ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দিনাজপুরে শৈত্যপ্রবাহে আলু ক্ষেতে মড়ক ॥ দুশ্চিন্তায় চাষী

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ৬ জানুয়ারি ২০২০

 দিনাজপুরে শৈত্যপ্রবাহে আলু ক্ষেতে মড়ক ॥ দুশ্চিন্তায় চাষী

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ শৈত্যপ্রবাহের কারণে দিনাজপুরে আলু খেতে মড়ক রোগ (লেট ব্লাইট) দেখা দিয়েছে। আগাম জাতের আলু চাষ করে কৃষকরা লাভবান হলেও, পরবর্তী জাতের আলু চাষে লোকসানের বোঝা নিতে হচ্ছে জেলার চাষীদের। এতে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আলু চাষীরা। অপরদিকে চাষীদের ভুলের কারণেই খেতে মড়ক রোগ হচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের। তবে শৈত্যপ্রবাহ কমলে আলুর গাছের মড়ক রোগ কমবে বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। আলু খেতে মড়ক রোগ প্রতিরোধে কৃষকদের সাহায্য করতে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ভিটে-মাটি পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়েছে অনেক কৃষককে। চলতি আমন মৌসুমে কৃষকরা ধানের দাম কিছুটা পেলেও, আলু রোপণ করে বেকায়দায় পড়েছেন তারা। চলতি শীত মৌসুমে টানা কয়েকদিনের শৈত্যপ্রবাহের কারণে খেতে আলুর গাছে মড়ক রোগ দেখা দিয়েছে। জেলার অধিকাংশ আলুর খেতে মড়ক রোগ দেখা দেয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন আলু চাষীরা। দিনাজপুর সদর উপজেলার নশিপুর গ্রামের আলু চাষী মাসুদ আলী বলেন, এ বছর বোরো ধান আবাদ করে আমরা খুবই লোকসানের মুখে পড়েছিলাম। এবার আমন ধান উৎপাদন করে সামান্য লাভ হলেও আলু রোপণ করায় লাভের থেকে এখন লোকসানই হবে বেশি। আমরা যখন আমন ধান আবাদ করছিলাম সেই সময় আমাদের এলাকার কিছু কৃষক আগাম জাতের আলু চাষ করে লাভ করেছিলেন। প্রথমদিকে বাজারে প্রতি কেজি আলু ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়েছিল। ফলে তাদের লাভ দেখে পরবর্তী জাতের আলু আবাদ করতে গিয়ে লোকসানের বোঝা মাথায় নিতে যাচ্ছি আমরা। কয়েকদিন ধরে শৈত্যপ্রবাহের তীব্র শীতের কারণে আলু খেতে মড়ক রোগ দেখা দিয়েছে। এ রোগের কারণে খেতে আলুর নতুন চারাগাছ মরে যাচ্ছে। তিনি বলেন, কৃষি কর্মকর্তারা আমাদের যেভাবে কীটনাশক প্রয়োগ করতে বলেছেন, আমরা সেভাবেই করেছি। কিন্তু কোন লাভ হচ্ছে না। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর আলু মৌসুমে প্রায় ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে উৎপাদন হয়েছিল অনেক বেশি। চলতি মৌসুমে ৪৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে ইতোমধ্যে আগাম জাতের আলু উৎপাদিত হয়েছে। দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক তৌহিদুল ইকবাল বলেন, প্রতি বছর দিনাজপুরে আলুর মড়ক রোগ দেখা দেয়। শৈত্যপ্রবাহের কারণে এ রোগটি হয়। কিন্তু এ বছর মড়ক রোগ একটু বেশি। এর জন্য কৃষকরা দায়ী। শৈত্যপ্রবাহ যে সময় কম থাকে, সেই সময় আলুর আবাদ করতে একাধিকবার বলা হয়েছে। কিন্তু তারা বেশি লাভের আশায় দেরি করে আলুর চাষ শুরু করেছেন। এছাড়াও কীটনাশক প্রয়োগের ক্ষেত্রে তাদের সচেতনতার অনেক অভাব রয়েছে। তাদের পরিমাণ মতো কীটনাশক দিতে বলা হলেও, তারা অতিরিক্ত মাত্রায় তা প্রয়োগ করছেন। শৈত্যপ্রবাহের সময় পরিমাণ মতো কীটনাশক দিলে আলু গাছ মড়কের হাত থেকে বেঁচে যেতে পারে। এছাড়া শৈত্যপ্রবাহের কারণে লেট ব্রাইট (মড়ক রোগ) রোগ যেসব আলুর জাতের গাছে দেখা দেয়, সে সব আলু আগেই আবাদ করার আহ্বান জানান তিনি।
×