ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

একুশে গ্রন্থমেলার প্রস্তুতি চলছে, মুজিববর্ষের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠবে

প্রকাশিত: ১১:০৯, ৯ জানুয়ারি ২০২০

একুশে গ্রন্থমেলার প্রস্তুতি চলছে, মুজিববর্ষের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠবে

মনোয়ার হোসেন ॥ বাংলা একাডেমির প্রান্তর এখন দারুণ কর্মচঞ্চল। সেই সুবাদে স্বাধীনতার স্মারকভূমি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানও বেশ প্রাণবন্ত। বাঁশচেরা করাতের শব্দ আর পেরেক ঠোকাঠুকির ঠুকঠাক। কর্মচাঞ্চল্যময় এই কোলাহলের সবটাজুড়েই আছে অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্রস্তুতি-পর্ব। এবার ভিন্নধর্মী রংয়ের তরঙ্গ বইবে ভাষা শহীদদের স্মৃতিতে নিবেদিত এই প্রাণের মেলায়। মার্চের মুজিববর্ষের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠবে একুশের বইমেলা। নতুন বইয়ের প্রকাশনা থেকে অঙ্গসজ্জায় মিশে থাকবে জাতির জনকের জীবনের মুখচ্ছবি। ১ ফেব্রুয়ারি মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রকাশিত হবে বঙ্গবন্ধু রচিত তৃতীয় গ্রন্থ ‘আমার দেখা নয়া চীন’। প্রতিদিনের মেলা মঞ্চের আয়োজনেও থাকবে স্বাধীনতার মহান স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে আলোচনা। বর্ধিত পরিসরের মেলায় উদ্যানের মুক্ত মঞ্চও অংশভুক্ত হবে গ্রন্থমেলার। সেখানে প্রতিদিন বিকেলে থাকবে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ২০২০ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলা উৎসর্গ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে। তার জন্মশতবর্ষকে মূল থিম ধরেই সাজানো হচ্ছে পুরো মেলার সকল আয়োজন। গতবছর মেলার বিন্যাস সাজিয়ে প্রশংসিত হওয়া স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝরের নক্সাতে বিন্যস্ত হবে ২০২০ সালের গ্রন্থমেলা। প্রতিদিনের মেলা মঞ্চের আলোচনায় থাকবে শেখ মুজিবের কথা। মেলার বিন্যাসে কিংবা অঙ্গসজ্জায় ফুটে উঠবে বঙ্গবন্ধর প্রতিচ্ছবি। সব মিলিয়ে বইমেলা হয়ে উঠবে মুজিবময়। মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতির জনককে নিয়ে রচিত ১০০টি গবেষণাধর্মী বই প্রকাশ করবে মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি। ২০২০ থেকে ২০২২ সালের বইমেলা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে প্রকাশিত হবে এসব গ্রন্থ। এসব বইয়ের মাধ্যমে উঠে আসবে বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন থেকে ছাত্র আন্দোলন, চলচ্চিত্রের প্রতি তার অনুরাগ, উপন্যাস-কবিতায় চিত্রিত জাতির জনকের রূপকসহ বিবিধ বিষয়। এর মধ্যে ২০২০ সালের গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী দিনে প্রকাশিত হবে ‘আমার দেখা নয়া চীন’সহ ত্রিশটি বই। আমার দেখা নয়া চীন গ্রন্থটির সম্পাদনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজী ভাষাতেও বইটির প্রকাশ করবে বাংলা একাডেমি। এছাড়া ২০১৯ সালের চেয়ে বিস্তৃত পরিসরে অনুষ্ঠিত হবে মুজিববর্ষের বইমেলা। বর্ধিত পরিসরের এবার মেলার উদ্যান অংশে সাড়ে ৭ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে অনুষ্ঠিত হবে গ্রন্থমেলা। এই প্রথমবারের মতো লিটল ম্যাগ কর্নার বাংলার একাডেমি আঙিনার পরিবর্তে ঠাঁই পাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। গতবারের ২৩টি প্যাভিলিয়নকে ছাপিয়ে এবারে প্যাভিলিয়নের সংখ্যা হবে ৩৪টি। এক ইউনিট, দুই ইউনিট, তিন ইউনিট ও চার ইউনিট মিলিয়ে বাড়ছে সংখ্যাও। গত জুলাই থেকে কাজ শুরু হওয়ায় ইতোমধ্যে স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দের কাজটি শেষ হয়েছে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি লটারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। লটারির মাধ্যমে প্যাভিলিয়ন ও স্টল মালিকদের নির্ধারিত স্থান বুঝিয়ে দেয়া হবে। ২০২০ সালে মুজিববর্ষে একুশে গ্রন্থমেলা ভিন্ন রূপে সেজে উঠবে বলে উল্লেখ করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। আলাপচারিতায় তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, এবারের গ্রন্থমেলা মুজিববর্ষে অনুষ্ঠিত হওয়ায় থাকছে বিশেষ পরিকল্পনা। বইয়ের প্রকাশনায় যেমন বঙ্গবন্ধু প্রাধান্য পাবেন তেমনি সাজসজ্জায় দৃশ্যমান হবে মুজিবের মুখচ্ছবি। এবার ২৯ দিনের বইমেলার উদ্বোধনী দিন বাদে বাকি ২৮ দিনই মেলা মঞ্চের আলোচনায় থাকবেন বঙ্গবন্ধু। এই মেলা মঞ্চ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে প্রকাশিত নতুন বইগুলো থেকে প্রতিদিন একটি করে মোট ২৮টি গ্রন্থ নিয়ে আলোচনা হবে। সেখানে বইয়ের সূত্র ধরে উঠে আসবে বাঙালীর অবিসংবাদিত এই নেতার জীবনের নানা অধ্যায়। পাশাপাশি লেখক বলছি মঞ্চের আলোচনা কিংবা পাঠ উন্মোচনেও প্রাধান্য পাবেন বঙ্গবন্ধু। শিশুদের নিয়ে আয়োজনসহ মেলার সবকিছুতেই সংযুক্ত হবেন শেখ মুজিব। বঙ্গবন্ধু। শিশুদের নিয়ে আয়োজনসহ মেলার সবকিছুতেই সংযুক্ত হবেন শেখ মুজিব। মুজিববর্ষে গ্রন্থমেলার অঙ্গসজ্জাসহ সার্বিক বিষয়ে একাডেমির পরিচালক ও মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বলেন, অনেক কিছুর সঙ্গে মুজিববর্ষে গ্রন্থমেলার পরিসর বাড়ছে। আগের বছরের চেয়ে প্যাভিলিয়নের সংখ্যা বেড়ে এবার হচ্ছে ৩৪টি। এর মধ্যে তিনটি থাকবে বাংলা একাডেমির প্যাভিলিয়ন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাড়ে ৭ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে অনুষ্ঠিত মেলায় প্যাভিলিয়ন বাদে থাকবে সাত শতাধিক ইউনিট। উদ্যানের মুক্ত মঞ্চ এবার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে গ্রন্থমেলায়। এখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন মেলা চলাকালে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপন করবে। এ বছর মেলার একটি প্রবেশদ্বার টিএসসির গেট পেরুলেই শুরু হবে মেলা প্রান্তর। অন্যদিকে স্বাধীনতা স্তম্ভের গ্লাস টাওয়ার অংশটিও এবার মেলার আওতায় আসবে। টিএসসি ছাড়া একাডেমির উল্টোদিকের কালী মন্দিরের গেট এবং তিন নেতার মাজারের পাশের গেট দিয়ে থাকবে প্রবেশ পথ ও বহির্গমন পথ। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষকে মেলার মূল থিম ধরে সাজসজ্জায় থাকবে বিশেষত্ব। স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝরের নক্সায় বিন্যস্ত হবে বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গকৃত এই বইমেলা। মেলার বিন্যাসের মাধ্যমে মুজিবের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলা হবে। প্রতিদিনের মেলা মঞ্চের আলোচনা-সেমিনার, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগতিা, গান, আবৃত্তি, নৃত্যসহ সবকিছুই আবর্তিত হবে বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্র করে। গত জুলাই মাস থেকেই শুরু হয়েছে মেলার প্রস্তুতিপর্ব। ইতোমধ্যে স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দের কাজটি হয়েছে। আগামী ১২ জানুয়ারি লটারি হওয়ার কথা রয়েছে। লটারির মাধ্যমে প্রকাশনা সংস্থাগুলোকে তাদের নির্ধারিত স্থান বুঝিয়ে দেয়া হবে। জায়গা বুঝে পাওয়ার পর আগামী ২৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রকাশনা সংস্থাগুলোকে স্টল ও প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজ শেষ করতে হবে। মুজিববর্ষে শত বই প্রকাশের বিষয়ে একাডেমির গবেষণা বিভাগের উপ-পরিচালক তপন বাগচী জনকণ্ঠকে জানান, ২০২০ সালের গ্রন্থমেলায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ১০০টি বই প্রকাশের কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। বাংলা ভাষার পাশাপাশি থাকবে ইংরেজী ভাষায় লেখা বই। ২০২২ সালের গ্রন্থমেলা পর্যন্ত তিন ধাপে প্রকাশিত হবে এসব গ্রন্থ। বইগুলোর অধিকাংশই হবে গবেষণাধর্মী। এসব গ্রন্থের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর বহু বর্ণিল জীবনের নানা বিষয় মেলে ধরা হবে পাঠকের সামনে। তার মধ্যে উঠে আসবে বাংলার রাজনীতির এই মহানায়কের জীবনের অনেক অজানা বিষয়ও। মেলার উদ্বোধনী দিনে প্রকাশিত হবে বঙ্গবন্ধুর নতুন বই ‘আমার দেখা নয়া চীন’সহ ত্রিশটি বই। বইটি বাংলা ও ইংরেজী দুই ভাষাতে প্রকাশিত হবে। এছাড়া বহির্বিশ্বে বঙ্গবন্ধুকে আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে উপস্থাপনে প্রকাশ করা হবে গোটা দশেক ইংরেজী বই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক ড. ফখরুল আলমের মতো ইংরেজী লেখায় পারদর্শী লেখকরা লিখবেন এসব বই। শত বই প্রকাশের এই কর্মসূচীর বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে বিভিন্ন লেখকের কাছে পা-ুলিপি চাওয়া হয়েছে। অনেকের পা-ুলিপি জমাও পড়েছে। গবেষক ও লেখকদের নিয়ে গঠিত রিভিউ কমিটির যাচাইয়ের মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে প্রকাশের উপযোগী বইগুলো। শত বই প্রকাশের কর্মসূচীর অন্তর্ভুক্ত কিছু নতুন বইয়ের মধ্যে রয়েছে শামসুজ্জামান খানের ‘বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্র চিন্তা’, অধ্যাপক হারুন অর রশীদের ‘বঙ্গবন্ধু ও বাকশাল’, রতন লাল চক্রবর্তীর ‘বঙ্গবন্ধু ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়’, অধ্যাপিকা খুরশীদা বেগমের ‘বঙ্গবন্ধু ও নেতৃত্ব’। একাডেমি থেকে লেখকের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ও বাংলা একাডেমি’, ‘বঙ্গবন্ধু ও চলচ্চিত্র’, ‘উপন্যাসে বঙ্গবন্ধু’, ‘কবিতায় বঙ্গবন্ধু’, ‘বঙ্গবন্ধু ও ছাত্র আন্দোলন’ এবং ‘বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন’। প্রকাশিত হবে বৈশ্বিক মূল্যায়নে জাতির জনকের অবস্থান তুলে ধরা ইংরেজী ভাষার বই ‘বঙ্গবন্ধু এ্যান্ড ওয়ার্ল্ড ভিউ’। সব মিলিয়ে ১০০ বইয়ের মধ্যে বাংলা একাডেমি থেকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পূর্বে প্রকাশিত ১০-১৫টি বইয়ের পুনর্মুদ্রণও থাকছে।
×