ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

টঙ্গীতে ১০ লেনে আধুনিক ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৮:৫১, ১১ জানুয়ারি ২০২০

 টঙ্গীতে ১০ লেনে আধুনিক ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গাজীপুরের সড়ক যোগাযোগ নিরবচ্ছিন্ন করতে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত পৃথক বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে গাজীপুর থেকে ২০ মিনিটে পৌঁছা যাবে বিমানবন্দর। ছয় লেনের রাস্তার দুই লেন দিয়ে শুধু দ্রুত গতির বাসই চলবে, অন্য কোন যানবাহন নয়। এই প্রকল্পের আওতায় ঢাকার অদূরে টঙ্গীতে ১০ লেন বিশিষ্ট আধুনিক ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। উড়াল সড়কের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ব্রিজটি নির্মাণ করছে সরকার। বলা হচ্ছে, এ ধরনের ব্রিজ বাংলাদেশে এই প্রথম। টঙ্গী ব্রিজ এলিভেটেড হবে। যাত্রী সাধারণের জন্য ব্রিজে উঠতে থাকছে এস্কেলেটর (সচল সিঁড়ি), লিফট ও সাধারণ সিঁড়ি। ১০ লেন বিশিষ্ট টঙ্গী ব্রিজের মোট দৈর্ঘ্য হবে ৮০০ মিটার। ঢাকা থেকে আশুলিয়া হয়ে দুটি র‌্যাম্প নামবে এবং আশুলিয়া থেকে ঢাকায় দুটি র‌্যাম্প উঠবে ব্রিজে। চারটি লেন ব্যবহার করা হবে পৃথক বাস রুটের জন্য, বাকি দুই লেনে সাধারণ মানুষ পায়ে হেঁটে চলাচল করতে পারবেন। ঢাকা শহরসহ এর নিকট জেলাগুলোর জন্য একটি সমন্বিত, বহুমুখী, সময় ও অর্থসাশ্রয়ী যোগযোগ ব্যবস্থা নির্মাণে এ প্রকল্পটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। প্রকল্পের মাধ্যমে অর্জিত সুফল এরইমধ্যে বিআরটির অন্য প্রকল্পের সঙ্গে সমন্বয় করে সরকার ২০৩৫ সালের মধ্যে একটি আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারবে। গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কে নিরবচ্ছিন্ন যান চলাচলে দুই পাশে বিশেষ লেন (বিআরটি) নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। উত্তরা হাউসবিল্ডিং থেকে চেরাগ আলী পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার এলিভেটেড সড়ক নির্মাণ করা হবে। এই এলিভেটেড সড়কের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই টঙ্গীতে ১০ লেন আধুনিক ব্রিজ। ১০ লেন টঙ্গী ব্রিজসহ সাড়ে চার কিলোমিটার এলিভেটেড সড়ক নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ৯৩৫ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্রিজ ও এলিভেটেড সড়ক কাজের অগ্রগতি ২৫ শতাংশ। সাড়ে চার কিলোমিটার এলিভেটেড সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ছয়টি স্টেশন, রোড, ড্রেন ও মাটির কাজও করা হবে। প্রকল্পের পরিচালক লিয়াকত আলী বলেন, বাংলাদেশে এবারই প্রথম ১০ লেন ব্রিজ হচ্ছে টঙ্গীতে। ব্রিজে সাধারণ যাত্রীদের চলাচলের সুবিধার্থে এস্কেলেটর-লিফট ও সাধারণ সিঁড়ি থাকবে। দ্রুত গতিতে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। টঙ্গী ব্রিজের কাজ সম্পূর্ণ হলে এটা দর্শনীয় স্থানেও পরিণত হবে। শুধু ১০ লেন বিশিষ্ট টঙ্গী ব্রিজ নির্মাণ নয়, পাশাপাশি ৩ হাজার ৮৯ মিটার দৈর্ঘ্যরে ছয়টি ফ্লাইওভারও নির্মাণ করা হবে। ছয়টি ফ্লাইওভারের মধ্যে রয়েছে বিমানবন্দর ফ্লাইওভার ৮১৫ মিটার, জসিমউদ্দিন ফ্লাইওভার ৫৮০ মিটার, কুনিয়া ফ্লাইওভার ৫৫০ মিটার, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি ফ্লাইওভার ৫৫০ মিটার, ভোগড়া ফ্লাইওভার ৫৮০ মিটার ও জয়দেবপুর ফ্লাইওভার ২ হাজার ১৪ মিটার। গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কে নিরবচ্ছিন্ন যান চলাচলে দুই পাশে বিশেষ লেন (বিআরটি) নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ সাত বছরে প্রকল্পের মোট ফিজিক্যাল ৩৩ শতাংশ। শুরু থেকে প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে ৯৫৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের মোট বরাদ্দ ছিল ৪৫৬ কোটি ৪৩ লাখ। এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৪৬ কোটি ৬৩ লাখ বা ২৪ শতাংশ। সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, সেতু বিভাগ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এক প্রকল্পের আওতায় তিন বিভাগ পৃথক পৃথকভাবে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে ইতোমধ্যে বেড়েছে প্রকল্প ব্যয়। প্রথম সংশোধোনীতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীতে আরও ২ হাজার ২২৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ৪ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা করা হয়েছে। প্রকল্পটির কাজ ২০১৬ সালে শেষ করার লক্ষ্য ছিল। এরপর প্রকল্পের সময় আরও দুই বছর বাড়ানো হয়। নতুন সংশোধনী প্রস্তাবে বাস্তবায়ন মেয়াদ ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। প্রকল্পের সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের কাজের পরিধিও অনেক বেশি। এই অংশের প্রকল্প পরিচালক চন্দন কুমার বসাক বলেন, সব ঝামেলা কাটিয়ে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। মাটির নিচের কাজ অর্থাৎ পাইল-পিয়ার ও ড্রেনের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। এখন জনভোগান্তি ছাড়াই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের জন্য এমন একটি আধুনিক প্রকল্প উন্নয়নের মাইল ফলকও বটে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ফরাসী দাতা সংস্থা এএফডি, গ্লোব্যাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (জিইএফ) প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে ১ হাজার ৬৫০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় ১ দশমিক ৯০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ, বিমানবন্দরে ৫৫০ মিটার আন্ডারপাস, প্রকল্প এলাকায় ২০ হাজার বর্গমিটারের একটি বাস ডিপো নির্মিত হবে। ফুটপাতসহ উভয়পাশে উচ্চ ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ২৪ কিলোমিটার ড্রেন, আটটি কাঁচাবাজার ও ১৯টি বিআরটি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। বিআরটি করিডোর উভয়পাশে সার্ভিস লেনসহ ২০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার পৃথক বাসরুট, ফ্লাইওভার ছয়টি, সংযোগ সড়ক ১৪১টি, মার্কেট উন্নয়ন ১০টি, স্টর্ম ড্রেন ১২ কিলোমিটার, আট লেন বিশিষ্ট টঙ্গী সেতু, গাজীপুর বাস ডিপো, জয়দেবপুর বাস টার্মিনাল ও বিমানবন্দর বাস টার্মিনাল এবং পিপিপির ভিত্তিতে বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকায় মাল্টিমোডাল হাব নির্মাণ করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পৃথক ১২০টি আর্টিকুলেটেড আধুনিক বাসে গাজীপুর থেকে বিমানবন্দরে পৌঁছে যাবেন যাত্রীরা। প্রকল্পের আওতায় সড়কের উভয়পাশে ডেডিকেটেড বিআরটি লেন নির্মাণ করা হবে। এই লেন দিয়ে শুধু আর্টিকুলেটেড (দুই বগির জোড়া লাগানো) বাস চলবে। দুটি কোচ জোড়া দিয়ে বানানো এ বাসের দৈর্ঘ্য হবে ১৮ মিটার; তবে সাধারণ বাসের থেকে যাত্রীধারণ ক্ষমতা দ্বিগুণ। প্রায় দেড় শ’ জন যাত্রী একটি বাসে ভ্রমণ করতে পারবেন। বিশ্বের নানা দেশে বেন্ডি বাস, ট্যান্ডেম বাস, ব্যানান বাস, ক্যাটারপিলার বাস বা এ্যাকর্ডিয়ন বাস নামে পরিচিত আর্টিকুলেটেড বাস। স্মার্টকার্ড ও ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করা হবে এ বাসে। ডেডিকেটেড রুটজুড়ে থাকবে স্টপেজ। বাসগুলো কয়েকটি নির্দিষ্ট কোম্পানির মাধ্যমে চালানো হবে। এই রুটে তিন মিনিট পরপর বাস পাওয়া যাবে। থাকবে ইলেকট্রনিক ভাড়া নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও।
×