ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিইউপির সমাবর্তন

সবকিছু পথে আনতে হবে ॥ রাষ্ট্রপতি

প্রকাশিত: ১১:১৬, ৭ জানুয়ারি ২০২০

সবকিছু পথে আনতে হবে ॥ রাষ্ট্রপতি

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ভরা মৌসুমে পেঁয়াজের দাম আবারও বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, ব্যবসায়ীরা যা ইচ্ছা তাই করছে। সোমবার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) পঞ্চম সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সবকিছু পথে আনতে হবে। ক’দিন আগে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। মাঝে কমেছে, আবার বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা কী এটা আমি বুঝি না। যা ইচ্ছা তাই করে যাচ্ছে। এটা তো হতে পারে না।’ খবর বিডিনিউজের। পেঁয়াজের দাম বাড়ায় গত নবেম্বর মাসে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি। গত সেপ্টেম্বরে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার পর বাংলাদেশের বাজারে ৩০-৪০ টাকার এই পণ্যের দাম বাড়তে বাড়তে আড়াই শ’ টাকায় ওঠে। পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দামের কারণে সরকারের সমালোচনায় সোচ্চার হয়েছেন অনেকে, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশীর পদত্যাগও চেয়েছেন কেউ কেউ। এরপর বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির পাশাপাশি বাজারে দেশী নতুন পেঁয়াজ ওঠায় দাম কমতে থাকে। ডিসেম্বরের শেষার্ধে দেশী নতুন পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকার আশপাশে আসলেও সম্প্রতি আবার বেড়ে তা ১৮০ টাকায় উঠে যায়। শিক্ষার্থীদের এই অবস্থা উত্তরণে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘এখানেও মনে হয় তোমাদের ভূমিকা থাকতে পারে। ছাত্ররা ইচ্ছা করলে কি না পারে। ছাত্ররা যদি মনে করে বাংলাদেশে ডিসিপ্লিন আসবে তাহলে মনে হয় পারবে।’ যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা বন্ধে ছাত্রদের প্রচার চালানোর আহ্বানও জানান রাষ্ট্রপতি। ‘ক্যান্টনমেন্টের ভেতরের যে পরিবেশ, পরিচ্ছন্নতা। এর বাইরে যে কী একটা অবস্থা সেটা বলার দরকার নেই। একই দেশ, একই ঢাকা শহর। ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে যদি এত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পারে, একটা গাড়ি ঢুকলে সিগন্যাল ক্রস করে কেউ যায় না। বেল্ট ঠিকমতো বাঁধে। অযথা হর্ন বাজায় না। বাইরে গেলেই তখন দেখা যায় কোন নিয়ম-কানুন নেই। মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি হয়।’ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমরা যখন বোতলে পানি খাও সেটা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে ফেল না। এর বাইরে গেলেই ছুড়ে ফেলছ। বিদেশে গেলে স্টেশনে থুথু ফেলার সাহস পায় না। টিস্যু পেপারে থুথু ফেলে পকেটে রাখে, পরে ডাস্টবিনে ফেলে। আর আমাদের এখানে কোথায় ওয়ালে পড়ল, না কারও শরীরে পড়ল এই অবস্থা। এই নেচার পরিবর্তন করতে হবে। রাস্তাঘাট এমন অপরিষ্কার থাকে, মারাত্মক অবস্থা। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই এই অবস্থা। ‘সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, সারা বাংলাদেশের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার ছাত্র যারা আছে তারা যদি একটা ক্যাম্পেইন কর, মানুষকে বল, যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলা যাবে না। এটা করতে পারলে আমার মনে হয় বাংলাদেশ একটা ডিসিপ্লিনে আনতে পারব। না হলে বাংলাদেশ একটা ডাস্টবিন মনে করে চলছি। কর্মভিত্তিক শিক্ষার প্রতি জোর দিয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য আবদুল হামিদ বলেন, ‘প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকার জন্য নিজেদের আরও যোগ্য করে তৈরির গুরুত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল ক্ষেত্রে বিশ্ব প্রতিদ্বন্দ্বিতা মোকাবেলায় আমাদের শিক্ষার্থীদের পেশাভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। শ্রম বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষা কার্যক্রম প্রণয়ন করতে হবে। এ যুগে চাহিদা ও কর্মভিত্তিক শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। ‘একবিংশ শতাব্দী আমাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নানা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। আমরা আজ তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন। এ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে দক্ষতার বিকল্প নেই। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তুলতে উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চতর স্তরে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞান শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করা অত্যন্ত জরুরী।’ সমাবর্তনে ৩৪ শিক্ষার্থীকে শিক্ষা জীবনে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য স্বর্ণপদক দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, বিইউপির উপাচার্য মেজর জেনারেল মোঃ এমদাদ উল বারী। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব) তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও তিন বাহিনীর প্রধান উপস্থিত ছিলেন। জনগণের জন্য কাজ করুন-পুলিশকে রাষ্ট্রপতি বাসস জানায়, রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ বলেছেন, পুলিশ জনগণের। তাই পুলিশকে জনগণের জন্যই কাজ করতে হবে। রাষ্ট্রপতি পুলিশ সপ্তাহ-২০২০ উপলক্ষে সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘পুলিশ হচ্ছে জনগণের জন্য, সুতরাং তাদের জন্য কাজ করুন।’ রাষ্ট্রপতি মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা নিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ জওয়ানদের পরামর্শ দেন। মানুষ পুলিশের কাছে যায় তাদের সহায়তা চাইতে উল্লেখ করে আব্দুল হামিদ বলেন,‘ হয়রানি ছাড়াই জনগণের সেবা নিশ্চিত করুন এবং সেবা প্রত্যাশিদের জন্য তাদের প্রত্যাশিত প্রতিকারের ব্যবস্থা করুন। তাহলেই মানুষ পুলিশকে তাদের বন্ধু ভাবতে পারবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অপরাধ মোকাবেলায় জনগণের সমর্থনও অপরিহার্য।’ পুলিশকে বাংলাদেশের একটি গৌরবময় প্রতিষ্ঠান অভিহিত করে রাষ্ট্রপতি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের অসামান্য অবদানের কথা উল্লেখ করেন। রাষ্ট্রপতি এ উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ এবং নৈশভোজে যোগদান করেন। অনুষ্ঠানে অন্যের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী একেএম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ জাহিদ মালেক, সংসদ সদস্যগণ, মহাপুলিশ পরির্দশক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, রাষ্ট্রপতির সংশ্লিষ্ট সচিবগণ, এবং উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
×