ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সোলাইমানির দাফন ॥ ভিড়ে পদদলিত হয়ে ৫০ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ১১:৫৩, ৮ জানুয়ারি ২০২০

সোলাইমানির দাফন ॥ ভিড়ে পদদলিত হয়ে ৫০ জনের মৃত্যু

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ইরানের শীর্ষ জেনারেল ও কুদস বাহিনীর কমান্ডার কাশেম সোলাইমানির দাফন অনুষ্ঠানে ভিড়ের মধ্যে পদদলিত হয়ে মঙ্গলবার অন্তত ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ২১৩ জনের মতো। দেশটির জরুরী পরিষেবা বিভাগের প্রধান পিরহোসেন কুলিবান্ত রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলকে এ তথ্য জানান। খবর আলজাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স ও তেহেরান টাইমসের। মেজর জেনারেল কাশেম সোলাইমানিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার নিজের শহর কেরমানে দাফন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এদিনও লাখো মানুষের ঢল নামে রাস্তায়। এ সময় পদদলিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা। ইরানের জরুরী পরিষেবা বিভাগের প্রধান পিরহোসেন কুলিবান্ত জানান, দাফন অনুষ্ঠানে ভিড়ের মধ্যে পড়ে দুর্ভাগ্যবশত এ পর্যন্ত ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় ২১৩ জনের মতো। আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার ইরাকের বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মার্কিন বিমান হামলায় ৬২ বছর বয়সী এ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন। এরপর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের যুদ্ধোন্মাদনা বিরাজ করছে। সোলাইমানির মৃত্যুতে ইরান তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছিল। ইরাক ও ইরানের বিভিন্ন শহরে কুদস বাহিনীর নিহত এ প্রধানের মরদেহের প্রতি সম্মান জানাতে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে ‘আমেরিকা নিপাত যাক বলে স্লোগান দেয়। মঙ্গলবার ইরানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কেরমানে সোলাইমানির দাফন অনুষ্ঠানেও শোকার্ত জনগণ ‘আমেরিকা নিপাত যাক’, ‘ট্রাম্পের মৃত্যু’ চেয়ে স্লোগান দেয়। ‘মৃত হলেও শহীদ কাশেম সোলাইমানি এখন আরও ক্ষমতাধর,’ দাফন অনুষ্ঠানে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেছেন ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল হোসেন সালামি। বিপ্লবী এ রক্ষীবাহিনী ইরানের ইসলামী শাসনব্যবস্থার রক্ষক; রাজনীতিতে এবং সামরিক বাহিনীতে তাদের প্রভাব ব্যাপক। এর আগে সোমবার তেহরানে সোলাইমানির জানাজায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইমামতি করেন। একপর্যায়ে তাকে কাঁদতেও দেখা গেছে। সোলাইমানির হত্যাকাণ্ডের পরপরই এক ভাষণে আয়াতুল্লাহ খামেনি ‘শত্রুদের জন্য ভয়াবহ প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কুদস বাহিনীর নতুন প্রধান ইসমাইল ঘানিও বলেছেন, তেহরান ‘কয়েক ধাপে’ সোলাইমানি হত্যার বদলা নেবে। ১৯৯৮ সাল থেকে ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর ‘বিদেশী শাখার দায়িত্ব প্রাপ্ত সোলাইমানিকে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির পর দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। যুক্তরাষ্ট্র তাকে ‘সন্ত্রাসী’ এবং মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন বাহিনীর জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করলেও নিজের দেশে সোলাইমানি বীরের মর্যাদা পেয়ে আসছিলেন। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে তার সমর্থন ছিল বাশার আল আসাদের প্রতি। লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকে জঙ্গীগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) বিরোধী শিয়া গোষ্ঠীগুলোকেও তিনি দিকনির্দেশনা দিতেন বলে মনে করা হতো। ৫২ যুদ্ধবিমান উড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মহড়া কাশেম সোলাইমানি হত্যার পর ইরানের প্রতিশোধের হুমকির প্রেক্ষিতে দেশটির ৫২ গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক স্থাপনায় হামলার হুমকি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই সূত্র ধরে এবার একযোগে ৫২ অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান উড়িয়ে সতর্ক করলো যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার দেশটির উটাহ রাজ্যের হিল বিমানঘাঁটি থেকে অর্ধশতাধিক লাইটনিং টু স্টিলথ যুদ্ধবিমান উড়িয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে অস্ত্রশস্ত্রে পুরোপুরি সজ্জিত হলেও যুদ্ধবিমানগুলো এখনই হামলার জন্য নয়, বরং ইরানকে ভয় দেখাতেই এ মহড়ার আয়োজন করা হয়।যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫এ মডেলের এসব যুদ্ধবিমানের একেকটির দাম প্রায় চার দশমিক দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার (৩৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা প্রায়)। মহড়ায় অংশ নেন ৩৮৮তম ও সংরক্ষিত ৪১৯তম ফাইটার উইংসের সদস্যরা। ৪১৯তম ফাইটার উইংসের পক্ষ থেকে এক টুইটে বলা হয়েছে, ‘এ মহড়া সার্বিকভাবে এফ-৩৫ ব্যবহারে আমাদের পাইলটদের দক্ষতার চূড়ান্ত পরীক্ষা নিয়েছে। আমরা উড়তে, লড়তে আর জিততে প্রস্তত। ইরাক থেকে সৈন্য সরিয়ে নিচ্ছে জার্মানি নিরাপত্তার কারণে ইরাক থেকে কিছু সৈন্যকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানি। মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের সামরিক কমান্ডার কাশেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর দেশটিতে উত্তেজনা তৈরি হওয়ায় সৈন্য সরিয়ে নেয়ার এই সিদ্ধান্ত সোমবার দেশটির আইনপ্রণেতাদের জানিয়েছে ক্ষমতাসীন জার্মান সরকার। মঙ্গলবার সৈন্য সরিয়ে নেয়ার এই খবর দেশটির পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। এক চিঠিতে জার্মান সরকার দেশটির সংসদকে জানিয়েছে, ইরাকী নিরাপত্তাবাহিনীর প্রশিক্ষণের জন্য বাগদাদে নিয়োজিত জার্মানির ১২০ সৈন্যের মধ্যে প্রায় ৩০ জনকে জর্ডান এবং কুয়েতে পুনর্মোতায়েন করা হবে। সোলাইমানি হত্যা বেআইনী-মাহাথির মার্কিন হামলায় কাশেম সোলাইমানির গুপ্তহত্যাকে অনৈতিক ও আইন পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। এ হত্যাকে তিনি তুরস্কের সৌদি দূতাবাসে সাংবাদিক জামাল খাশোগির গুপ্তহত্যার সঙ্গে তুলনা করেন। এ দুই হত্যাযজ্ঞ নৃশংস ও নিকৃষ্ট বলেন মাহাথির। মঙ্গলবার সোলাইমানি হত্যার বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে এসব কথা বলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সোলাইমানির গুপ্তহত্যা কেবল রাষ্ট্রীয় আইনের লঙ্ঘন নয়, এটি বৈশ্বিক আইনেরও পরিপন্থী। অন্য দেশের সীমানায় ঢুকে এই হত্যা সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। এটি সে রকমই একটি অপরাধ, যখন একটি দেশ নিজেই সিদ্ধান্ত নেয় অন্য দেশের নেতাদের হত্যার। জামাল খাশোগি ও সোলাইমানি হত্যার ঘটনাই অনৈতিক, আইন বিরোধী।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কটাক্ষ করে মাহাথির বলেন, এই ক্ষমতাবান ভদ্রলোকের সোলাইমানি হত্যার সিদ্ধান্ত ‘সন্ত্রাসবাদ’ বৃদ্ধি করতে পারে। ‘কে ক্ষমতাবান আর কে দুর্বল তা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন নই। আমার কাছে যা বেঠিক মনে হবে, আমি সে বিষয়ে সত্য উচ্চারণ করব। মতামত জানানোর অধিকার আমার আছে।’
×