ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গত বছর চার হাজার ৬৯৩ সড়ক দুর্ঘটনা

প্রকাশিত: ১১:১২, ৯ জানুয়ারি ২০২০

গত বছর চার হাজার ৬৯৩ সড়ক দুর্ঘটনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গত বছর সারাদেশে সংঘটিত ৪ হাজার ৬৯৩ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫ হাজার ২১১ জন এবং আহত ৭ হাজার ১০৩ জন। নিহতের মধ্যে শিশু ৬১৩ এবং নারী ৭৮৯ জন। এককভাবে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। বছরজুড়ে ১ হাজার ১৮৯টি মোটরবাইক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৯৪৫ জন, যা মোট নিহতের ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। মোটরবাইক দুর্ঘটনার হার ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। বুধবার সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা বেসরকারী সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে নৌ-সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি ও নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। গণমাধ্যমে পাঠানো ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনায় ২ হাজার ২৭ জন পথচারী নিহত হয়েছেন। যা মোট দুর্ঘটনার ৩৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ। বাইসাইকেল চালানো, হেঁটে পথচলা, রাস্তা পার হওয়ার সময় এবং রাস্তার পাশে অবস্থান করার সময় এসব মানুষ মোটরযানের চাপায়-ধাক্কায় নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ৩ হাজার ২৪৭ জন। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৬২ দশমিক ৩১ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনাসমূহ আঞ্চলিক সড়কে ঘটেছে ২ হাজার ৭৩৫টি (৫৮.২৭ শতাংশ) এবং মহাসড়কে ১ হাজার ৯৫৮টি (৪১ দশমিক ৭২ শতাংশ)। এসব দুর্ঘটনায় দায়ী যানবাহনের সংখ্যা ১০ হাজার ৯৯২টি। (মোটরবাইক-১ হাজার ১৮৯, বাইসাইকেল, রিক্সা, ভ্যান-১ হাজার ৫২৫, সিএনজি-৯৯৩, ইজিবাইক, টেম্পো-১ হাজার ৭৫৩, নসিমন, করিমন, ভটভটি, টমটম-১ হাজার ৯৭, বাস-৯৩৪, মিনিবাস-১ হাজার ৪১, মাইক্রো, পিকআপ-৮৫৭, কার, জিপ-৪৯৬, ট্রাক, ট্রাক্টর, লরি-৭১৪, কাভার্ডভ্যান-২৯৩টি। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে দেশে ১৫৯টি রেল দুর্ঘটনায় ১৯৬ জন নিহত এবং ৪৭১ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ৩২টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬৭ জন। নিখোঁজ রয়েছেন ১১৭ জন। সড়ক দুর্ঘটনার কারণসমূহ সংগঠনের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয় অন্তত ১১ কারণে সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে এবং থামানো যাচ্ছে না। এগুলোর মথ্যে রয়েছে, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকের অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে ইজিবাইক, নসিমন, করিমনসহ স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ ও যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি, গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব। সুপারিশসমূহ দুর্ঘটনা কমাতে সংগঠনের পক্ষ থেকে নয় দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, দক্ষ চালক তৈরির প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ, চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি, পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্ব রাস্তা তৈরি করতে হবে; পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, রেল ও নৌ-পথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমানো এবং বারবার কমিটি গঠন এবং সুপারিশমালা তৈরির চক্র থেকে বেরিয়ে একটি টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা পোষণ করতে হবে। ‘আইন কঠোর-প্রয়োগ নমনীয়’ এই নীতির পরিবর্তে ‘আইন সহনশীল-প্রয়োগ কঠোর’- নীতি গ্রহণ না করলে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে মনে করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
×