ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টার্গেট ডাঃ সারওয়ার

প্রকাশিত: ০৯:২০, ৯ জানুয়ারি ২০২০

টার্গেট ডাঃ সারওয়ার

সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা সত্ত্বেও মৌলবাদী জঙ্গীগোষ্ঠী যে বসে নেই তার প্রমাণ মিলেছে ডাঃ সারওয়ার আলীর ওপর হামলার ঘটনায়। উল্লেখ্য, ডাঃ সারওয়ার আলী একজন মুক্ত বুদ্ধিসম্পন্ন, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, চিকিৎসক, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি সর্বোপরি দেশের বৃহৎ সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি। তার স্ত্রী ডাঃ মাখদুমা নার্গিস কমিউনিটি ক্লিনিকের অবসরপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালক। রবিবার রাতে একদল দুর্বৃত্ত তাদের উত্তরার বাসায় ঢুকে ছুরি-চাপাতি নিয়ে সশস্ত্র হামলা চালায় ডাঃ সারওয়ার আলী, তার স্ত্রী, কন্যা ও জামাতা এবং তাদের রক্ষা করতে এগিয়ে আসা দুজন প্রতিবেশীর ওপর। হামলার ঘটনায় সবাই কমবেশি আহত হন। তাদের ভাষ্যে জানা যায়, প্রধানত হত্যার উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হয়েছে এই ভয়াবহ নৃশংস হামলা। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বাড়ির দারোয়ান ও ড্রাইভারকে পুলিশ গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে উত্তরা থানা-পুলিশ বাড়ির পার্কিং স্থল থেকে ব্যাগে থাকা সাতটি চাপাতি, বৈদ্যুতিক শক দেয়ার যন্ত্র, টিভি ক্যামেরার স্ট্যান্ড, নাইলনের রশি, রাসায়নিক স্প্রে ইত্যাদি উদ্ধার করেছে। আলামত দেখে প্রতীয়মান হয় যে, বেশ পরিকল্পনা করেই সংঘটিত হয়েছে এই হামলা। ডাঃ সারওয়ার আলীর ভাষ্য, এটি মৌলবাদী জঙ্গীগোষ্ঠীর কাজ। ইতোপূর্বে দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ ও লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ একাধিক বুদ্ধিজীবী-শিক্ষকের ওপর ভয়াবহ সন্ত্রাসী জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটেছে। উল্লেখ্য, বিভিন্ন মৌলবাদী জঙ্গী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক প্রণীত হিটলিস্টে দেশের বিশিষ্ট ৮৪ জন বুদ্ধিজীবী লেখকের তালিকায় নাম ছিল জাফর ইকবালের। সেজন্য সরকারী নিরাপত্তার অংশ হিসেবে তাকে সুরক্ষা প্রদানের নিমিত্ত সর্বক্ষণিক একাধিক গানম্যানও দেয়া হয়েছিল। দুঃখজনক হলো, তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। আরও যা আশ্চর্যের তা হলো ঘটনা ঘটেছিল ড. জাফর ইকবালের নিজস্ব ক্যাম্পাসেই, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পুলিশ-র‌্যাব-কাউন্টার টেররিজম ইউনিট-সোয়াটসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিয়মিত নজরদারির পরও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে, জঙ্গী তৎপরতা কমছে না দেশে। বরং জঙ্গীরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে রাজধানীসহ সারাদেশে তাদের সন্ত্রাসী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। পুলিশের ভাষ্যমতে, জঙ্গীরা অসংগঠিত ও দুর্বল হয়ে এলেও নব্য জেএমবি, আল্লাহর দলসহ বিভিন্ন নামে ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে হামলা ও নাশকতার পাঁয়তারা করছে। উল্লেখ্য, নব্য জেএমবি নামকরণ হয়েছে পুলিশ কর্তৃক। এখন তারা আত্মঘাতী তথা ফিদায়ী স্কোয়াডের সদস্যভুক্ত হয়ে অপেক্ষাকৃত জনবহুল স্থানে এমনকি বাসাবাড়িতেও কাউকে টার্গেট করে হিংসাত্মক তৎপরতা চালানোর দুঃসাহস দেখাচ্ছে। সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে ব্যক্তি ও পরিবারের ওপর। তার মানে দেশ থেকে জঙ্গীবাদ ও তৎপরতা একেবারে নির্মূল হয়নি। সরকার ইতোমধ্যে হিযবুত তাহরীর, আনসার আল ইসলামসহ কয়েকটি জঙ্গী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছে। বর্তমান সরকার ধর্মীয় উগ্রপন্থাসহ সব রকম জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্র মতবাদের কোন স্থান নেই। প্রকৃতপক্ষে জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের হাত ধরে দেশে ধর্মীয় রাজনীতি এবং জঙ্গীবাদের উদ্ভব ঘটে। দেশীয় জঙ্গীদের অস্ত্র ও অর্থের উৎসসহ উৎসাহদাতা, মদদদাতাসহ আন্তর্জাতিক যোগাযোগের বিষয়টি সর্বদাই নজরদারির দাবি রাখে। অর্থাৎ এটি একটি নিরন্তর ও অব্যাহত প্রক্রিয়া। জঙ্গী সন্ত্রাসীরা শুধু অস্ত্র ও বোমাই নয়, বরং প্রযুক্তি ব্যবহারেও অত্যন্তÍ দক্ষ। সেক্ষেত্রে তাদের মোকাবেলা করতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সর্বদাই সতর্ক ও তৎপর হতে হবে। সর্বোপরি সর্বস্তরে সর্বপর্যায়ে তৈরি করতে হবে জনসচেতনতা। পুলিশ অনতিবিলম্বে ডাঃ সারওয়ার আলীর ওপর হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার করে বিচারের সম্মুখীন করবে বলেই প্রত্যাশা।
×