ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সারওয়ার আলী হত্যা চেষ্টার রহস্যের জট খোলেনি

প্রকাশিত: ১১:১১, ৯ জানুয়ারি ২০২০

সারওয়ার আলী হত্যা চেষ্টার রহস্যের জট খোলেনি

শঙ্কর কুমার দে ॥ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি ডাঃ সারওয়ার আলীকে হত্যা চেষ্টার ঘটনার এখনও রহস্যের জট খোলেনি। বাড়িতে যে সাতটি চাপাতি পাওয়া গেছে তা এনেছিল তার সাবেক গাড়ি চালক নাজমুল। ডাঃ সারোয়ার আলী বা তার পরিবারের কাউকে হত্যা করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পেয়েছিল দুর্বৃত্তরা। কিন্তু হত্যার চেষ্টা করেনি। হত্যার জন্য গলায় ছুরি দেখিয়ে ভয় দেখিয়েছে। এমনকি বাড়ি থেকে কোন টাকা পয়সা, সোনা গয়না কোন কিছুই খোয়া যায়নি। তবে সাবেক গাড়ি চালক প্রধান আসামি নাজমুলকে গ্রেফতার করা গেলে রহস্যের জট খোলায় সাহায্য হতো বলে জানিয়েছে পুলিশ। নাজমুল এখনও পলাতক। গ্রেফতার হওয়া দারোয়ান হাসান ও বর্তমান গাড়ি চালক হাফিজকে দুই দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। সাবেক গাড়ি চালকে নাজমুলকে চাকরিচ্যুত ও জঙ্গী সন্দেহ-হত্যা চেষ্টার ঘটনার পেছনে এই দুইটি বিষয়কে সামনে রেখে পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্তের সঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তদন্তের সঙ্গে সংশিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডাঃ সারোয়ার আলীর বাড়ির দারোয়ান হাসান (৫৪) ও তার চাকরিচ্যুত গাড়ি চালকের বন্ধু হাফিজুল (৩৫) দুই দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। গত রবিবার রাত ১০টার দিকে উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ৭ নম্বর সেক্টরে সারওয়ার আলীর বাড়ির তৃতীয়তলা ও চতুর্থতলায় এই হত্যা চেষ্টার ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় দুইজনকে। গ্রেফতারকৃত দুইজন জিজ্ঞাসাবাদে হামলার রাতের ঘটনার বর্ণনা দেয়। দুর্বৃত্তরা ডাঃ সারোয়ার আলীর মেয়ে ও জামাতার কাছে সারওয়ার আলী কোথায়-তা জানতে চায়। দুর্বৃত্তরা বাড়ির চতুর্থ তলায় সারওয়ার আলীর ফ্ল্যাটে যায়। তার স্ত্রী কমিউনিটি ক্লিনিকের সাবেক প্রকল্প পরিচালক মাখদুমা নার্গিস দরজা খুলে দেন। দুর্বৃত্তরা সারওয়ার আলীকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেয়। এরপর তারা ধারাল চাপাতি দিয়ে তাকে কোপানোর চেষ্টা করে। এ সময় তারা ও তৃতীয় তলা থেকে মেয়ে ও জামাতা ‘বাঁচাও’, ‘বাঁচাও’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় সারওয়ার আলীর মেয়ে সায়মা আলী ও জামাতা হুমায়ুন কবীর ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশের সহায়তা চান। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায় বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় গ্রেফতারকৃতরা। তদন্তের সঙ্গে সংশিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন আগে সারওয়ার আলী গাড়িতে যাওয়ার সময় চালককে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার সড়ক ব্যবহার করতে বলেন। ওই সময় গাড়ি চালক নাজমুল ওই সড়ক ব্যবহার করতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে মালিকের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। এ ছাড়া গাড়ি চালক নাজমুল তার বেতনের টাকা নিয়েও কথা কাটাকাটি করেছে। এক পর্যায়ে গাড়ি চালককে চাকরিচ্যুত করা হয়। এ কারণেও হয়ত বা নাজমুল তার মালিককে শায়েস্তা করতে হত্যার চেষ্টা চালিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে থাকতে পারে। সারওয়ার আলীর গাড়িচালক নাজমুলকে চাকরিচ্যুত করার জের ধরেই দুর্বৃত্তরা এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে কিনা তাও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ঘটনার পর ওই বাড়ি থেকে হামলাকারীদের ফেলে যাওয়া সাতটি চাপাতি, একটি মোবাইল ফোন ও দড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে বাড়ির দারোয়ানের কাছ থেকে উদ্ধার করা মোবাইল ফোনটি আগে নাজমুল ব্যবহার করতেন। হত্যা চেষ্টার আগে ওই ফোনে অন্তত ২৫টি কল এসেছিল। বিষয়গুলো তদন্ত করতে গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ডাঃ সারোয়ার আলীর বাড়িতে দুর্বৃত্তরা হামলার পর তিনি বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি হত্যা চেষ্টার মামলা করেন। মামলায় ওই বাড়ির দারোয়ান হাসান ও চাকরিচ্যুত গাড়িচালক নাজমুলের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫-৭ জনকে আসামি করা হয়। উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তপন কুমার সাহা বুধবার বলেছেন, ডাঃ সারোয়ার আলী হত্যাচেষ্টার মূল সন্দেহভাজন সারওয়ারের সাবেক গাড়িচালক নাজমুলের মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে। নাজমুলের সঙ্গে বাড়ির দারোয়ান হাসানের একাধিকার কথোপকথনের তথ্য পাওয়া গেছে মোবাইল কললিস্টে। একইভাবে নাজমুলের সঙ্গে বর্তমান চালক হাফিজেরও বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে। ঘটনার দিনও এই দু’জনের সঙ্গে অনেকবার কথা বলেছেন নাজমুল। হত্যাচেষ্টা মামলায় দারোয়ান হাসান ও বর্তমান চালক হাফিজকে সাতদিন করে রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানোর পর দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। বুধবার রিমান্ডের প্রথমদিনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে গ্রেফতার হওয়া দুইজনকে। নাজমুলকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে হত্যাচেষ্টার প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তদন্তের সঙ্গে সংশিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ডাঃ সারোয়ার আলীর বাড়িতে নিচ তলা থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত অবস্থানকারীদের ওপর হামলা করেছে দুবর্ৃৃত্তরা। এতে দুবর্ৃৃত্তরা পর্যাপ্ত সময় পায়। হত্যার উদ্দেশ্য থাকলে পর্যাপ্ত সময়ে হত্যার উদ্দেশে গুরুতর জখম করতে পারত বিশেষ করে জঙ্গী গোষ্ঠী হলে উদ্ধার হওয়া সাতটি চাপাতির মধ্যে দু’একটি চাপাতি ব্যবহার করত। কিন্তু দুর্বৃত্তরা চাপাতি ব্যবহার করে হত্যাকা- সংগঠিত করেনি। এতে জঙ্গী গোষ্ঠী জড়িত কিনা তা স্পষ্ট নয়। তবে হত্যার চেষ্টাকারী দুর্বৃত্তরা কোন জঙ্গী গোষ্ঠীকে ভাড়া করে বা এনেছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ ডাঃ সারওয়ার আলী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সহযোদ্ধা এবং এ দেশের প্রগতিশীল সামাজিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তার অসামান্য অবদান থাকার কারণে জঙ্গী গোষ্ঠীকে সন্দেহ করা হচ্ছে। কারণ এর আগে ড. হুমায়ুন আজাদ, ড. মুনতাসির মামুনসহ স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির ওপর হত্যার চেষ্টার উদ্দেশে হামলা এবং মুক্তবুদ্ধির বলগারসহ অনেকেই টার্গেট কিলিং করেছে জঙ্গী গোষ্ঠী। ডাঃ সারোয়ার আলীর জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাসবিরোধী বলিষ্ঠ অবস্থানের কারণে তাকে সপরিবারে হত্যার উদ্দেশে এই হামলা করা হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ কর্মকর্তার দাবি।
×