ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যমুনার ওপর বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে ৪ হাজার কোটি

প্রকাশিত: ১১:১১, ১০ জানুয়ারি ২০২০

যমুনার ওপর বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে ৪ হাজার কোটি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনা নদীর ওপর ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু’ নির্মাণের ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এই রেলসেতু নির্মিত হলে ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ হবে বলে মনে করছে সরকার। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, অর্থনীতি শক্তিশালী করতে আগামী পাঁচ বছর প্রান্তিক পরিবারগুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এছাড়া যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিজনেস পত্রিকা ‘দ্য ব্যাংকার’ বিশ্বের সেরা অর্থমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার অর্জনকে পুরো জাতির অর্জন বলে অবহিত করেন তিনি। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ের সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা বলেন। এর আগে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্পসহ মোট ৯টি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়। এ জন্য ব্যয় হবে ১৪ হাজার ১১ কোটি ৮০ লাখ ৪১ হাজার ৮৫০ টাকা। এর মধ্যে ১২ হাজার ৯৫০ কোটি ৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৬৭ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণে। বৈঠক শেষে অনুমোদিত প্রকল্পের বিভিন্ন দিক সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, যমুনার ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ হচ্ছে। এটি বর্তমান সরকারের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আর একটি নতুন মাইলফলক হবে। দুটি প্যাকেজে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১২ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা ৬ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। এই প্রকল্পে জাইকা আর্থিক সহায়তা দেবে। প্রকল্পটি আগামী ’২৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণে ’১৬ সালে প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। তখন প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। তিনি বলেন, আজ ব্যয় বাড়ার যে অনুমোদন দিয়েছি তা শর্তসাপেক্ষে। প্রকল্পটি আবার একনেকে যাবে, আবার ডিপিপি করতে হবে। নতুন ডিপিপির ভিত্তিতে নির্মাণ কাজ এগোবে। একনেকে অনুমোদনের পর ক্রয় কমিটিতে যাতে আবার আসতে না হয় সেজন্য এ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জাপানভিত্তিক দুই প্রতিষ্ঠান ডব্লিউডি-১ ওটিজে জয়েন্ট ভেঞ্চার ও ডব্লিউডি-২ প্যাকেজে আইএইচআই এসএমসিসি জয়েন্ট ভেঞ্চার সর্বনি¤œ দরদাতা হিসেবে বাংলাদেশ রেলওয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা কাজে গতি আনতে চাই, এজন্য পদ্ধতি সহজ করতে হবে। যদি অনুমোদন না দিয়ে ফেরত দিয়ে দিতাম, তাহলে আবার একনেকে নিতে হতো। একনেক অনুমোদন দিলে আবার ক্রয় কমিটিতে আনতে হতো। এ প্রকল্প একনেক প্রথমে অনুমোদন দিয়েছে। অনেক ব্যয় বৃদ্ধি হয়েছে, তাই আবার একনেকে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর এটা দেখা উচিত। দেখে যদি তিনি অনুমোদন দেন তাহলে ঠিক আছে। প্রসঙ্গত, প্রকল্পটি ’২৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। যমুনার ওপর বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু বাংলাদেশের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সেতু, যা দেশের পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলকে সংযুক্ত করেছে। সেতুটি আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কেও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত। ভারত, মিয়ানমার, ভুটান ও নেপালসহ উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগের কেন্দ্রে বাংলাদেশ। এদিকে বৈঠকে অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্প হলো- ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে অনুমোদিত ‘বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র। প্রকল্পের আওতায় পটুয়াখালী জেলায় ৩৬ সাইক্লোন শেল্টার ও তৎসংলগ্ন সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজের প্যাকেজ নং-এনডব্লিউ-৫ এর ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২৪ কোটি ৩২ লাখ ৯৪ হাজার ৪৯৪ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে দ্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ও নবারুন ট্রেডার্স লিমিটেড। একই প্রকল্পের আওতায় (প্যাকেজ নং-এনডব্লিউ-৭) পিরোজপুরে ৫০ সাইক্লান সেন্টার তৈরি করবে রাফিয়া কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ও মেসার্স এসবি ট্রেডার্স। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩১৯ কোটি ৫০ লাখ ১৩ হাজার ৯৫০ টাকা। এছাড়া আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্ট, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলাধীন জগন্নাথকাঠি চাঁদকাঠি জিসি সড়কে কালিগঙ্গা নদীর ওপর ৬শ’ মিটার ব্রিজ নির্মাণ, চট্টগ্রাম জেলায় ২৫ সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এদিকে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, যেসব সম্পদ এখনও ব্যবহার করতে পারিনি সেগুলো ব্যবহার করতে পারলে আমাদের প্রবৃদ্ধি আরও ভাল হবে। সবার জন্য আকর্ষণীয় হবে। যেটাকে আমরা বলি ইনক্লুসিভ গ্রোথ। তিনি বলেন, সেসব কাজ করার জন্য আগামী ৫ বছর প্রতি প্রান্তিক পরিবারকে নিবেদন করব। প্রান্তিক পরিবারগুলো হবে আমাদের অগ্রাধিকার। এখন রাস্তাঘাট যে রকম অগ্রাধিকার পাচ্ছে তার চেয়েও বেশি অগ্রাধিকার পাবে প্রান্তিক পরিবার। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে আমি পুরস্কৃত হয়েছি। আসলে আমি তো পুরস্কৃত হয়নি, পুরস্কৃত হয়েছে পুরো জাতি, প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের সব মানুষ। এটা সবার পুরস্কার। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে উন্নয়ন হয়েছে সব বিবেচনায় এ পুরস্কার। অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতির চালিকাশক্তি হচ্ছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি নিজেই আমরা কিভাবে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব, লক্ষ্যটি খুব বড় এবং লক্ষ্য থেকে আমরা এখনও বিচ্যুত হইনি। আমরা লক্ষ্য অর্জনের পথেই রয়েছি। তিনি বলেন, ’২৫ থেকে ’৩০ সালের মধ্যে আমরা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াকে ওভারকাম করে এগিয়ে যাব। এই যে আমাদের সামর্থ্যরে জায়গাগুলোর কথা বলা হচ্ছে এর কারণ হচ্ছে আমরা পলিসি ও প্ল্যানিং প্রোসপেক্টিভে দৃঢ়ভাবে এগোচ্ছি। একটি শক্ত জায়গা থেকে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
×