ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কিশোরগঞ্জের ধলেশ্বরী ও বিল মাকসায় নাব্য সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৯:২১, ৭ জানুয়ারি ২০২০

কিশোরগঞ্জের ধলেশ্বরী ও বিল মাকসায় নাব্য সঙ্কট

নিজস্ব সংবাদদাতা কিশোরগঞ্জ থেকে জানান, জেলার হাওড় অধ্যুষিত অষ্টগ্রাম উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোর মধ্যে মেঘনার শাখা নদী ধলেশ্বরী নাব্য হারিয়ে ফেলেছে। বালুরাশির মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ক্ষীণ ধারায়। এককালে ধলেশ্বরীর রূপ ছিল ভয়ঙ্কর। এক যুগ পূর্বেও যে নদীতে খেয়া পার হতে যেয়ে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারাতে হয়েছিল যাত্রীদের, আজ সেই ধলেশ্বরীর ওপর ছোট বাচ্চদের সাঁতার আর দুরন্তপনা লক্ষ্য করা যায়। হেঁটে পার হওয়া যায় নদীর এক পাড় হতে অন্য পাড়ে। নাব্য সঙ্কটের ফলে হুমকিতে থাকা শত শত একরের সেচ প্রকল্প কুড়িয়ে কুড়িয়ে কোন রকম চলছে। দিনে দিনে ধলেশ্বরীর রূপ যেন হারিয়ে যাচ্ছে। স্রোতের তীব্রতা কমে যাওয়ায় পলি জমছে সারা ধলেশ্বরীর বক্ষজুড়ে। সরেজমিনে দেখা যায়, অষ্টগ্রামে ধলেশ্বরী নদীর ওপর নির্মিত রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সেতুর উভয় পাশে পূর্ব-পশ্চিম অংশে নদীতে পানি শূন্য। নদীর বুকে রোপণ করা হয়েছে চৈতালী ধান। পানি শূন্য ধলেশ্বরী নদী ভরাটের ফলে ধীরে ধীরে মরুকরণের দিকে এগোচ্ছে এ অঞ্চলের অধিকাংশ কৃষি জমি। অন্যদিকে অষ্টগ্রামের পূর্ব উত্তরে অবস্থিত বিল মাকসায় নাব্য সঙ্কটের ফলে পানির সেচ সমস্যায় অষ্টগ্রামের উত্তর হাওড়ের শত শত একর কৃষি জমি আজ হুমকির মুখে। স্থানীয়দের মতে, এ থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হচ্ছে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদী খনন করে দ্রুত ধলেশ্বরী ও বিল মাকসায় নাব্য ফিরিয়ে আনা। অষ্টগ্রামের দেওঘর ইউনিয়নের পাওন ও কাগজী গ্রামের দক্ষিণে অবস্থিত বিল ডোড্ডার নাব্য সঙ্কটের ফলে পাওন, কাগজী গ্রাম, ভাটিনগর, দেওঘর, লাউড়া ও বাঙ্গালপাড়া ইউনিয়নের কৃষি জমির সেচ প্রকল্পগুলো হুমকিতে রয়েছে। একইভাবে উপজেলার পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়ন, কলমা ইউনিয়ন এবং চর দেওঘর ও কালিপুর হাওড়ে খাল ভরাটের ফলে নাব্য সঙ্কটে সেচ প্রকল্পগুলোও হুমকির মধ্যে রয়েছে। এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী জানান, কয়েক মাস হয়েছে এখানে যোগদান করেছি, তাই এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারছি না। তিনি এ বিষয়ে তার অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাজু হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে রাজু হাওলাদার এ বিষয়ে জানান, ধলেশ্বরী নদীর পূর্বে দিকে অবস্থিত বাঙ্গালপাড়া হয়ে ধলেশ্বরী নদীতে আসা সংযোগ খাল গুজিয়ারখাল এবং ধলেশ্বরী নদী মিলিয়ে ২.৫ কিলোমিটার (আড়াই কিলোমিটার) এলাকা ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে খননের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে ময়মনসিংহের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার পেয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খনন কাজ শুরু করবে। অপরদিকে বিল মাকসায় তিন কিলোমিটার জায়গা ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে খননের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে। এছাড়া চর দেওঘর, কালিপুর ও কলমা ইউনিয়নসহ উপজেলায় ১৩ কিলোমিটার খাল, বিল ও নদী ড্রেজিং করার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, পর্যায়ক্রমে তা মন্ত্রণালয়ে পাস করা হলে কাজগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। অষ্টগ্রাম সদর ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ ফারুক আহমদ জানান, দক্ষিণের নদী ধলেশ্বরী ও পূর্ব অষ্টগ্রামের ইকুরদিয়া থেকে শুরু হওয়া বিল মাকসা ভরাটের ফলে নাব্য সঙ্কটে পানির সেচ সমস্যার ফলে ৬০ শতাংশ জমি চলতি বছর অনাবাদি রয়ে যাচ্ছে। সরকার দ্রুত বিল মাকসা ও ধলেশ্বরী নদী খনন না করলে অত্র এলাকার এক ফসলি কৃষি বিপন্ন হওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া এমনিতেই অনাবৃষ্টি ও অতি বৃষ্টির ফলে হাওড়ের কৃষকরা আজ চরম সঙ্কটের সম্মুখীন। এ থেকে উত্তরণের জন্য তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর ও মন্ত্রণালয় জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
×