ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছায়ানটে শাস্ত্রীয় ধারার যন্ত্রসঙ্গীতের আসর

প্রকাশিত: ১১:১৯, ৭ জানুয়ারি ২০২০

ছায়ানটে শাস্ত্রীয় ধারার যন্ত্রসঙ্গীতের আসর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একসময় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তীর্থভূমি ছিল এই ভূখণ্ড। সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে এদেশের উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের সেই সোনালি অধ্যায়। তাই বলে একেবারেই থেমে নেই শুদ্ধ সঙ্গীতের চর্চাটি। বরং ক্রমশ পুনরুজ্জীবনের পথে এগুছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত। বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের নবজাগরণের প্রত্যয়ে গড়ে উঠছে নতুন সংগঠন। সোমবার লহরী নামের তেমনই এক যন্ত্রসঙ্গীত সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটল। শাস্ত্রীয় আঙ্গিকের যন্ত্রসঙ্গীত আসর আয়োজনের মাধ্যমে পথচলা শুরু হলো সংগঠনটির। পৌষের সন্ধ্যায় ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনের বক্তৃতা কক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেতার, এ¯্রাজ ও সারেঙ্গীর সুরের সঙ্গে তবলার বোলে সাজানো ছিল সে পরিবেশনা। রাগ-রাগিনীর সুরমাখা দেড় ঘণ্টার যন্ত্রসঙ্গীতানুষ্ঠানটি উপভোগ করেছেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতানুরাগীরা। অনুষ্ঠানে ছিল না কোন অতিথি কথন কিংবা বক্তৃতার বাগাড়ম্বর। সেতারের ¯িœগ্ধ সুরে সরাসরি শুরু হয় পরিবেশনা পর্ব। ভুপালী রাগে যুগলবন্দী প্রথম পরিবেশনাটি উপস্থাপন করেন মেহেরীন আলম ও রিংকু। তাদের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন অঞ্জন সরকার। রাগ ইমনে ভর করে এ¯্রাজে সুর ছড়িয়েছেন শুক্লা সরকার। তার সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন প্রবীর কুমার দাস। এরপর শোনা গেছে অঞ্জন সরকার পরিবেশিত তবলাবাদন। এই শিল্পীর সঙ্গে নাগমা বাজিয়ে সঙ্গত করেন ধ্রুব সরকার। অনুষ্ঠানের শেষ পরিবেশনাটি উপস্থাপন করেন শৌনক দেবনাথ ঋক। রাগ রাগেশ্রী আশ্রিত সেই সারেঙ্গীর সুরে প্রশান্ত হয়েছে শ্রোতার অন্তর। আয়োজনটি প্রসঙ্গে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতনির্ভর যন্ত্রসঙ্গীত সংগঠন লহরীর সাধারণ সম্পাদক শুক্লা সরকার জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে শাস্ত্রীয় ধারার যন্ত্রসঙ্গীত নিয়ে তেমনভাবে কাজ হচ্ছে না। ফলে সারেঙ্গী ও এ¯্রাজের বাদন প্রায় বিলুপ্তির পথে। আমরা এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ বাদ্যযন্ত্রের চর্চা ও প্রসারে কিছুটা ভূমিকা রাখার চেষ্টা করলাম। এছাড়া নতুন এই সংগঠনটি শুদ্ধসঙ্গীতের যথাযথ চর্চায় কাজ করে যাবে। বাঙালী সংস্কৃতির বিকাশ ও শিকড়ের সন্ধান করতেও শুদ্ধসঙ্গীতের বিকল্প নেই। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য যন্ত্রসঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুদ্ধসঙ্গীত চর্চা ও এর বিকাশ ঘটানো। বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসবের চতুর্থ দিনের পরিবেশনা ॥ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে চলছে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব। একাডেমির নন্দন মঞ্চে দেশের ৬৪টি জেলা, ৬৪টি উপজেলা এবং জাতীয় পর্যায়ের পাঁচ হাজারের অধিক শিল্পী ও শতাধিক সংগঠনের অংশগ্রহণে ২১ দিনব্যাপী উৎসবের চতুর্থ দিন ছিল রবিবার। এ দিনের বৈকালিক আয়োজনে পরিবেশনা উপস্থাপন করে জামালপুর, সিরাজগঞ্জ ও পঞ্চগড় জেলার শিল্পীরা জেলার পরিবেশনার আগে ছিল একাডেমি ঢাকার পরিবেশনায় এ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী ও বরেণ্য শিল্পী সৈয়দ হাসান ইমামের একক আবৃত্তি। ছিল বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিল্পীদের সমবেত সঙ্গীত পরিবেশনা। দ্বীপা খন্দকারের পরিচালনায় ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর’ গানের সুরে সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে দিব্য সাংস্কৃতিক সংগঠন। রাত ৮টায় দর্শনীর বিনিময়ে অনুষ্ঠিত হয় কুষ্টিয়ার ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্য পদ্মার নাচন। রেজাউল সলকের নির্দেশনায় এবং রেজাউল সলক ও নছিমন নাট্যগোষ্ঠীর পরিবেশনায় ‘চাঁদ সওদাগরের বাণিজ্য পালা ও বেহুলার বিয়ে’ শীর্ষক পরিবেশনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন শেরাবুল ইসলাম, জানরুল ম-ল, আলী হোসেন, আরিফুল, উজ্জ্বল প্রমুখ। কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা, মিরপুর ও দৌলতপুর থানার বিভিন্ন গ্রামে পদ্মপুরাণের কাহিনী নিয়ে পদ্মার নাচন নামে এক ধরনের পরিবেশনা রীতি প্রচলিত রয়েছে। মূলত নৃত্যপ্রধান গীতিনাট্যাভিনয় এই লোকনাট্যের সাধারণ বিশেষত্ব। পদ্মপুরাণের আখ্যানের গীতিনাট্যমূলক পরিবেশনায় নৃত্যের আধিক্য থাকে বলেই পরিবেশনা রীতির নামের সঙ্গে নাচন শব্দটি যুক্ত হয়েছে। নৃত্য ছাড়াও পরিবেশনা রীতিতে ছিল বর্ণনাত্মক গীত এবং সংলাপ ও অভিনয়। আসরের শুরুতে বাদ্যযন্ত্রী ও অন্যান্য কুশীলব খোল বাদককে কেন্দ্রে রেখে বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে ভূমি প্রণাম করে। এরপর বাদ্যযন্ত্রের তালে নাচের মাধ্যমে বামদিক থেকে ডান দিকে আসর পরিক্রমা করে। পরবর্তীতে পরিবেশনায় একে একে রামস্তব, বন্দনা গীত ও পালার প্রসঙ্গ শেষে মূল আখ্যানে বর্ণনাত্মক গীত, গদ্য ও সংলাপের মাধ্যমে পরিবেশনা চলতে থাকে। আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টা থেকে নন্দনমঞ্চে পরিবেশিত হবে রাজবাড়ী, মৌলভীবাজার ও বগুড়া জেলার সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। রাত ৮টায় একাডেমি প্রাঙ্গণে দর্শনির মিনিময়ে অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্য পরিবেশনা ‘গুনাই বিবির পালা’।
×