ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জবির প্রথম সমাবর্তন ঘিরে উচ্ছ্বাস, মুখর ক্যাম্পাস

প্রকাশিত: ১১:১৭, ১০ জানুয়ারি ২০২০

জবির প্রথম সমাবর্তন ঘিরে উচ্ছ্বাস, মুখর ক্যাম্পাস

মামুন শেখ ॥ প্রথম সমাবর্তন উপলক্ষে গ্র্যাজুয়েটদের পদচারণায় মুখরিত জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসে কালো গাউন ও টুপি পরা হাজার হাজার শিক্ষার্থী। সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করছেন নতুন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরাও। ১১ জানুয়ারি প্রথম সমাবর্তন ঘিরে মঙ্গলবার থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে উপহারসামগ্রী বিতরণ শুরু হয়েছে। ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বিভাগ থেকে উপহারসামগ্রী সংগ্রহ করতে পারবেন। সমাবর্তনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ হাজার হাজার শিক্ষার্থী প্রথম দিনই ক্যাম্পাসে এসে পৌঁছেছেন, অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিজ নিজ বিভাগ থেকে ইতোমধ্যে তাদের উপহারসামগ্রী সংগ্রহ করেছেন। সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা তাদের সমাবর্তনের উপহারসামগ্রী গাউন, টুপি, টাই, ডায়েরি, ব্যাগ, কলমদানি নিতে শুরু করেন। সেগুলো পরে বন্ধু-বান্ধব সহপাঠীদের সঙ্গে সেলফি তুলছেন। সিনিয়রদের এমন আনন্দ-উল্লাস দেখে জুনিয়র শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে যোগ দেন। বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা কেক কেটে সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। এরপর শিক্ষার্থীদের মাঝে সমাবর্তনের উপহারসামগ্রী বিতরণ করেন। এ সময় বিভাগের সব শিক্ষক ও সব ব্যাচের শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। আবার কিছু বিভাগ যাদের এ্যালামনাই রয়েছে তারা দুপুর অথবা রাতের খাবারের ব্যবস্থাও করেছেন। সমাবর্তনের উপহারসামগ্রী সংগ্রহ করতে আসা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের পঞ্চম ব্যাচের ছাত্র তরিকুল ইসলাম বলেন, সমাবর্তন প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার। যদিও সে অধিকার আমাদের আন্দোলনের মাধ্যমে পেতে হলো। তবু আমরা খুশি। আমি চাই এখন থেকে প্রতি বছর যেন এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। দর্শন বিভাগের ষষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থী জি এম শহীদুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী অর্জনকারী যে কোন শিক্ষার্থীর মনে সমাবর্তন ঘিরে এক ধরনের অনুরণন সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে কাক্সিক্ষত কোন প্রাপ্তি মিললে বাড়তি ভাললাগা তো কাজ করেই। আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন-সংগ্রাম করে, উপর্যুপরি দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর প্রথমবারের মতো সমাবর্তনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। এ কারণে ভীষণ ভাল লাগছে। লোকপ্রশাসন বিভাগের নবম ব্যাচের শিক্ষার্থী আয়শা আক্তার নিপা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনেক ধন্যবাদ। ১৪ বছর পর আয়োজিত সমাবর্তন সফল করতে তোড়জোড় করে শেষ সময়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে জবি কর্তৃপক্ষ। বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ ধূপখোলা নির্মাণ করা হচ্ছে অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চ ও দেড় লাখ বর্গফুটের বিশালাকৃতির প্যান্ডেল তৈরির কাজ বৃহস্পতিবারও চলছিল। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে প্রশাসনিক ভবন, রফিক ভবন, বিজ্ঞান অনুষদ, কলা অনুষদ ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভবনগুলোতে নতুন করে রং করা হয়েছে। বর্ণিল আলোক সজ্জায় সাজানো হয়েছে প্রথম সমাবর্তন উপলক্ষে পুরান ঢাকা ঘিরে নেয়া হয়েছে মহাপরিকল্পনা। ব্যানার, ফেস্টুন, গেটসহ নানা ডিজাইনের ১৯ হাজার গ্র্যাজুয়েটের প্রথম সমাবর্তন ঘিরে উচ্ছল জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়। বিশ^বিদ্যালয়ের ৩৬ বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউটের অধীনে সমাবর্তন প্রত্যাশী গ্র্যাজুয়েটদের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে। সমাবর্ধনে প্রায় ১৯ হাজার গ্র্যাজুয়েট অংশ নিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, রাষ্ট্রপতি দেশের ভিআইপি ব্যক্তিত্ব সে হিসেবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সংস্থাগুলো তাদের মতো করে নিরাপত্তার ব্যাপারটা দেখভাল করছে। এদিকে গ্র্যাজুয়েটদের হাতে সনদ তুলে দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দফতর। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, সমাবর্তনের আয়োজন সফল করতে উপকমিটি গঠন করেছি। প্রতিটি কমিটি দিনভর কাজ করে যাচ্ছে। আশা করছি শিক্ষার্থীদের একটি সফল সমাবর্তন উপহার দিতে পারব। সমাবর্তনের বক্তা মনোনীত হয়েছেন ইমেরিটাস প্রফেসর ড. অরুণ কুমার বসাক। তিনি বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ইমেরিটাস প্রফেসর। ড. অরুণ বসাক ৭৫ সালে লন্ডনের বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্ট ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ইলিনয়েস ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চ প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
×