি তার টান মোহ মাত্র। প্রকৃতপক্ষে চন্দ্রবতীকেই ভালবাসে সে। বুঝতে পারে ভুল হয়ে গেছে বড়। ভুল শোধরাতে জয়ানন্দ সন্ধ্যার দিকে এসে পৌঁছায় চন্দ্রাবতীর মন্দিরে। চন্দ্রাবতী তখন রুদ্ধদ্বার ধ্যানমগ্ন। জয়ানন্দ মন্দিরের দরজায় এসে ডাকাডাকি করে অনেক বার, কড়াও নাড়ে। কিন্তু ধ্যান ভাঙ্গেনি চন্দ্রবতীর। ব্যর্থ জয়ানন্দ মন্দিরের দরজায় একটি কবিতা লিখে বিদায় নেয় চিরদিনের মতো। ধ্যান ভাঙলে চন্দ্রাবতী মন্দির পরিষ্কার করার জন্য নদীর ঘাটে যায় জল আনতে। সেখানে গিয়ে দেখে, জয়ানন্দের নিথর দেহ ভাসছে নদীর জলে। এভাবেই এগিয়ে যায় নাটকের কাহিনী। প্রসঙ্গত, কোন দিবস বা উৎসবকেন্দ্রিক নয়, ক্ষমতার মসনদ দখলের নোংরা রাজনীতি, উগ্র মৌলবাদ এবং সামাজিক অসাম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে নাটককে বেছে নিয়েছে সংস্কার নাট্যদল। দেশের গ্রুপ থিয়েটার চর্চা এখন আর কোন শখের বিষয় নয় বরং এটি একটি আন্দোলনের নাম। নাটকের ভাষায় উঠে এসেছে, রাষ্ট্র ও সমাজের সব অন্যায় অত্যাচার জুলুম নির্যাতনের কথা। সংস্কার নাট্যদল সব অনাচারের বিরুদ্ধে। জনতার সামাজিক রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সাম্যে বিশ্বাস করে সংস্কার নাট্যদল। মিল কারখানায় সারাদিন কাজ করে সন্ধ্যায় সুস্থ নাট্যচর্চায় নিজেকে সম্পৃক্ত রাখার তাগিদেই ১ বৈশাখ ১৪১৬, ২০০৯ সালের ১৪ এপ্রিল সংস্কার নাট্যদলের জন্ম হয়। সংস্কার বিশ্বাস করে, সংস্কৃতি কর্মীরাই এগিয়ে নিয়ে যাবে সমাজের চাকা। সমাজকে এগিয়ে নেয়ার এ যাত্রায় নাট্যদর্শকদের সঙ্গে থাকার স্বনির্বন্ধ আহ্বান জানায় তারা।
×