ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বান্দরবানে সড়কের গাছ কাটার হিড়িক

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ৭ জানুয়ারি ২০২০

বান্দরবানে সড়কের গাছ কাটার হিড়িক

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান, ৬ জানুয়ারি ॥ থানচি-আলীকদম সড়কের দু’পাশের পাহাড়ে প্রাকৃতি যেন তার অপার সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় আড়াই হাজার ফুট উঁচুতে এই সড়ক। বর্ষা কিংবা শীত মৌসুমে এই সড়কে আসলে দেখা মিলবে সবুজ প্রকৃতির অপার লীলা। কিন্তু সেই চিরচেনা প্রকৃতির দৃশ্যপট পাল্টে দিতে কাজ করছে কিছু অসাধু কাঠ ব্যবসায়ী। এই সড়কের দু’পাশের সবুজ গাছগুলোতে চলছে এখন কুঠারের আঘাত। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, থানচি-আলীকদম সড়কের ১৩-২৩ কিলোমিটার এলাকায় গেলে দেখা মিলবে অসংখ্য ছোটবড় গাছ কাটা হচ্ছে কুঠারের আঘাতে। লাকড়ি সংগ্রহের নামে বৈলাম গাছ, বহেড়া গাছ, রং, গামার, গর্জন শিল, কড়ই, মেহগনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছও কাটা হচ্ছে। শ্রমিকরা দল বেঁধে ছোটবড় গাছে চালাচ্ছেন কড়াত। আর কিছু শ্রমিক ওই গাছগুলো পরিবহনের জন্য গাছের স্তূপ তৈরি করছে। আর ঘণ্টা খানিক পড়ে একটির পর একটি ছোট জীপ গাড়ি এসে বহন করে নিয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। আর সড়কের দু’পাশের গাছ কাটার কারণে পাহাড়গুলো হয়ে যাচ্ছে নেড়া। আলীকদম উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সমরঞ্জন বড়ুয়া বলেন, পরিবেশের যে ধ্বংসলীলা চলছে তা দেখার কেউ নেই? প্রকৃতিকে ধ্বংসের হাত থেকে যদি বাঁচাতে না পারি তাহলে অচিরেই মানুষের বসবাসের অযোগ্য হবে। তিনি আরও জানান, এখানে কর্মকর্তারা চাকরির সুবাদে আসে। তাই প্রকৃতি ধ্বংস হলেও কিছু অসাধু কর্মকর্তার পকেট ভারি করার মুখ্য উদ্দেশ্য হওয়ায় বন উজাড়ে তাদের নীরবতা লক্ষ্য করা যায়। আরও জানা গেছে, থানচি-আলীকদম সড়কে পাহাড় কেটে লাকড়ি ও কাঠ পরিবহনের জন্য তৈরি করা হয়েছে অসংখ্য রাস্তা। স্থানীয় মোহাম্মদ আলী, ইসমাইল, মোঃ বেলাল, ইমাম হোসেন, বাবুল, রিদুয়ান প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০টি গাড়িতে করে অবৈধভাবে গাছ কেটে স্থানীয় ইটভাঁটি ও তামাক চাষীদের কাছে এসব গাছ পাচার করছে। ছোট প্রতিটি গাড়িতে ৬০ থেকে ৭০ মণ আর বড় প্রতি গাড়িতে ২শ’ থেকে ২৫০ মণ লাকড়ি টানা হচ্ছে। প্রতিমণ লাকড়ি ১২৭ টাকা করে বিক্রি করে থাকে। থানচি সড়কের পাড়ায় বসবাসরত ইয়ং লাক মোঃ বলেন, লাকড়ি সংগ্রহ করার নামে ছোট গাছ কাটা হচ্ছে এরপরও পাহাড়ের ভেতরে থাকা বড় গাছগুলোও কেটে ফেলা হচ্ছে । কয়েকজন পাড়া কারবারি ও হেডম্যানের যোগসাজশে এই গাছগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক ব্যবসায়ী বলেন, আলীকদমে গাছ, বাঁশ ছাড়া আর কি আছে? এখানের মানুষ পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে এগুলোর ওপর নির্ভরশীল। তারা আরও বলেন, লাকড়ি বা গাছ থেকে বনবিভাগের অসাধু কিছু কর্তা ও কর্মচারীদের কমিশন দিতে হয়। তাই আমরা এগুলো কাটার সুযোগ পাচ্ছি। তাছাড়া পাড়া কারবারিসহ পাড়ায় বসবাসকারীই গাছগুলো বিক্রি করেছে। ব্যবসায়ীদের কাছে গাছ বা লাকড়ি কাটার কোন অনুমতি নিতে হয় কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, চা,পানি ও হাত খরচে সব মিটমাট করা হয়। এদিকে আলীকদমের তৈন রেঞ্জ কর্মকর্তা খন্দকার শামশুল হুদা বলেন, পরিবহনের সময় তথ্য দিলে আমরা লাকড়ি বা কাঠসহ গাড়ি জব্দ করব। কিন্তু থানচি সড়কে গিয়ে লাকড়ি বা কাঠ জব্দ করার জন্য যে লোকবল ও খরচ পড়ে তা আমাদের দ্বারা বহন করা সম্ভব নয়। লামা বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা এস.এম কায়চার জানান, সড়কের দু’পাশের গাছ কেটে কাঠ ও লাকড়ি পাচারের বিষয়টি অবগত ছিলাম না। দ্রুত তৈন রেঞ্জের কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয়া হবে। আলীকদম সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নাছির উদ্দিন বলেন, সরকার বনায়ন করতে নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছে এবং গাছ রোপণ করছে কিন্তু কাঠ ও লাকড়ি ব্যবসায়ীরা নির্বিচারে গাছ কাটছে, দ্রুত এদের না থামালে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ সায়েদ ইকবাল জানান, রাস্তার আশপাশ ও সরকারী খাস জায়গা থেকে গাছ কাটার কোন অনুমতি নেই। কেউ যদি আইন অমান্য করে গাছ কাটে তাহাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×