ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাতক্ষীরায় আল কারীম ফাউন্ডেশন

অনুমোদন ছাড়াই হাতিয়ে নিল ১০ কোটি টাকা ॥ আটক পাঁচ

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ৬ জানুয়ারি ২০২০

 অনুমোদন ছাড়াই হাতিয়ে নিল ১০ কোটি টাকা ॥ আটক পাঁচ

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ সরকারী অনুমোদন ছাড়াই কোটি কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করছে আল-কারীম ফাউন্ডেশন নামের একটি ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠান। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর নাম ব্যবহার করে এবং বিভিন্ন মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিনকে সামনে রেখে এই বিপুল অংকের অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে পুলিশ রবিবার দুপুরে শহরের নবারুন স্কুলের সামনে থেকে আল কারীম ফাউন্ডেশনের পাঁচজনকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলেনÑ জেলার শ্যামনগর উপজেলার কৈখালি গ্রামের আব্দুল গফুরের ছেলে জেলা কর্মকর্তা রহমতউল্লাহ, সহকারী হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা আব্দুল খালেক, সদর উপজেলা জামে মসজিদের ইমাম ইহসানুর রহমানসহ পাঁচজন। অভিযোগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, সমবায় অধিদফতর, এমনকি সমাজসেবা অধিদফতরের কোন অনুমতি না নিয়ে কোটি কোটি টাকা আমানত সঞ্চয় করে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে সাতক্ষীরায় আল-কারীম ফাউন্ডেশন। ২০০৬-১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা সাধারণ ও এফডিআর এর নামে হাতিয়ে নিয়েছে আল-কারীম ফাউন্ডেশন নামের এই প্রতিষ্ঠান। এর বিপক্ষে গ্রাহক সন্তুষ্টির জন্য সামান্য কিছু ঋণও দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ক্ষতিগ্রস্ত কয়েক গ্রাহক জানান, ২০০৬ সালে সাতক্ষীরা শহরের নবারুল স্কুলের সামনে আল-কারীম ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর কয়েকজন ব্যক্তির সহযোগিতায়। এর মূল দায়িত্বে রয়েছেন যশোরের সাজ্জাদ হোসেন। প্রথমে তারা তেমন কোন সাড়া না পেলেও চেয়ারম্যান সাত উপজেলায় ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের মাঠকর্মী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে গ্রাহককে উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে স্থায়ী এবং অস্থায়ী আমানাত সংগ্রহ শুরু করেন। ইমাম মুয়াজ্জিনদের দেখে সাধারণ মানুষ টাকা আমানত করতে শুরু করে। সাত উপজেলায় ৫০ মাঠকর্মীর মধ্যে রয়েছেন অধিকাংশই ইমাম ও মুয়াজ্জিন। ২০০৬ সাল থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা সাড়ে আট হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে। ভুক্তভুগীরা আরও জানান, আল-কারীম ফাউন্ডেশনের নামে সাতক্ষীরায় কোন ব্যাংক হিসাব নেই। আছে চেয়ারম্যানের নামে যশোরে। প্রতিদিন যে টাকা আদায় হয় তা চেয়ারম্যানের এ্যাকাউন্টে পাঠাতে হয়। কোন গ্রাহক সঞ্চয়ের টাকা বা কোন ঋণ চাইলে চেয়ারম্যান যশোর থেকে তার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজারের ব্যক্তিগত এ্যাকাউন্টে চাহিদার আর্ধেক টাকা পাঠান। সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি টাকা সংগ্রহ করেছে সদর উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন বেলাল হোসেন। তিনি একাই সংগ্রহ করেছেন প্রায় আড়াই কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক শ্যামনগর উপজেলার দাউদ গাজীর ছেলে আইয়ুব গাজী জানান, তিনি প্রায় আড়াই লাখ টাকা সঞ্চয় করেন। এর বিপরীতে ৫০ হাজার টাকা লোন নিয়েছেন। বাকি টাকা চাইতে গেলে বেলাল হোসেন বলেন আপনি ৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন বাকি টাকা পরিশোধ করুন তা না হলে আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ফাউন্ডেশনের জেলা কর্মকর্তা রহমত উল্লাহ জানান, ২০০৬ সাল থেকে উক্ত প্রতিষ্ঠানটি সাতক্ষীরায় তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের গ্রাহক সংখ্যা ৮ হাজার ৫০০ জন। এর মধ্যে সাধারণ গ্রাহকের টাকা আছে ৩ কোটি ৬৩ টাকা ও এফডিআর আছে ২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে এক লাখ টাকায় এক বছরে ৭শ’ টাকা তিন বছর মেয়াদী ৯শ’ টাকা ও ৫ বছর মেয়াদী ১ হাজার টাকা দেয়া মুনাফা দেয়া হয় গ্রাহকদের। পাস বই ও মানি রিসিটের মাধ্যমে লেনদেন করা হয়। কোন সরকারী প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ছাড়া এত বিপুল পরিমাণ টাকা কিভাবে সংগ্রহ করার হয় জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যশোরের সাজ্জাদ সাহেব যা করেন তাই হয়। আমরা এখানে সামান্য বেতনে চাকরি করি। ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন মোবাইলে জানান, তিনি ইসলামী আন্দোলনের একজন সদস্য। ব্যবসা শুরু করার সময় এত আইনকানুন দেখা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন সরকার না চাইলে তিনি ২০২০ সালের মধ্যে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেবেন। এতদিন কিভাবে গ্রাহকের কাছ থেকে এত টাকা সংগ্রহ করেছেন এবং তা কেন নিজের এ্যাকাউন্টে রাখেন তার কোন উত্তর না দিয়ে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। এ বিষয়ে জেলা সমবায় কর্মকর্তা হাসান মাহমুদ বলেন, এ ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান চালাতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনভাবেই চালাতে পারেন না। এমনকি তাদের দফতরেরও কোন নিবন্ধন নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক দেবাশীষ সরদার জানান, গত এক সপ্তাহ আগে সমাজসেবা থেকে তারা একটি নিবন্ধন নিয়েছে। এই নিবন্ধনের আলোকে কোন আর্থিক লেনদেন করার কথা নয়। তারা আরও আগে থেকে মোটা অংকের টাকা আমানাত সংগ্রহ করছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনী। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান রবিবার বিকেলে জানান, আয়ূব আলী নামের এক গ্রাহক বাদী হয়ে এই ঘটনায় মামলা দায়ের করেছে।
×