ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পর্যটনে নতুন দিগন্ত

অতিথি পাখির কলরবে মুখর সোনারচর

প্রকাশিত: ০৮:৪৮, ১১ জানুয়ারি ২০২০

 অতিথি পাখির কলরবে  মুখর সোনারচর

অতিথি পাখির কলরবে মুখর হয়ে উঠেছে সাগরপাড়ের দ্বীপ সোনারচরের অভয়ারণ্য। দিগন্ত বিস্তৃত সাগরের নীল জলরাশি, সমুদ্রসৈকত, ঘন অরণ্য আর মাকরসার জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য খাল অতিথি পাখির জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের নিশ্চয়তা এনে দিয়েছে। তাই শীত শুরু হতেই ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির আগমন ঘটেছে সোনারচরে। পাখির নিরাপদ বসবাসে স্থানীয় বন বিভাগের কর্মীরাও আগের তুলনায় অনেক সক্রিয়। যে কারণে পাখির ব্যাপক সমাগমে সোনারচর পর্যটকদের কাছেও ক্রমে আদরণীয় হয়ে উঠেছে। পর্যটকরাও পাচ্ছে স্বস্তি। একটা সময়ে পটুয়াখালীর দক্ষিণে সাগরপাড়ের অনেক দ্বীপেই অতিথি পাখির আগমন হতো। কিন্তু নানাভাবে মানুষের উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় অতিথি পাখির সংখ্যা দ্বীপগুলোতে ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় সোনারচর অতিথি পাখিদের জন্য অনেকটাই নিরাপদ। সোনারচরের অবস্থান পটুয়াখালী জেলা সদর থেকে এক শ’ কিলোমিটারেরও বেশি দক্ষিণে। যোগাযোগ ব্যবস্থা যথেষ্ট দুর্গম। কিন্তু নয়নাভিরাম সৌন্দর্য সোনারচরকে দিয়েছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্রের মর্যাদা। বর্ষা কেটে যেতেই সোনারচরে নামে পর্যটকদের ঢল। যা অব্যাহত থাকে ফের বর্ষা আসার আগ পর্যন্ত। বর্তমান সরকারও সোনারচরকে পর্যটনকেন্দ্রে রূপ দিতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। যার অংশ হিসেবে ২০১২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে সোনারচরকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে সরকারী কাগজপত্রে সোনারচরে ৫ হাজার একরের বনাঞ্চল রয়েছে। বাস্তবে এর পরিমাণ অনেক বেশি। ঘন অরণ্য ছাড়াও সোনারচরে রয়েছে অন্তত পাঁচ কিলোমিটারের সমুদ্র সৈকত। পূর্ব ও দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগরের দিগন্ত বিস্তৃত নীল জলরাশি। রয়েছে প্রচুর খাল-উপখাল। প্রকৃতির এ মনোরম সৌন্দর্য অতিথি পাখির জন্য সোনারচরকে দিয়েছে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। তাই অন্যান্য বছরের মতো এবারও সোনারচরে ঝাঁক বেঁধে অতিথি পাখি আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে পাখির ব্যাপক আনাগোনা বেড়েছে এবং পাখি আসা এখনও অব্যাহত রয়েছে। সরেজমিনে সোনারচরে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ সমুদ্র সৈকতে বসেছে অতিথি পাখিদের মেলা। অত্যধিক শীতের কারণে পৃথিবীর দক্ষিণ প্রান্তের নানা দেশ থেকে একটু উষ্ণতার খোঁজে এসকল অতিথি পাখি ঝাঁক বেঁধে এসে পড়েছে সোনারচরে। অতিথি পাখি সারা রাত ঘন অরণ্য কিচির মিচির শব্দে মুখর করে রাখছে। আর সকাল হলেই দল বেঁধে নেমে পড়ছে সৈকত আর সাগরের নীল জলরাশির বুকে। সন্ধ্যার আঁধার ঘনিয়ে এলে ফিরে যাচ্ছে আবার ঘন অরণ্যে। সোনারচরের জেলেরাই এদের খাদ্যের যোগান দিচ্ছে। জেলেরা মাছ ধরে যখন সাগর থেকে ফিরে আসে। তখন তাদের নৌকায় আসা ছোট মাছ পাখিদের পেটের খোরাক হয়। পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, সোনারচরে অতিথি পাখিদের মধ্যে গাঙচিল, সরাইল হাঁস, লম্বাটুঠি হাঁস আর কাঁদা খোঁচা প্রজাতির পাখির সংখ্যাই বেশি। এছাড়া গার্গেনি, ফ্লাইফেচার, জলপিপি, লেঞ্জা, বালি, ছোট নগ, লাল গুরগুটি, খঞ্জনা, ভুতিহাঁস প্রজাতির পাখিও এসেছে ব্যাপক। স্থানীয় জেলেরা জানান, তারা পাখিদের জীবন নিরাপদ রাখতে শুরু থেকেই চেষ্টা করছেন। জেলে মোঃ সিদ্দিক জানান, তারা পাখিদের জন্য ছোট মাছ আলাদা করে রাখেন। যাতে পাখি খুব সহজেই জীবন ধারণ করতে পারে। মোঃ শামসুদ্দিন জানান, পাখিদের জীবন যেন একটুও বিঘিœত না হয়, এজন্য তারা চেষ্টা করেন। স্থানীয় বন বিভাগের কর্মীরাও অতিথি পাখির জীবন নির্বিঘœ রাখতে কাজ করছেন। চরমোন্তাজ রেঞ্জের বিট অফিসার প্রণব কুমার মিত্র বলেন, সোনারচরে পাখি শিকারিদের হাত থেকে নিরাপদ রাখতে আমরা সব সময় কাজ করে যাচ্ছি। নিয়মিত গোটা সৈকতে টহল দেয়া হয়। বন প্রহরীদের এজন্য প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি আরও বলেন, কেবল পাখি পর্যবেক্ষণের জন্য সোনারচরে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপক সংখ্যক পর্যটকের আগমণ ঘটছে। তারা যাতে নির্বিঘেœ পাখি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন, সে জন্য তাদেরও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হয়। এমনকি রাতে কোন কোন পর্যটকের জন্য প্রয়োজনীয় আশ্রয়ের ব্যবস্থাও করা হয়। স্থানীয়দের মতে কেবল অতিথি পাখি পর্যবেক্ষণের জন্য সোনারচর নিঃসন্দেহে আরও দর্শনীয় স্থান এবং আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। এজন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন। যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করা প্রয়োজন। যাতে মানুষ অল্প সময়ে সেখানে যেতে পারে। এছাড়া, রাত কাটানোর মতো আবাস গড়ে তোলাও দ্রুত প্রয়োজন। তাহলেই সোনারচর দেশের পর্যটন খাতে নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে। -শংকর লাল দাশ গলাচিপা, পটুয়াখালী থেকে
×