ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চাই সত্যমিথ্যা যাচাই

প্রকাশিত: ০৮:৪৫, ১১ জানুয়ারি ২০২০

চাই সত্যমিথ্যা যাচাই

বুধবার ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস উপলক্ষে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাইবার অপরাধ সম্পর্কে সুন্দরভাবে সবাইকে সচেতন করার প্রয়াস পেয়েছেন। তিনি ইন্টারনেটে ক্ষতিকর ডিজিটাল কনটেন্ট ফিল্টারিং করার ওপর গুরুত্বারোপ করে সত্য-মিথ্যা যাচাই ছাড়া ইন্টারনেট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন কিছু শেয়ার বা পোস্ট না করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। না জেনে বুঝে মন্তব্য করা এবং সবার মাঝে অসত্য খবর বা বক্তব্য ছড়িয়ে দেবার মধ্য দিয়ে কোন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী অজান্তেই নিজেকে বিপদগ্রস্ত করে তুলতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের মর্মকথা স্মরণে রাখলে তা শুধু নিজের জন্যই নয়, দেশ ও জাতির জন্যও কল্যাণকর হবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। সাইবার বিশ্বে বাংলাদেশ নতুন। এর সম্ভাবনা ও সঙ্কট সম্পর্কে সরকার সম্যক অবগত। সরকার ইতোমধ্যে ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর সাইন্স এ্যান্ড টেকনোলজি (এনসিএসটি) গঠন করেছে। সুশাসন নিশ্চিত, আইসিটি সংশ্লিষ্ট নীতি কার্যকর, সফটওয়্যার প্রকল্পের জন্য বিশেষ বরাদ্দ, বিশ্বমানের আইসিটি পেশাদার গড়ে তোলা এবং এ খাতে সমৃদ্ধির জন্য একটি বিশ্বমানের আইসিটি ইনস্টিটিউশন গড়ে তুলতে আইসিটির উন্নয়ন আবশ্যক। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন কোর্স চালু করা দরকার যাতে আমাদের নতুন প্রজন্ম সাইবার নিরাপত্তা এবং ইনফরমেশন সিকিউরিটি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে দেশের আইসিটি অবকাঠামো গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে। দেশে অনলাইন ব্যবহারকারীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি জ্যামিতিক হারে বাড়ছে সাইবার অপরাধ। তাই এই সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ ও দমন একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। কোন থানার অধীন এলাকায় যদি খুনের মতো অপরাধ সংঘটিত হয় তাহলে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে অপরাধের আলামত সংগ্রহের। তেমনি সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রেও কিছু অত্যাবশ্যক ব্যবস্থা নিতে হয়। সেসব ব্যাপারে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনও শতভাগ সক্ষম ও সচেতন নয়। উন্নত বিশ্ব সাইবার অপরাধ নিয়ে যথেষ্ট সতর্ক ও সচেতন। এ ব্যাপারে আমাদের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। সম্প্রতি দেশে যেসব সাইবার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার ভেতরে প্রধান হচ্ছে ব্যক্তিগত হয়রানি। কারও সম্পর্কে মানহানিকর বা আপত্তিকর কথা ও ছবি পোস্ট করা। সামাজিক মাধ্যমের ব্যাপক প্রসারের ফলে এই অপরাধের মাত্রা অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে নারী সংক্রান্ত সাইবার অপরাধের মাত্রা বেশি। অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে যাচ্ছে। অনেকে লজ্জা বা সঙ্কোচের জন্য সেটাও করছে না। দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নারীদের ৭৩ শতাংশই নানা ধরনের সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন। এর ২৩ শতাংশ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন না। সাইবার অপরাধ রোধে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে সাইবার অপরাধ আইনের প্রয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দেশজুড়ে প্রশিক্ষণ চালুর জন্য আরও প্রকল্প গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। নীতিমালায় আরও যোগ হওয়া দরকার প্রাইভেসি পলিসি, ট্রাস্ট মার্কস এবং অন্যান্য স্ব-নিয়ন্ত্রক পদক্ষেপ যা পণ্যের মান ও সেবার উন্নতি ঘটাবে এবং ভোক্তাদের আস্থা বৃদ্ধি করবে। সাইবার নিরাপত্তার প্রশ্নে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই বেশি কাম্য। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে প্রযুক্তিগত ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। এমনকি অনেক সময় তাদের শনাক্ত করাও সম্ভব হচ্ছে না। তাই সাইবার নিরাপত্তা বাড়াতে জরুরী পদক্ষেপ নিতে হবে। যে কোন মূল্যে নারীর ওপর সাইবার অপরাধ দমন করতে হবে। এছাড়াও মনে রাখা চাই, নিজেকে সাইবার অপরাধ থেকে দূরে রাখতে হলে সত্যমিথ্যা যাচাই ছাড়া কোন মন্তব্য কিংবা শেয়ার নয়।
×