ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এমন নিষেধাজ্ঞা যা তারা আগে দেখেনি ॥ ট্রাম্প

ইরাকের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ॥ নিষেধাজ্ঞার হুমকি

প্রকাশিত: ০৯:০৯, ৭ জানুয়ারি ২০২০

ইরাকের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ॥ নিষেধাজ্ঞার হুমকি

ইরাকের পার্লামেন্টে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার দাবি করে প্রস্তাব পাসের পর দেশটির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ইরাক যদি আমাদের সৈন্যদের সে দেশ ত্যাগে বাধ্য করে, তাহলে আমরা দেশটির ওপর এমন কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করব যে, যা আগে তারা কখনও দেখেনি। রবিবার বিকেলে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী বিমান এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ হুমকি দেন। ওয়াশিংটন পোস্ট, এপি ও আলজাজিরা। ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার দাবি করে রবিবার দেশটির পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব পাস হয়। মার্কিন বিমান হামলায় শুক্রবার ইরানের কুদস ফোর্সের প্রধান কাশেম সোলাইমানি ও দেশটির শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠী হাশদ আল-শাবির উপ-প্রধান আবু মাহদি আল মুহান্দিস নিহত হওয়ার দু’দিন পর প্রস্তাবটি পাস হয়। এই প্রস্তাব পাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্রকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানাবে ইরাক। ইরাকের পার্লামেন্টে পাস হওয়া ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকার আন্তর্জাতিক জোটের কাছে সহযোগিতা চেয়ে ইরাকে সেনা রাখার যে অনুরোধ করেছিল তা বাতিল করার প্রস্তাব করবে। কেননা ইরাকে সামরিক অভিযান শেষ হওয়ার সঙ্গে জয় অর্জিত হয়েছে।’ ট্রাম্প বলেন, যদি তারা আমাদের ত্যাগ করতে বলে এবং আমরা যদি এটা সুসম্পর্ক বজায় রেখে না করতে পারি, তাহলে আমরা তাদের ওপর কঠিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করব। আর এ নিষেধাজ্ঞা তারা আগে কখনও দেখেনি। হুমকির পাশাপাশি ইরাকে নির্মিত যুক্তরাষ্ট্রের বিমানঘাঁটির জন্য ক্ষতিপূরণও চেয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ক্ষতিপূরণ না পাওয়া পর্যন্ত মার্কিন সেনারা ইরাক ত্যাগ করবে না বলেও সাফ জানিয়ে দেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘সেখানে আমাদের একটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল বিমানঘাঁটি রয়েছে। এটা নির্মাণ করতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে আর এটা আমার সময়ের অনেক আগে। আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত এই ঘাঁটি ত্যাগ করব না, যতক্ষণ না তারা আমাদের এর ক্ষতিপূরণ দেবে।’ মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইরানের মদদে হিজবুল্লাহ মিলিশিয়া গত দুই মাসে একাধিক রকেট হামলা চালিয়েছে এই ঘাঁটিতে। ফলে ঘাঁটির ট্রেনিং মিশন বন্ধ রয়েছে। এখন আমাদের কাজ হবে শত্রুর হামলা থেকে এই বিমান ঘাঁটিকে রক্ষা করা। গত শুক্রবার ইরাকের রাজধানী বাগদাদে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরানের অঘোষিত সেনাপতি ও দেশটির ক্ষমতাধর জেনারেল কাশেম সোলাইমানি নিহত হন। তারপর থেকে চিরবৈরী ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা আরও চরমে। মধ্যপ্রাচ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর ইঙ্গিতও দিচ্ছেন অনেকে। সোলাইমানিকে হত্যার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে ফের হামলার হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইরান যদি আমেরিকানদের ওপর বা যুক্তরাষ্ট্রের কোন সম্পদ লক্ষ্য করে হামলা চালায়, তাহলে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক স্থাপনাসহ ৫২ স্থাপনায় হামলা চালানো হবে। জবাবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সাংস্কৃতিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু বানালে আন্তর্জাতিক আইনে তা হবে যুদ্ধাপরাধ। ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বা সম্পদের ওপর হামলা হলে ইরানের সংস্কৃতির জন্য গুরুত্ব বহন করে এমন জায়গাতেও খুব দ্রুত ও বিধ্বংসী হামলা চালানো হবে। ১৯৭৯ সালের নবেম্বরে তেহরানে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে ৫২ কূটনীতিক ও মার্কিন নাগরিককে জিম্মি করার ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করেই সুনির্দিষ্টভাবে ৫২ স্থাপনায় হামলার হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। ৪৪৪ দিন ধরে চলা জিম্মি সঙ্কটের শেষ হয়েছিল ১৯৮১ সালের জানুয়ারিতে। ট্রাম্পের হুমকির জবাবে ইরানের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী ট্রাম্পকে ইসলামিক স্টেট, হিটলার ও চেঙ্গিস খানের সঙ্গে তুলনা করে টুইটে লিখেছেন, ‘এরা সবাই সংস্কৃতিকে ঘৃণা করে। ট্রাম্প একজন স্যুট পরা সন্ত্রাসী। তিনি খুব শীঘ্রই বুঝতে পারবেন ইরানী জাতি ও সংস্কৃতিকে কেউ পরাজিত করতে পারে না।’ অপরদিকে ইরান সরকার ঘোষণা দিয়েছে, ২০১৫ সালে সম্পাদিত পরমাণু চুক্তির মাধ্যমে তাদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার একটিও আর মানা হবে না। ইরান সরকার বলছে, পরমাণু সমৃদ্ধকরণ, সমৃদ্ধ পরমাণুর মজুদ বা পারমাণবিক গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে আর কোন নিষেধাজ্ঞা মানবে না ইরান।
×