ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে না- শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ৮ জানুয়ারি ২০২০

বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে না- শেখ হাসিনা

[গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দেন, তার পূর্ণ বিবরণ-] ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে গত বছর ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমার চতুর্থবার শপথ নেয়ার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনাদের সবাইকে খ্রিস্টীয় নতুন বছরের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমি এই শুভক্ষণে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোনকে। মুক্তিযোদ্ধাদের আমি সালাম জানাচ্ছি। আমি গভীর বেদনার সঙ্গে স্মরণ করছি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘৃণ্য হত্যাকা-ের শিকার আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন ভাইÑ মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ও দশ বছরের শেখ রাসেল, কামাল ও জামালের নবপরিণীতা স্ত্রী সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, আমার চাচা মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জামিল এবং পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এএসআই সিদ্দিকুর রহমানসহ সেই রাতের সব শহীদকে। এই উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক ও গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। স্মরণ করছি ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহত আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২২ নেতাকর্মীকে। স্মরণ করছি ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতাসীন হওয়ার পর নির্মম হত্যাকা-ের শিকার সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার, মঞ্জুরুল ইমাম, মমতাজ উদ্দিনসহ ২১ হাজার নেতাকর্মীকে। ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসন্ত্রাস এবং পেট্রোল বোমা হামলায় যারা নিহত হয়েছেন আমি তাদের স্মরণ করছি। আহত ও স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধিসহ যেসব বিশিষ্ট ব্যক্তি মারা গেছেন, আমি তাদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। ২০২০ খ্রিস্টাব্দ আমাদের জাতীয় জীবনে এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বছর। এ বছর উদযাপিত হতে যাচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। আগামী ১৭ মার্চ বর্ণাঢ্য উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার শুভ সূচনা হবে। আমরা ইতোমধ্যেই ২০২০-২১ সালকে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছি। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অনুষ্ঠানমালা যুগপৎভাবে চলতে থাকবে। এই উদযাপন শুধু আনুষ্ঠানিকতা-সর্বস্ব নয়, এই উদযাপনের লক্ষ্য জাতির জীবনে নতুন জীবনীশক্তি সঞ্চারিত করা; স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে জাতিকে নতুন মন্ত্রে দীক্ষিত করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। ২০০৯ সাল থেকে আমরা একটানা সরকার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছি। আমরা একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে সরকার পরিচালনা করছি। আর সে লক্ষ্য হলো সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং তাদের জীবনমানের উন্নয়নসহ সকলের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। পাকিস্তানের ২৪ বছরের শোষণ এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পোড়া মাটি নীতির ফলে ধ্বংসপ্রাপ্ত অকাঠামো ও অর্থনীতির ওপর দাঁড়িয়ে জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে তিনি বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেন। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে উঠে এসেছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর বাংলাদেশের অগ্রগতি থেমে যায়। পঁচাত্তর পরবর্তী সরকারগুলোর জনবিচ্ছিন্নতা, লুটপাট ও দর্শনবিহীন রাষ্ট্র পরিচালনা বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাহীন রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ পরিচিতি পেয়েছিল ঝড়, জলোচ্ছ্বাস এবং ভিক্ষুক-দরিদ্র-হাড্ডিসার মানুষের দেশ হিসেবে। আমরা ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে যখন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল প্রায় ৫৫ শতাংশ। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আমরা দারিদ্র্যবিমোচনে বেশকিছু যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করি। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন ভাতা চালু, তাদের জন্য বিশেষ কর্মসূচী যেমনÑ আশ্রয়ণ প্রকল্প, ঘরে ফেরা, কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের মতো কর্মসূচী, দারিদ্র্যবিমোচন এবং প্রান্তিক মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখে। কৃষক ও কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণের ফলে দেশ দ্রুত খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জন করে। পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন খাতে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী নীতিমালা গ্রহণ করি, যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতে। দেশ যখন আর্থিক স্থবিরতা কাটিয়ে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মহাসড়কে অভিযাত্রা শুরু করে, ঠিক তখনই ২০০১ সালে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত আবার ক্ষমতায় আসে। রাষ্ট্রীয় ছত্রছায়ায় শুরু হয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন। ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। শুধু রাজনৈতিক কারণে বহু চলমান উন্নয়ন প্রকল্প স্থগিত করে দেয়া হয়। ‘হাওয়া ভবন’ খুলে অবাধে চলতে থাকে রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুটপাট। তারই অবশ্যম্ভাবী পরিণতি ২০০৭ সালের সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। যে সরকার বিনা কারণে আমাকে প্রায় এক বছর কারাবন্দী রাখে। ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে আমরা ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করি। বিএনপি-জামায়াত এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২ বছরের আর্থিক ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা কাটিয়ে এবং সেই সময়কার বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলা করে আমরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় এক নতুন মাত্রা যোগ করতে সক্ষম হই। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আজ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বে একটি সুপরিচিত নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির উচ্চ হার অর্জনের পাশাপাশি নানা সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে। দারিদ্র্যবিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ, শিক্ষার হার ও গড় আয়ু বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ তার দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশীদেরই শুধু নয়, অনেক উন্নত দেশকেও ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। আমরা আপনাদের জন্য কী করতে চেয়েছিলাম আর কী করতে পেরেছি এ বিষয়ে আমরা সব সময়ই সচেতন। আপনারাও নিশ্চয়ই মূল্যায়ন করবেন। তবে আমরা মুখরোচক প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাসী নই। আমরা তা-ই বলি, যা আমাদের বাস্তবায়নের সামর্থ রয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে আমরা রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করেছিলাম। যার অন্তর্নিহিত মূল লক্ষ্য ছিল ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত করা। মাথাপিছু আয় ১২০০ মার্কিন ডলার অতিক্রম করায় বিশ্বব্যাংক ২০১৫ সালে বাংলাদেশকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে যেখানে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার, ২০১৯ সালে তা ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১.৫ শতাংশ। বর্তমানে দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২০.৫ শতাংশে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের হিসাব মতে ২০১০ সালে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসরত কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা ছিল ৭৩.৫ শতাংশ। ২০১৮ সালে তা ১০.৪ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। ২০১৮ সালে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে স্থান দিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির বিকাশের প্রমাণ মেলে তার বার্ষিক আর্থিক পরিকল্পনায়। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বিএনপি সরকারের শেষ বছরে বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৬১ হাজার কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেটের আকার সাড়ে আট গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকায়। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকায়। বাজেটের নব্বই ভাগই এখন বাস্তবায়ন হয় নিজস্ব অর্থায়নে। গত অর্থবছরে আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮.১৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ শতাংশের নিচে। বছরের শেষদিকে আমদানি নির্ভর পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি ব্যতীত অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিক ছিল। বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ মজবুত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ছোটোখাটো অভিঘাত এই অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ৫ দেশের একটি এখন বাংলাদেশ। আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী পিপিপির ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থান ৩০তম। প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারসের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বে ২৩তম স্থান দখল করবে। এইচ বি এস সির প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৬তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছে, ২০২০-এ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলো থেকে এগিয়ে থাকবে। আমরা মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি। পাবনার রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াটের পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। ভারতের সঙ্গে স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছিটমহল সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমানার বিরোধ মীমাংসার ফলে বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশির ওপর আমাদের স্বার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। খুলে গিয়েছে নীল-অর্থনীতির দ্বার। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবেলা করে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন অর্জনের জন্য আমরা ‘বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ নামে শতবর্ষের একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রাগুলো সম্পৃক্ত করে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজও শুরু হয়েছে। দশ বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের মধ্যে বিরাট ব্যবধান। মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। এদেশের মানুষ ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখা ভুলেই গিয়েছিল। মানুষ আজ স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখে উন্নত জীবনের। স্বপ্ন দেখে সুন্দরভাবে বাঁচার। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মিত হবে আর সেই সেতু দিয়ে গাড়ি বা ট্রেনে সরাসরি পারাপার করতে পারবে- এটা ছিল মানুষের স্বপ্নেরও অতীত। আমরা সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে চলেছি। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। তিন ভাগের দুই-ভাগেরও বেশি কাজ শেষ হয়েছে। পদ্মা সেতুর প্রায় অর্ধেকাংশ এখন দৃশ্যমান। রাজধানীর যানজট নিরসনে মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। পাতালরেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে দেশের প্রথম টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-চন্দ্রা মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করার পর চন্দ্রা-বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব স্টেশন, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম স্টেশন-রংপুর এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। নতুন রেলপথ নির্মাণ, নতুন কোচ ও ইঞ্জিন সংযুক্তি, ই-টিকেটিং এবং নতুন নতুন ট্রেন চালুর ফলে রেলপথ যোগাযোগে নব দিগন্তের সূচনা হয়েছে। ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত ৪০১ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। ১২২টি নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন থেকেই সেতুর ওপর দিয়ে রেল চলাচল শুরু হবে বলে আশা করছি। দেশের সকল জেলাকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনা হচ্ছে। বিমান বহরে ৬ নতুন ড্রিমলাইনার যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিজস্ব উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। দেশের প্রতিটি গ্রামে শহরের সুবিধা পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৯৫ শতাংশ মানুষের ঘরে বিদ্যুত সুবিধা পৌঁছে গেছে। ৯৭ ভাগ মানুষ উন্নত স্যানিটেশন সুবিধার আওতায় এসেছেন। টেকসই বিদ্যুত উৎপাদন এবং সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য রামপাল, মাতারবাড়ি, পায়রা ও মহেশখালীতে মেগা বিদ্যুত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল থেকে দৈনিক ৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। কিশোর ও যুব সম্প্রদায়ের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য প্রতিটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম এবং অডিটোরিয়াম নির্মাণ করা হচ্ছে। সাড়ে আঠার হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে স্বাস্থসেবা আজ সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায়। উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে সুযোগ-সুবিধা। স্থাপন করার হয়েছে হৃদরোগ, কিডনি, ক্যান্সার, নিউরো, চক্ষু, বার্ন, নাক-কান-গলাসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। অব্যাহত নার্সের চাহিদা মেটাতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে নার্সিং ইনস্টিটিউট। বিগত ১১ বছরে ২০ হাজার ১০২ নতুন চিকিৎসক এবং ২১ হাজার ৬৯৭ নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রতি জেলায় কমপক্ষে একটি করে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনের কাজ চলছে। খাদ্যশস্য, মাছ এবং মাংস উৎপাদনে আমরা স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। চাল উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ৪র্থ এবং মাছ ও সবজি উৎপাদনে তৃতীয়। কৃষি উপকরণের দাম কয়েক দফা হ্রাস করা হয়েছে। সর্বশেষ গত মাসে ডাই-এ্যামোনিয়াম ফসফেট বা ডিএপি সারের দাম কেজিপ্রতি ৯ টাকা কমিয়ে কৃষক পর্যায়ে ১৬ টাকা করা হয়েছে। ভর্তুকি মূল্যে কৃষকদের মধ্যে কৃষি উপকরণ ও যন্ত্রপাতি বিতরণ করা হচ্ছে। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যায় পর্যন্ত প্রতিবছর ২ কোটি ৩ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি, উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। ২০১০ সাল থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বছরের প্রথম দিনে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক দেয়া হচ্ছে। আমরা এ পর্যন্ত ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৬৮৫টি মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ জাতীয়করণ করেছি। ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৬৬১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষার হার ৭৩ শতাংশ অতিক্রম করেছে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৭৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এই বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৫ কোটি ১০ লাখ মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। কেউ যাতে গৃহহীন না থাকে সেজন্য আমরা একাধিক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছি। জমি আছে ঘর নেই- এমন পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ভূমিহীন, নদীভাঙনে উদ্বাস্তুদের জন্যও ঘর নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। এ জন্য বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে পনেরো কোটিরও বেশি সিম ব্যবহৃত হচ্ছে। আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি। দেশের ৩,৫০০ শ’র বেশি ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেয়া হয়েছে। আমরা ফোর-জির পর ফাইভ-জি প্রযুক্তি চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের প্রধান লক্ষ্য তরুণ সমাজের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা। চলতি মেয়াদে আমরা দেড় কোটি কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে ১৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিপুলসংখ্যক দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীগণ বিনিয়োগের জন্য আসছেন। সারাদেশে ২ ডজনের বেশি হাইটেক পার্ক এবং আইটি ভিলেজ নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য সরকারী এবং বেসরকারী পর্যায়ে সারাদেশে ভকেশনাল এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে। ফ্রি ল্যান্সিং-এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ৬ লাখেরও বেশি ফ্রিল্যান্সার আইটি খাতে নিজেদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। পাশাপাশি কৃষি, মৎস্য, পশুপালন, পর্যটন, সেবা খাতসহ অন্যান্য খাতে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। আর্মড ফোর্সেস গোল-২০৩০-এর আলোকে প্রতিটি বাহিনীকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বহিঃশত্রুর যে কোন আক্রমণ বা আগ্রাসন মোকাবেলায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সক্ষম করে গড়ে তুলতে যা যা করণীয় আমরা তা করে যাচ্ছি। বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ বিস্তার রোধে আমাদের পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উল্লেখযোগ্য সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। দেশবাসী এজন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী দেশসমূহ এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে সব সময়ই সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলার নীতিতে বিশ্বাসী। জাতির পিতা প্রণীত পররাষ্ট্র নীতির সারকথা- সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়- এর ভিত্তিতেই আমাদের পথচলা। বিশেষ করে প্রতিবেশীদের সঙ্গে আমরা সুসম্পর্ক ও সৌহার্দ্য বজায় রাখাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। আলোচনার মাধ্যমে আমরা দ্বিপাক্ষিক সমস্যা সমাধান করতে চাই। এটি আমাদের দুর্বলতা নয়, কৌশল। এ কারণেই মিয়ানমারের দিক থেকে নানা উস্কানি সত্ত্বেও আমরা সে ফাঁদে পা দেইনি। আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের পথ থেকে সরে যাইনি। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে মামলা হয়েছে। আমরা আশা করছি, এই আদালত থেকে আমরা একটি স্থায়ী সমাধান সূত্র খুঁজে পাব। আর্থ-সামাজিক খাতে অব্যাহত উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। যার সাক্ষ্য মেলে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের প্রতি বৈশ্বিক সমর্থনের মধ্য দিয়ে। সম্প্রতি ইকোসক, সিএফসি, সি আই এ পি, এ পি ডি আই এমসহ বেশকিছু আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশ নির্বাচিত হয়েছে। এ বছরও জাতিসংঘে বাংলাদেশ উত্থাপিত ‘শান্তির সংস্কৃতি’ এবং ‘প্রাকৃতিক উদ্ভিজ্জ তন্তু ও টেকসই উন্নয়ন’ শীর্ষক রেজুলেশনসহ রোহিঙ্গা বিষয়ক বেশ কয়েকটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। আপনাদের স্মরণ আছে, গত বছর সরকার গঠনের পর জাতির উদ্দেশে ভাষণে আমি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের শোধরানোর আহ্বান জানিয়েছিলাম। আমি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করি। মানুষের কল্যাণের জন্য আমি যে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দ্বিধা করব না। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমি আবারও সবাইকে সতর্ক করে দিতে চাই- দুর্নীতিবাজ যেই হোক, যত শক্তিশালীই হোক না কেন- তাদের ছাড় দেয়া হবে না। দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি আহ্বান থাকবে, যেই অবৈধ সম্পদ অর্জনের সঙ্গে জড়িত থাকুক, তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন। সাধারণ মানুষের ‘হক’ যাতে কেউ কেড়ে নিতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করছি। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির নির্মূল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দুর্নীতি বন্ধে জনগণের অংশগ্রহণ জরুরী। মানুষ সচেতন হলে, দুর্নীতি আপনা-আপনি কমে যাবে। জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। পবিত্র ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা করে কেউ যাতে তরুণদের বিপথে পরিচালিত করতে না পারে, সেজন্য মসজিদের ইমামসহ ধর্মীয় নেতাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। সারাদেশে ৬৫০টি মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যেখানে হিংসা-বিদ্বেষ হানাহানি থাকবে না। সকল ধর্ম-বর্ণ এবং সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন। সকলে নিজ নিজ ধর্ম যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন করতে সক্ষম হচ্ছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমরা সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনের শাসনে বিশ্বাসী। আমরা বিশ্বাস করি জনগণের রায়ই হচ্ছে ক্ষমতার পালাবদলের একমাত্র উপায়। যে কোন শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে, অযৌক্তিক দাবিতে ধ্বংসাত্মক কর্মকা-কে আমরা বরদাশত করব না। দেশবাসী অতীতে আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি সন্ত্রাস এবং মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা দেখেছে। বাংলাদেশের মাটিতে এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের পুনরাবৃত্তি আর হতে দেয়া হবে না। আমরা সংসদকে কার্যকর করতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। সরকারী, বিরোধীদলের সংসদ সদস্যগণের অংশগ্রহণ সংসদকে প্রাণবন্ত করেছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর সরকার গঠনের এক বছর পূর্ণ হলো। বিগত এক বছর আমরা চেষ্টা করেছি আপনাদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে। আমরা সবক্ষেত্রে শতভাগ সফল হয়েছি তা দাবি করব না। কিন্তু এটুকু জোর দিয়ে বলতে পারি, আমাদের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। অতীতের ভুল-ভ্রান্তি এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব। আমাদের সামনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে। সকলের সহযোগিতায় আমরা সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করব, ইনশাআল্লাহ। গত বছর দু’একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, আমরা এসব কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িতদের প্রশ্রয় দেইনি। জড়িতদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসনিক এবং আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কোন কোন মহল গুজব ছড়িয়ে অরাজকতা সৃষ্টির মাধ্যমে ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছে। আমরা জনগণের সহায়তায় দ্রুত সেসব অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। আমাদের সব সময়ই এ ধরনের গুজব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু জ্বর গত বছর সারাদেশে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া সত্ত্বেও বেশকিছু মূল্যবান প্রাণহানি ঘটেছে এই রোগে। আমি শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। এডিস মশার বিস্তার রোধে আগে থেকেই সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিচ্ছি। সাধারণ মানুষকে ঘিরেই আমার সকল কার্যক্রম। আপনাদের উপর আমরা পূর্ণ আস্থা রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ অসাধারণ পরিশ্রমী এবং উদ্ভাবন-ক্ষমতাসম্পন্ন। যে কোন পরিস্থিতির সঙ্গে তারা নিজেদের মানিয়ে নিতে সক্ষম। অল্পতেই সন্তুষ্ট এ দেশের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। জাতির পিতা আজীবন সংগ্রাম করেছেন এসব মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, তাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। তার কন্যা হিসেবে আমার জীবনেরও একমাত্র লক্ষ্য মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। আমার উপর ভরসা রাখুন। আমি আপনাদেরই একজন হয়ে থাকতে চাই। বাঙালী জাতি বীরের জাতি। ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা এদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি। এমন জাতি পৃথিবীতে কোনদিন পিছিয়ে থাকতে পারে না। আমরাও আর পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। আসুন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে আমরা দলমত নির্বিশেষে সকলে মিলে তাঁর স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য নতুন করে শপথ নেই। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চিরজীবী হোক
×