ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আধুনিক যন্ত্র দিয়ে রাজধানীর ধূলি দূষণ দূর করার নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ১১ জানুয়ারি ২০২০

আধুনিক যন্ত্র দিয়ে রাজধানীর ধূলি দূষণ দূর করার নির্দেশ

মশিউর রহমান খান ॥ সনাতনি পদ্ধতি বাদ দিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে রাজধানীর ধূলিদূষণ রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সরকার চায় রাজধানী হোক ধূলিমুক্ত ঝকঝকে তকতকে রাস্তার শহর। এ জন্য অতিদ্রুতই কমপক্ষে ২০টি রোড সুইপার মেশিন কেনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে মন্ত্রণালয়। এছাড়া অলিগলি থেকে রাজপথ নগরীর প্রতিটি রাস্তাই সুইপিং মেশিন ব্যবহারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ধূলি দূষণের সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধেও সর্বোচ্চ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা যে সকল প্রতিষ্ঠান মানবে না তাদেরকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া ক্রমান্বয়ে শলার ঝাড়ু দিয়ে ম্যানুয়ালি পদ্ধতিতে রাজধানীতে নিত্য জমা হওয়া রাস্তার ধূলি সম্পূর্ণ পরিষ্কার করার কাজ বন্ধ করারও ব্যবস্থা নিতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। মূলত রাজধানীকে পরিবেশবান্ধব ও বাসযোগ্য রোগমুক্ত নগরী গড়ে তুলতেই এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। বর্তমানের রাস্তা পরিষ্কারের পদ্ধতি ক্রমান্বয়ে বাদ দিয়ে আধুনিক সুইপিং মেশিন দিয়ে রাস্তার সকল বালি সম্পূণভাবে পরিষ্কারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এমপি। সরেজমিনে দেখা যায়, বর্তমান পদ্ধতিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মী দ্বারা রাতের বেলায় রাস্তার ধুলাবালি পরিষ্কার করা হয়। কখনো কখনো সকালেও এসব ধুলা পরিষ্কার করতে দেখা যায়। রাস্তার একপাশে ধুলা পরিষ্কার করতে দেখা গেলেও উড়ে গিয়ে অন্যপার্শ্বে ধুলা জমতে থাকে। এছাড়া ধুলা উড়ার কারণে স্বাসকষ্ট এলঅর্জিসহ নানা প্রকার রোগ জন্ম নেয়। দীর্ঘবছর ধরে চলে আসা এ রীতি থেকে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ বের হতেই পারছেন না। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে রাস্তার ধুলা পরিষ্কারের জন্য স্বাস্থ্যবান্ধব রোড সুইপার মেশিন দিয়ে রাস্তার ময়লা পরিষ্কার করতে দেখা যায়। ফলে ধুলার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তার ওপরে থাকা সকল প্রকার শুকনো আবর্জনাও টেনে নেয় এসব সুইপিং মেশিন। বর্তমানের ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে রাস্তার ধুলাবালি কোনক্রমেই পুরোপুরি পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না বিধায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় স্থায়ীভাবে এ ধূলিদূষণ রোধ করতে এমন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান সনাতনি পদ্ধতি স্থায়ীভাবে বন্ধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এরই প্রাথমিক ধাপ হিসেবে মন্ত্রণালয় নিজস্ব অর্থে প্রয়োজনে ডিপিপি সংশোধন করে হলেও নগরীর ধূলি দূষণ রোধে অতি দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতে দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। অপরদিকে রাস্তায় ধুলা সৃষ্টির অন্যতম কারণ হিসেবে জানা গেছে, অনেক রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি শেষে রাস্তা পুনর্নির্মান কাজ শেষ করার নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার দীর্ঘদিন পরও সড়কে কার্পেটিং না করায় রাজধানীর ধূলিদূষণ বাড়ার অন্যতম একটি কারণ বলেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় রাজধানীর রাজপথ থেকে শুরু করে অলিগলির সড়কগুলো ব্যবহার করতে গিয়ে নগরবাসীকে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়তে হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে মেট্রোপলিটন আইন অনুযায়ী আইন অমান্যকারী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক জরিমানা ধার্য করা ও রাজউকের ইমরাত নির্মাণের নক্সা অনুমোদনের সময় বায়ু ও শব্দদূষণ না করার জন্য বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা প্রদানের জন্য বলা হয়েছে। গত নবেম্বর মাসে বায়ু ও শব্দদূষণ রোধে করণীয় বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় নিজেদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ সভায় এসব বিষয় উঠে আসে। এ সময় দ্রুততার সঙ্গে কিভাবে ধূলি দূষণ রোধ করা যায় তার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে বলা হয়। যা বাস্তবায়নের লক্ষে দুই সিটি কর্পোরেশনকে কাজ শুরু করতে নির্দেশ নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। বর্তমানে শুকনো মৌসুম হওয়ায় রাস্তায় ধূলির পরিমাণ অনেক বেড়ে গিয়েছে। এ থেকে নগরবাসীকে প্রাথমিকভাবে রক্ষার জন্য অপরদিকে রাজধানীর ধূলির মাধ্যমে সৃষ্ট বায়ু দূষণের সঙ্গে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভূমিকা থাকায় এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যেই ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম নিজেই পরিবেশ রক্ষায় ও বায়ু ও ধূলিদূষণ রোধে মাঠে নেমেছেন। যেসব কারণে রাজধানীর বায়ুদূষণ হচ্ছে তা বন্ধে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় দেয়া নির্দেশনা বাস্তবায়নে ও নগরবাসীকে সুন্দর পরিবেশ প্রদানের অংশ হিসেবেই এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। রাজধানীর পরিবেশ রক্ষায় অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় নিজেদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে জানানো হয়, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বা মেরামত এবং শহরে যে কোন প্রকার স্থাপনা নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে অনেক দেরি হয়। এ অবস্থায় সড়কগুলো ব্যবহার করতে গিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়ছেন নগরবাসী। এ অবস্থায় দ্রুত সড়ক মেরামত কাজ সম্পন্ন করে কার্পেটিং এ বিলম্ব না করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ও পরিবেশ রক্ষায় ও নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শুকনো মৌসুমে বায়ু ও ধূলিদূষণ যাতে সম্পূর্ণরুপে বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট সকল সিটি কর্পোরেশন ও এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছে। ধূলি দূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে রাস্তা মেরামতের সময় শহরের রাস্তা কাটা এবং বাড়ি নির্মাণের জন্য বালি, কঙ্কর ও অন্যান্য সামগ্রী স্তূপ করে রাখা হয়। খোলা অবস্থায় থাকার কারণে এ থেকে ধূলি বাতাসে মিশে বায়ুদূষণ হচ্ছে। নির্মাণ কাজ এবং ইট পরিবহনের কারণেও শব্দ ও বায়ুদূষণ হচ্ছে। মেট্রোপলিটন আইন অনুযায়ী আইন অমান্যকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক জরিমানা করতে হবে। এছাড়া সভায় রাজউকের ইমরাত নির্মাণের নক্সা অনুমোদনের সময় বায়ু, ধূলি ও শব্দদূষণ না করার জন্য বিভিন্ন শর্তজুড়ে দেয়ার কথাও বলা হয়। এ জন্য রাজধানী উন্নয়ন কতৃপক্ষ (রাজউক) অতিদ্রুত মাঠে নামবে বলে জানা গেছে। ধূলির মাধ্যমে বায়ুদূষণের প্রভাব তুলে ধরে পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ধূলিসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে বায়ুদূষণের ফলে আমাদের স্থাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে এবং জিডিপির ওপরও প্রভাব পড়ছে। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বায়ুদূষণের মাত্রা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাস্তার ধুলাবালি থেকে বায়ুদূষণ রোধে বর্তমানে যে প্রক্রিয়ায় পানি ছিটানো হচ্ছে তাতে পনি অনেক নষ্ট হচ্ছে। বায়ুদূষণ রোধে শহরের রাস্তায় পানি স্প্রে করে ছিটানো, বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করার পর থেকে রাখা এবং দ্রুত কার্পেটিং করা, বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ করা, বায়ু দূষণকারী ইটভাঁটির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা এবং মোটরযানের ফিটনেস নবায়নের সময় কালো ধোঁয়া নির্গমণ পরীক্ষা করার সুপারিশ করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, রাজধানীর ধূলির মাধমে পরিবেশ দূষণ বর্তমানে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সারাবিশ্ব যেখানে রাস্তাকে ধুলাবালি মুক্ত রাখার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির আশ্রয় নিলেও আমরা এখনও রাস্তা পরিষ্কারে সনাতনি পদ্ধতির শলার ঝারু ব্যবহার করছি। তাই সনাতনি পদ্ধতি বাদ দিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে রাজধানীর ধূলিদূষণ রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে জন্য অতিদ্রুতই কমপক্ষে ২০টি রোড সুইপার মেশিন কেনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে রাজধানীর সকল রাস্তাই মেশিন দিয়ে পরিষ্কার করা হবে। একইসঙ্গে রাজধানীর ধূলিদূষণ বন্ধে যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ধূলি দূষণের সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধেও সর্বোচ্চ ও দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা যে সকল প্রতিষ্ঠান মানবে না তাদেরকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। এছাড়া ক্রমান্বয়ে শলার ঝাড়ু দিয়ে ম্যানুয়ালি পদ্ধতিতে রাজধানীতে নিত্য জমা হওয়া রাস্তার ধূলি সম্পূর্ণ পরিষ্কার করার কাজ বন্ধ করারও ব্যবস্থা নিতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মূলত রাজধানীকে ধূলিমুক্ত পরিবেশবান্ধব ও বাসযোগ্য রোগমুক্ত নগরী গড়ে তুলতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া রাজধানীর সার্বিক পরিবেশ সুরক্ষায় পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় উঠে আসা সকল সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কিছু কাজ ইতোমধ্যেই শুরু করা হয়েছে মূলত আমরা চাই রাজধানী হোক ধূলিমুক্ত ঝকঝকে তকতকে রাস্তার শহর। এজন্য মন্ত্রী সমাজের সকল স্তরের নাগরিকদের সহায়তা কামনা করেন।
×