ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

১২ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১৭৬৫৮ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ১০:৩০, ৬ জানুয়ারি ২০২০

 ১২ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি  ১৭৬৫৮ কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ উচ্চ খেলাপী ঋণের কারণে প্রয়োজনীয় ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণে (সিএআর) ব্যর্থ হয়েছে ১২ ব্যাংক। গত সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। এ সময়ে ব্যাংকিং খাতে সামগ্রিক মূলধন পর্যাপ্ততার হারও (সিআরএআর) সামান্য হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আগের প্রান্তিক জুন শেষে ১১ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল ১৬ হাজার ১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আর মূলধন সংরক্ষণের হার ছিল ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, আন্তর্জাতিক নীতিমালার আলোকে ব্যাংকগুলোকে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যাসেল-৩ নীতিমালার আলোকে ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অথবা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশি সে পরিমাণ মূলধন রাখতে হচ্ছে। কোন ব্যাংক এ পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে মূলধন ঘাটতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের জোগান দেয়া অর্থ ও মুনাফার একটি অংশ মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়। কোন ব্যাংক মূলধনে ঘাটতি রেখে তার শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বেসরকারী খাতের দ্য সিটি ব্যাংক নতুন করে মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। সবমিলে ১২ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ৫টি ব্যাংক। এছাড়া বিশেষায়িত খাতের ২টি, বেসরকারী খাতের ৪টি ও বিদেশী খাতের একটি ব্যাংক রয়েছে। আগের প্রান্তিকে ১১ ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে ছিল। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ৫টি, বিশেষায়িত ২টি, বেসরকারী ৩টি ও বিদেশী ১টি ব্যাংক ছিল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনিয়ম, দুর্নীতি আর নানা অব্যবস্থাপনায় ব্যাংক খাতে ঋণ শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়েছে। ন্যূনতম যাচাই-বাছাই না করেই নাম স্বর্বস্ব ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়া হয়েছে। আবার ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করেছে ঋণ বের করে নেয়া হচ্ছে। ফলে নির্দিষ্ট সময় পর এসব ঋণের বড় অংশই খেলাপী হয়ে পড়ছে। এসব ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। বাড়তি অর্থ যোগাতে হাত দিতে হচ্ছে মূলধনে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে সঙ্কট। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, খেলাপী ঋণ বেশি হলে ব্যাংকের নানাদিক থেকে ঝুঁকি বেড়ে যায়। প্রথমত সম্পদের গুণগতমান কমে যায়। দ্বিতীয়ত, ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের সংরক্ষণের সীমা বেড়ে যায়। তৃতীয়ত, ব্যাংকটির আয় কমে যায়। এতে আর্থিক ভিত দুর্বল হয়ে পড়ে। চতুর্থ হলো ব্যাংকটির ঋণের সুদহার বেড়ে যায়। কারণ খেলাপী ঋণের কারণে একটি ব্যাংকের বিনিয়োগযোগ্য তহবিল কমে যায়। এতে বেড়ে যায় তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয়। আর এ ব্যয় সমন্বয় করা হয় ঋণের সুদহার বাড়িয়ে। আর আমানতকারীদের আমানতের সুদহার কমিয়ে। অর্থাৎ আমানতকারীদের আয় কমে যায়, আর বিনিয়োগকারীদের ব্যয় বেড়ে যায়। এর সামগ্রিক প্রভাব পড়ে অর্থনীতিতে। তার মতে, এ পরিস্থিতি উত্তোরণে খেলাপী ঋণ আদায়ে জোর দিতে হবে। সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ সুশাসন ও জবাবহিদিতা থাকলে জালিয়াতি হবে না। তখন ঋণও খেলাপী হবে না। এতে স্বাভাবিকভাবে কমে যাবে মূলধন ঘাটতি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপী হয়ে পড়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। তিন মাস আগে (জুন শেষে) মোট খেলাপী ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপী ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। এছাড়া ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর এই ৯ মাসে বেড়েছে প্রায় ২২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।
×