ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

একে একে আমাদের কাছের মানুষরা চলে যাচ্ছেন ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১১:১৬, ১০ জানুয়ারি ২০২০

একে একে আমাদের কাছের মানুষরা চলে যাচ্ছেন ॥ প্রধানমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা একাদশ জাতীয় সংসদের আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য ডাঃ ইউনুস আলী সরকারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছেন, ডাঃ ইউনুস আলী সরকার একজন অমায়িক, মানবতা প্রেমী ও নিষ্ঠাবান মানুষ ছিলেন। মৃত্যু অবধারিত। কিন্তু অকালমৃত্যু সবাইকে কষ্ট দেয়। একে একে আমাদের কাছের মানুষরা চলে যাচ্ছেন। যারা চলে যাচ্ছেন তারা প্রত্যেকেই দেশের জন্য অনেক কিছু করে গেছেন। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের ষষ্ঠ অর্থাৎ শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনে আনীত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সদ্য প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি, ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ, তার দীর্ঘকালীন সামরিক সচিব মিয়া মোঃ জয়নুল আবেদীন, স্থপতি রবিউল হুসাইন ও কূটনীতিক সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর মৃত্যুতেও গভীর শোক প্রকাশের পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, বিরোধী দলের চীফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা, গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, সরকারী দলের অধ্যাপক ডাঃ হাবিবে মিল্লাত, ডাঃ আবুল কালাম আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক ও খালেদা খানম। শোক প্রস্তাব উত্থাপনের পর মরহুমদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এরপর চলতি সংসদের সদস্য ডাঃ ইউনুস আলী সরকারের মৃত্যুতে রেওয়াজ অনুযায়ী সংসদের অধিবেশন এক ঘণ্টার জন্য মুলতবি ঘোষণা করেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, অত্যন্ত অমায়িক মানুষ ছিলেন ডাঃ ইউনুস। তিনি হেঁটে হেঁটে এলাকাসহ মানুষের চিকিৎসা সেবা দিতেন, বিনা পয়সায় ওষুধ কিনে দিতেন। এমন একজন মানবতাপ্রেমী মানুষ এভাবে অকালে চলে যাবেন, তা কল্পনাও করতে পারিনি। আর দু’বারের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি অত্যন্ত ভাল একজন বক্তা ছিলেন, ভবিষ্যতে তার একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা ছিল। ওয়ান/ইলেভেনের সময় কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় আমার মামলার কাজের সঙ্গে সে জড়িত ছিল। অত্যন্ত মেধাবী ছিল বাপ্পি। তার এই অকালমৃত্যু মেনে নেয়া খুবই কঠিন। সদ্য প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন প্রথম সরকার গঠন করি তখন আমার সহকারী সামরিক সচিব হিসেবে তিনি যোগদান করেছিলেন। এরপর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমার সামরিক সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তার মতো সৎ, দক্ষ একজন সামরিক অফিসার খুবই কম পাওয়া যায়। যদিও আমি ৭ বছর ক্ষমতায় ছিলাম না। আমার সামরিক সচিব ছিল বলে বিএনপি সরকার তার ওপর অনেক অত্যাচারও করেছে। পরে আমি সরকার গঠন করে আবার তাকে নিয়ে এসেছিলাম। প্রয়াত জয়নুল আবেদীন আমাদের একটি পরিবারের মতোই ছিলেন। আমি তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। প্রয়াত ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফজলে হাসান আবেদের স্ত্রী আমাদের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন এবং আমি যখন প্রথমবার সরকারে আসি তখন ফজলে হাসান আবেদকে বলেছিলাম ইউনিভার্সিটি করতে। একটি ব্যাংক করতেও অনুরোধ করেছিলাম। পরে তাকে ব্যাংক দিয়েছিলাম। কারণ আমি জানতাম, ফজলে হাসান আবেদ একজন দক্ষ মানুষ এবং তার কাজের ফলে পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছিল। তিনি বলেন, মৃত্যুর কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে তিনি দেখা করেছিলেন। অবাক লাগে, তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন- আমি তো বেশিদিন বাঁচব না। আমি সব কাজ বুঝিয়ে দিয়ে যাচ্ছি। মেয়েকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে গেলাম। তিনি দেশের জন্য যথেষ্ট সম্মান নিয়ে এসেছেন। স্থপতি রবিউল হুসাইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি শুধু একজন স্থপতি ছিলেন না, একজন ভাল কবি ও সাহিত্যিকও ছিলেন। আর প্রয়াত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী অত্যন্ত দক্ষ একজন কূটনীতিক ছিলেন। সব শেষে ভারতে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রয়াত সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে তিনি বলেন, কত সাথী এভাবে একে একে চলে যাচ্ছে, সেটাই দুঃখজনক। আর অকালমৃত্যু সবসময় কষ্ট দেয়। তিনি কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সংস্থা শিক্ষা সনদ বোর্ডের কো-চেয়ারম্যান আল্লামা আশরাফ আলীর মৃত্যুতেও গভীর শোক প্রকাশ করেন। শোক প্রস্তাব গ্রহণ চলতি সংসদে গাইবান্ধা-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ডাঃ ইউনুস আলী সরকারসহ সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও বরেণ্য ব্যক্তিদের মৃত্যুতে সংসদ অধিবেশনে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। ওই শোক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শেষে সর্বসম্মতিতে শোক প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়। প্রস্তাবে জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে প্রয়াতদের আত্মার শান্তি ও শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়। পরে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত করা হয়। শোক প্রস্তাবে সংসদ সদস্য ইউনুস আলী সরকার ছাড়াও সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি, সাবেক পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপিএ) মোঃ আব্দুল কাদের, সাবেক সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন, এবাদত হোসেন ম-ল ও গুলজার আহমদের নাম রয়েছে। এছাড়াও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী, ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, সাবেক বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরী, একুশে পদকপ্রাপ্ত পদার্থবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা অজয় রায়, কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইন, বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজীর আহমেদ সেলিম, ভাষা সৈনিক রওশন আরা বাচ্চু, সুরকার-সঙ্গীত পরিচালক বাসুদেব ঘোষ, বীরাঙ্গনা আফিয়া খাতুন খঞ্জনি, বীরাঙ্গনা রাহেলা বেগম এবং সংসদ সদস্য মোঃ আক্তারুজ্জামানের মাতা ফাতেমা খানমের নাম রয়েছে।
×