ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আয়ান আব্রাজ

টেনিসে তারুণ্যে মুগ্ধতা

প্রকাশিত: ১২:২৮, ৮ জানুয়ারি ২০২০

টেনিসে তারুণ্যে মুগ্ধতা

ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে টেনিসের নতুন মৌসুম। ব্রিসবেন-অকল্যান্ডে লড়ছেন শীর্ষসারির প্রায় সব তারকারাই। এবার নজর কাড়বেন কে? এই প্রশ্নের উত্তর বলবে সময়। তবে গত বছর বিশ্ব টেনিসে মুগ্ধতার সৌরভ ছড়িয়েছেন তরুণ খেলোয়াড়রাই। বিশেষ করে নাওমি ওসাকা, এ্যাশলে বার্টি কিংবা বিয়াঙ্কা আন্দ্রেস্কুর চমকপ্রদ পারফর্মেন্স ভক্ত-অনুরাগীদের মুগ্ধ-বিমোহিত করেছে মৌসুমের পুরোটা সময়। মাত্র ২০ বছর বয়সেই বিশ্বকে চমকে দেন নাওমি ওসাকা। ২০১৮ সালে ইন্ডিয়ান ওয়েলসের শিরোপা জিতে আলোচনায় আসেন প্রথম। সে বছরে ইউএস ওপেনেই ছাড়িয়ে যান অতীতের সব পারফরম্যান্সকে। সেরেনা উইলিয়ামসকে হারিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম মেজর শিরোপা জয়ের স্বাদ পান তিনি। এরপর গত মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেও চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। ফাইনালে চেক প্রজাতন্ত্রের পেত্রা কেভিতোভাকে ৭-৬ (৭-২), ৫-৭, ৬-৪ গেমে হারিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা জেতেন ২১ বছর বয়সী এই টেনিসার। যা তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্লাম জয়। ওসাকার জন্ম ১৯৯৭ সালের ১৬ অক্টোবর জাপানের ওসাকা শহরে। তার মা টামাকি ওসাকা একজন জাপানিজ হলেও বাবা লিওনার্ড ফ্রান্সিস হাইতির নাগরিক। নাওমির বড় বোন মেরিও একজন টেনিস খেলোয়াড়। দুই বোন একসঙ্গে বহু টুর্নামেন্টের নারী ডাবলে অংশ নিয়েছেন। জন্ম জাপানে হলেও নাওমি ওসাকার বেড়ে ওঠা আমেরিকায়। মাত্র ৩ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে আমেরিকায় পাড়ি জমান তিনি। তখন থেকে আমেরিকাতেই বাস করছেন এই টেনিস তারকা। ওসাকার টেনিসে হাতেখড়ি হ্যারল্ড সলোমন নামের ফ্লোরিডার একটি টেনিস একাডেমিতে। বেড়ে ওঠা এবং টেনিসের হাতেখড়ি আমেরিকায় হলেও স্পোর্টিং কান্ট্রি হিসেবে জন্মভূমি জাপানকে বেছে নেন নাওমি ওসাকা। কিন্তু তিনি ইচ্ছে করলেই আমেরিকার হয়ে খেলতে পারতেন। কিন্তু জাপানকেই বেছে নিয়েছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ওসাকার পর ফ্রেঞ্চ ওপেনে বাজিমাত করেন এ্যাশলে বার্টি। বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের ১৫ নম্বরে থেকে ২০১৯ সাল শুরু করেছিলেন তিনি। তার পরের গল্পটা শুধুই এগিয়ে চলার। টেনিস কোর্টে গত বছরটা দুর্দান্ত কাটে তার। ক্যারিয়ারের প্রথম প্রিমিয়ার ম্যানডেটরি শিরোপা, স্বপ্নের গ্র্যান্ডস্লাম ফ্রেঞ্চ ওপেন জয়, বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান দখল। সর্বশেষ ডব্লিউটিএ ফাইনালসেও বাজিমাত করেন অস্ট্রেলিয়ান টেনিসের এই প্রতিভাবান এই খেলোয়াড়। দারুণভাবে রাঙিয়ে নেন মৌসুমের শেষটাও। অথচ, ২০১৪ সালে হঠাৎ করেই টেনিস থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন এ্যাশলি বার্টি। ছোটবেলাই যে টেনিসে হয়েছিল তার হাতেখড়ি সেই টেনিস ছেড়েই নতুন করে ক্যারিয়ার গড়েন ক্রিকেটে। কিন্তু দুই বছর ক্রিকেট খেলে আবারও ফিরলেন টেনিসে। পরের সিদ্ধান্তটা যে মোটেও ভুল হয়নি তা আরও আগেই প্রমাণ করেছেন তিনি। বিশেষ করে ফরাসী ওপেনে। ক্রিকেট ছেড়ে টেনিসে আসাটা জীবনের সবচেয়ে সেরা সিদ্ধান্ত ছিল তার। বার্টি বলেছেন, ‘মানুষ তো সব সময় নিজের সেরা সিদ্ধান্তÍটা নিতে পারে না। ওই সময় আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমার মনে হয় এটা সেরা সিদ্ধান্ত। এমনকি সামনে যেসব সিদ্ধান্ত নেব ঐগুলো থেকেও এটা সেরা সিদ্ধান্ত। আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’ ওসাকা-বার্টির পর গত বছরে টেনিসপ্রেমীদের মন জয় করা খেলোয়াড়ের নাম বিয়াঙ্কা আন্দ্রেস্কু। কানাডার ইতিহাসই বদলে দেন যিনি। অথচ, গত মৌসুমের আগে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ২০০ জনের তালিকাতেও ছিল না তার নাম। পারফরম্যান্সও ছিল না তেমন ধার। যে কারণে সেই সময়ে ইউএস ওপেনের কোয়ালিফায়িং রাউন্ড থেকেই ছিটকে যান তিনি। কিন্তু এই মুহূর্তে বিশ্ব টেনিসের উজ্জ্বল নক্ষত্র। কানাডার আকাশে ঝলমলিয়ে ওঠা এক দ্বীপ্তমান তারকা। নিজের দেশের হয়ে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ইউএস ওপেনের ট্রফি উঁচিয়ে ধরার অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়েন বিয়াঙ্কা আন্দ্রেস্কু। তাও আবার বিশ্ব টেনিসের মহা তারকা সেরেনা উইলিয়ামসের বিপক্ষে জিতে। শুনে হয়তো আশ্চর্য হতে পারেন অনেকেই। ২০১৮ সালের শেষের দিকে র‌্যাঙ্কিংয়ের ২১০ নম্বরে থাকা এই আন্দ্রেস্কুই এখন পাদপ্রদীপের আলোয়। ইউএস ওপেনসহ ২০১৯ সালে তিনটি শিরোপার দেখা পান তিনি। যার শুরুটা করেছিলেন বিএনপি পরিবাস ওপেনে প্রথম ট্রফি জিতে। এরপর রজার্স কাপ। সর্বশেষ ইউএস ওপেনে বাজিমাত করেন আন্দ্রেস্কু। সেরেনাকে হারিয়ে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরেন তিনি। বিয়াঙ্কার জন্ম ২০০০ সালের ১৬ জুনে। অর্থাৎ সেরেনা যখন তার ক্যারিয়ারের প্রথম মেজর শিরোপা উঁচিয়ে ধরেন তখন জন্মই হয়নি বিয়াঙ্কার। ফাইনালে সেই আমেরিকান টেনিসের জীবন্ত কিংবদন্তি সেরেনাকে সরাসরি সেটে পরাজিত করেন ১৯ বছরের এই তরুণী। সেই সঙ্গে নতুন এক ইতিহাসও গড়েন তিনি। ওপেন যুগে কানাডার প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়েন বিয়াঙ্কা। ১৯৯৯ সালে ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম জেতেন সেরেনা উইলিয়ামস। সেই সময়ে পৃথিবীর আলোই দেখেননি আন্দ্রেস্কু। কেননা তার জন্মই ২০০০ সালের জুনে। ইউএস ওপেনের আগে টরেন্টোতেও একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিলেন আন্দ্রেস্কু-সেরেনা। সেই ম্যাচের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ১৯ মিনিট। পিঠের চোটের কারণে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন সেরেনা। যার সুবাদে রজার্স কাপের চ্যাম্পিয়ন হন আন্দ্রেস্কু। তবে ইউএস ওপেনের ফাইনাল ম্যাচের লড়াইয়ের আবহটা ছিল একেবারেই ভিন্ন। আর্থার এ্যাশ স্টেডিয়ামে ২৩ হাজারেরও বেশি সমর্থক গলা ফাটিয়েছে সেরেনার জন্য। কিন্তু তাতে কী? আবেগ আর সমর্থন দিয়ে তো খেলা চলে না। কোর্টের বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। গত মৌসুমের শেষে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে কানাডিয়ান তারকা বলেছিলেন, ‘দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন সত্যি হলো আমার। আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ এবং অনেক বেশি সন্তুষ্ট। তবে এর জন্য আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি।’
×