ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গণপূর্ত মন্ত্রণালয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে

প্রকাশিত: ১১:০৬, ৭ জানুয়ারি ২০২০

গণপূর্ত মন্ত্রণালয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে

মশিউর রহমান খান ॥ উন্নয়ন কর্মকা-ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা, কাজের গতিশীলতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ ও সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শীর্ষ ঠিকাদার, সকল স্তরের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায়ই এগিয়ে যাচ্ছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের গত এক বছরে এমন চিত্রই উঠে এসেছে। এছাড়া সেবা সহজীকরণ, নির্দিষ্ট সময়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভবনের নক্সা প্রদান, ১০৭ একর সরকারী সম্পত্তি অবৈধ দখল মুক্ত করা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের খাল দখলমুক্ত করা, সকল দফতরে ডিজিটাল হাজিরা পদ্ধতি চালু, অনলাইনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সরকারী বাসা বরাদ্দ প্রদান করা, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের পাশাপাশি স্বল্প ও মধ্যম আয়ের জনগোষ্ঠী, বস্তিতে বসবাসকারী ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের জন্য জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারাদেশে প্লট উন্নয়ন ও ফ্ল্যাট নির্মাণ কাজ পরিচালনাসহ শ ম রেজাউল করিম এমপি দায়িত্ব গ্রহণের পর এ মন্ত্রণালয়ের বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। এরই অংশ হিসেবে কেনিয়ার নাইরোবিতে বাংলাদেশ পরবর্তী দুই বছরের জন্য এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া ও এশিয়ান টাউনস্কেপ জুরি’স এ্যাওয়ার্ড আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছে বলে দাবি মন্ত্রণালয়ের। একই সঙ্গে সরকারের নানা উন্নয়ন কাজের পূর্বের করা বিভিন্ন প্রকার দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে মন্ত্রণালয়কে। রূপপুরের আসবাবসহ আলোচিত বালিশ ক্রয়ে দুর্নীতি, বিএনপির আমলে অনিয়ম করে বহুতল ভবন নির্মাণের ফলে রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারের আগুন লাগার পর ২৭ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অপরদিকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) সম্পূর্ণ দালালমুক্ত করতে না পারা, শতভাগ ডিজিটাল পদ্ধতিতে নক্সা প্রদান ও সকল কাজ সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে না পারা, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তাদের খুশি করতে নেয়া ফ্ল্যাট প্রকল্প কাজের বাস্তবায়ন কয়েক বছরেও না হওয়া, বেশ কিছু আবাসন প্রকল্পের ধীরগতি, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের গ্রাহকের ভোগান্তি পুরোপুরি দূর করতে না পারা, গৃহায়ন ভবনে সাংবাদিক প্রবেশে কঠোরতা প্রদর্শন গত বছরে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের কঠোর অবস্থান গ্রহণের ফলে বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের কিছুটা স্থবিরতার সৃষ্টি হয়। যদিও বর্তমানে তা কাটতে শুরু করেছে। গত এক বছরে দেখা গেছে, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তির উন্নয়নসহ উন্নয়ন কাজের গতিশীলতা আগের তুলনায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে উর্ধতন কমিটি গঠন ও প্রথম বারের মতো গণমাধ্যমের কাছে মন্ত্রণালয় কর্তৃক এফ আর টাওয়ার নির্মাণে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্তদের তালিকাসহ নাম প্রকাশ করা ও তাদের অপরাধ অনুযায়ী মামলা দায়ের, সাময়িক বরখাস্ত করাসহ শাস্তির আওতায় আনা এবং মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন দফতরের ৯২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ বেশ কিছু বিষয়ে বিতর্কের উর্ধে উঠেছে মন্ত্রণালয়। দেখা গেছে, রাজউকসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতাধীন এলাকায় ভবন নির্মাণ অনুমোদনের জন্য পূর্বে ১৬ সংস্থার অনাপত্তি গ্রহণের জন্য ১৬ ধাপ অতিক্রম করতে হতো। তবে এখন সেবা সহজীকরণের জন্য ১২ ধাপ বাদ দিয়ে মাত্র ৪ ধাপে নামিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া নক্সা পাশে সময়সীমা ১৬৫ দিনের পরিবর্তে ৫৩ দিন পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। ভবনের নক্সা অনুমোদনের সময়সীমা ৪৫ দিনের পরিবর্তে ২০ দিনে নামিয়ে আনা হয়েছে। এতে সেবাগ্রহীতাগণের ভোগান্তি, ব্যয় ও সময় সাশ্রয় হচ্ছে। এটি যুগান্তকারী পরিবর্তন বটে।
×