ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পরিসংখ্যানে ফেডারেশন কাপ ফুটবলের নানা দিক

প্রকাশিত: ১২:১৭, ৭ জানুয়ারি ২০২০

পরিসংখ্যানে ফেডারেশন কাপ ফুটবলের নানা দিক

রুমেল খান ॥ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর লীগ ছাড়া বেশ কটি ঘরোয়া টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হতো বেশ জাঁকজমকভাবে। দুঃখজনকভাবে এগুলোর বেশিরভাগই নানা কারণে বন্ধ হয়ে যায় পরবর্তীতে। যেমনÑ শেরে বাংলা কাপ, সোহরাওয়ার্দী কাপ, ডামফা কাপ, আগা খান গোল্ড কাপ, আজমেরি বেগম গোল্ড কাপ (ফেনী), খান বজলুর রহমান গোল্ড কাপ (ফেনী), জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ ... ইত্যাদি। টিকে থাকে হাতে গোনা মাত্র তিনটি টুর্নামেন্ট। এগুলোর মধ্যে আছে স্বাধীনতা কাপ, ফেডারেশন কাপ ও সুপার কাপ। সুপার কাপ সবার পরে শুরু হয়, ২০০৯ সালে। ২০১৩ সালে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হয়ে এখন বাফুফের নিস্ক্রিয়তায় এটি আপাতত বন্ধ রয়েছে (মোহামেডান জিতেছে ২ বার, ঢাকা আবাহনী জিতেছে ১ বার)। সে তুলনায় ফেডারেশন কাপের আসরটি বলতে গেলে নিয়মিতই হয়ে আসছে সেই ১৯৮০ সাল থেকে। এ পর্যন্ত এটি অনুষ্ঠিত হয়েছে ৩১ বার। ঘরোয়া ফুটবলের মৌসুক সূচক আসর হিসেবে ধরা হয়ে থাকে ফেডারেশন কাপকে। ১৯৮০ সাল থেকে আসরটির যাত্রা শুরু। ৩৯ বছরে মোট ৩০ বার আয়োজিত হলেও ১৯৯০, ৯২, ৯৩, ৯৬, ৯৮, ২০০৪, ০৬, ০৭ এবং ১৪ সালে মোট ৯ বার মাঠে গড়ায়নি আসরটি। এই ৩১ বারের মধ্যে আসরটির শিরোপা জিতেছে মাত্র সাতটি ক্লাব। এরা হলোÑ আবাহনী, মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধা, ব্রাদার্স, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল। সাত নম্বর ক্লাব হিসেবে এই তালিকায় রবিবার নাম উঠিয়েছে বসুন্ধরা কিংস। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে তারা ২-১ গোলে যাদেও হারিয়েছে, সেই রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটিরও কিন্তু সুযোগ ছিল প্রথমবারের মতো এই আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়ার। এবার আসা যাক ফেডারেশন কাপের বিভিন্ন দিক নিয়ে। এই আসরে সবচেয়ে বেশিবার ফাইনাল খেলেছে আবাহনী লিমিটেড, ১৮ বার। সবচেয়ে বেশি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব আবাহনীরই, ১১বার। ১৯৮২ সালে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে তারা চির প্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে। এছাড়া ১৯৮৫ সালে ব্রাদার্সকে ১-০, ১৯৮৬ আসরে একই দলকে ২-১, ১৯৮৮ সালে মোহামেডানকে ১-০, ১৯৯৭ সালে আরামবাগকে ২-১, ১৯৯৯ সালে মুক্তিযোদ্ধাকে টাইব্রেকার ৫-৩ (০-০), ২০০০ সালে মোহামেডানকে ২-১, ২০১০ সালে শেখ জামাল ধানম-িক টাইব্রেকারে ৫-৩, ২০১৬ সালে আরামবাগকে ২-১, ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম আবাহনীকে ৩-১ ও ২০১৮ সালে বসুন্ধরা কিংসকে ৩-১ গোলে হারায়। সবচেয়ে বেশি ৭ বার রানার্সআপও হয়েছে আবাহনী। তারা রানার্সআপ হয় ১৯৮১, ১৯৮৩, ১৯৮৯, ১৯৯৪, ১৯৯৫, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে। সবচেয়ে কম ১ বার করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পেয়েছে দুটি ক্লাব। একটি শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র (২০১২) এবং অন্যটি বসুন্ধরা কিংস (২০১৯-২০)। ৩১ আসরের মধ্যে ৫ আসরের ফাইনালের নিষ্পত্তি হয়েছে টাইব্রেকারে। ১৯৯১ আসরে ব্রাদার্স মোহামেডানকে ৪-২ (০-০) গোলে, ১৯৯৫ সালে মোহামেডান আবাহনীকে ৬-৫ (০-০) গোলে, ১৯৯৯ সালে আবাহনী মুক্তিযোদ্ধাকে ৫-৩ (০-০) গোলে, ২০০৮ সালে মোহামেডান আবাহনীকে ৩-২ (১-১) গোলে ও ২০০৯ সালে মোহামেডান আবাহনীকে ৪-১ (০-০) গোলে। সবচেয়ে টানা ৫ বার ফাইনাল খেলেছে মোহামেডান (১৯৮০-৮৪ পর্যন্ত)। তবে ১৯৮৪ সালের ফাইনাল দর্শক গোলযোগে পরিত্যক্ত হলে (প্রতিপক্ষ আবাহনী) সেই ফাইনালটি বাতিল বলে ঘোষিত হয়। আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ হচ্ছে সেই অভাগা দল, যারা সবচেয়ে বেশিবার (৩ বার) ফাইনাল খেলে একবারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি! ১৯৯৭, ২০০১ ও ২০১৬ সালে স্বপ্নভঙ্গেও হতাশায় দগ্ধ হয়েছিল তারা। এছাড়া আরও চারটি ক্লাব আছে, যারা ফাইনাল খেলেও একবারও শিরোপা জয়ের স্বাদ পায়নি। ক্লাবগুলো হলোÑ ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব (১৯৮৭), টিম বিজেএমসি (২০১১-১২), চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড (২০১৭) এবং রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটির (২০১৯-২০)। সর্বশেষ আসরে অংশ নিয়েছিল ১৩ ক্লাব। এদের মধ্যে একমাত্র নবাগত দল ছিল বাংলাদেশ পুলিশ ফুটবল ক্লাব। উত্তর বারিধারা ফিরেছে দীর্ঘদিন পর। এই আসরে অপেক্ষাকৃত ছোট ক্লাবগুলো বেশ ভাল খেলেছে। যেমন পুলিশ ও রহমতগঞ্জ। পুলিশ বিদায় নেয় সেমিফাইনাল থেকে। রহমতগঞ্জ তো কোয়ার্টারে আবাহনী ও সেমিতে মোহামেডানকে হারিয়ে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দেয়। এমনকি ফাইনালের আগ পর্যন্ত তারাই ছিল একমাত্র অপরাজিত দল। ফেডারেশন কাপের ৩৯ বছরের ইতিহাসে এবং নিজেদের ৮৬ বছরের ক্লাব ইতিহাসে এটাই ছিল রহমতগঞ্জের সেরা নৈপুণ্য। পুলিশ ফুটবল ক্লাব যে নৈপুণ্য দেখিয়েছে, তা ছিল প্রশংসনীয়। নতুন ক্লাব হিসেবে এই পর্যন্ত পৌঁছাতে পারাও একটি বড় কৃতিত্ব। শুধু তাই নয়, তাদের আমেরিকান ফুটবলার সিডনি রিভেরা ৪ গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। তারুণ্য নির্ভর মোহামেডানের যদিও সম্ভাবনা ছিল ফাইনালে খেলার। কিন্তু শেষ চার থেকেই বিদায় নিতে হয়। তবে তারা জিতেছে ফেয়ার প্লে ট্রফি।
×