ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চার বছরেও নির্মাণ হয়নি কাস্টমস হাউস

পায়রা বন্দর ব্যবহারকারীদের ভোগান্তি

প্রকাশিত: ১০:৩০, ৬ জানুয়ারি ২০২০

 পায়রা বন্দর ব্যবহারকারীদের ভোগান্তি

মোঃ মোখলেছুর রহমান, পটুয়াখালী ॥ পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্রবন্দর চালু হওয়ায় চার বছর অতিবাহিত হলেও নেই কোন সুযোগ সুবিধা। নির্মাণ হয়নি কাস্টমস হাউস। যে কারণে এ বন্দরে পণ্য খালাস করা নিয়ে ব্যবসায়ী ও বন্দর ব্যবহারকারীদের পরতে হয় ভোগান্তিতে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রাবন্দরের ফলক উন্মোচন করেন ২০১৩ সালের ১৯ নবেম্বর। এর আড়াই বছর পর ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পায়রা বন্দরের অপারেশন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। ২০১৬ সালে পায়রা সমুদ্রবন্দরের অপারেশন কার্যক্রম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমও শুরু হয়। সেই থেকে ১০১৯ সালের নবেম্বর পর্যন্ত পায়রা বন্দরে মোট ৪৩টি বিদেশী জাহাজ পণ্য নিয়ে এসেছে। এসব জাহাজ বহির্নোঙরে পণ্য খালাস সম্পন্ন করে। এ থেকে কাস্টম হাউস ১৩৩ কোটি ২৮ লাখ ৯৫ হাজার ৯১২ টাকা রাজস্ব আয় করে। তবে ২০১৬ সালে পায়রা কাস্টম হাউসের জন্য জমির বরাদ্দ চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিলেও এখন পর্যন্ত ভূমি মন্ত্রণালয় জমির অনুমোদন দেয়নি। বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, নতুন বছরের জানুয়ারির প্রথম দিকে পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের ১ম ইউনিট ৬৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন শুরু হলে কয়লা নিয়ে বিদেশী জাহাজের আগমন বাড়বে কয়েক গুণ। বন্দর ও বিদ্যুত কেন্দ্র এলাকায় পায়রা কাস্টম হাউসের নিজস্ব কোন অফিস নেই। বর্তমানে পটুয়াখালী শহরের পিডিএস মাঠ এলাকার একটি ভাড়া বাসায় পায়রা কাস্টম হাউসের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ফলে সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট ও শিপিং এজেন্টসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের ভোগান্তিতে পড়ছে। অপরদিকে কাস্টম হাউসের কার্যক্রম পটুয়াখালী জেলা শহরে থাকলেও ব্যাংকিং কার্যক্রম বিশেষ করে রাজস্ব জমা দিতে ৫০ কিলোমিটার দূরে কলাপাড়া উপজেলায় যেতে হয়। ফলে বাড়ছে ভোগান্তি। পূর্ণাঙ্গ কাস্টম হাউস স্থাপনের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাঠালেও ভূমি মন্ত্রণালয় অনুমোদন না দেয়ায় জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হয়নি বলে দাবি কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষের। ফলে আগামী বছরগুলোতে যখন পুরোদমে পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র এবং পায়রা বন্দর চালু হবে তখন বন্দর ব্যবহারকারীদের ভোগান্তির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা। পটুয়াখালী চেম্বার অব কমার্স সভাপতি মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘একই ছাদের নিচে কাস্টম হাউস এবং ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করতে পারলে পায়রা বন্দর ব্যবহারে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বাড়বে।’ পাশপাশি চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দরের মতো অনলাইনে কাস্টমের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করার সুযোগ তৈরি করার দাবি করেন তিনি। পায়রা কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার হাবিবুর রহমান জানান, একটি পূর্ণাঙ্গ কাস্টম হাউসের জন্য দাফতরিক কার্যালয়, কর্মকর্তা কর্মচারীদের আবাসিক এলাকা, গোডাউন, ল্যাবরেটরিসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা নির্মাণের জন্য ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ ৪০ একর জমির বরাদ্দ চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলেও চার বছরেও জমি বরাদ্দের অনুমোদন মেলেনি। আর অস্থায়ী ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে স্থান চেয়েও পাওয়া যায়নি। ফলে বাধ্য হয়ে জেলা শহরের একটি ভবনের দুটি ফ্লোর ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। ২০২১ সাল নাগাদ পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে পায়রা সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম শুরু করতে বন্দরসহ বিভিন্ন সংস্থা কার্যক্রম চালমান রয়েছে। তবে বন্দরের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত জমি বরাদ্দ না পাওয়ার বিষয়টিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।
×